করোনাকালীন তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নিশ্চিত করতে সরকারের নানা উদ্যোগ থাকলেও এ সময় পোশাক খাতের ৬৪টি কারখানার প্রায় ২১ হাজার শ্রমিক মজুরি পাননি। কাজ নেই, আর স্বাস্থ্যবিধির অজুহাতে ওই শ্রমিকদের মজুরি না দিয়ে ছাঁটাই করা হয়। শ্রমিক স্বার্থ তদারকি করা সরকারি কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডাইফি) প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জানা যায়, এসব কারখানার অনেক উদ্যোক্তা সরকারের কোনো উদ্যোগও আমলে নিতে চায় না। কেউ কেউ আমলে নিলেও বিলম্বিত করার কৌশল নিয়েছেন। অনেক কারখানায় বকেয়া মজুরি সুরাহা করার জন্য মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের কমিটি গঠন করা হয়। ডাইফির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৫টি কারখানার ২৩ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। এ সময় লে-অফ করা হয় ২৬টি কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক। এ ছাড়া ৬৪টি কারখানার প্রায় ২১ হাজার শ্রমিক মজুরি পাননি। বিজিএমইএ জনসংযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালীন বিজিএমইএ সদস্য এমন ১১৩টি ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাকে নজরদারিতে রাখা হয়। এর মধ্যে ৯০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ২৩ কারখানা এখনো চালু আছে। এসব কারখানায় কাজ করা ৫১ হাজার ৫০০ শ্রমিকের সম্পূর্ণ মজুরি পরিশোধ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও অধিদপ্তরের (ডাইফি) মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় বলেন, করোনাকালে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে এবং কিছু কারখানা আংশিক খোলা আছে। ওই সব কারখানার মালিকদের শ্রমিকের মজুরি পরিশোধের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডাইফির পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই শ্রমিকরা তাঁদের ন্যায্য মজুরি পাবেন বলে আশা করি। পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২৫ মার্চ সরকার পাশাক খাতসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি দিতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করে। এ ছাড়া তিন দফায় শ্রমিক মোট ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেয় শুধু শ্রমিকের মজুরি পরিশোধের জন্য। এরপর ৫ এপ্রিল সরকার একই খাতের চলতি মূলধনের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। ওই সময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য দেওয়া হয় ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা। সাভারের হেমায়েতপুরের জাইশা ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেডে কাজ করতেন মো. শফিকুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ গত ২৫ মার্চ করোনাকালে সাধারণ ছুটির সময় কারখানা বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে ওই কারখানার প্রায় ১৫০ পোশাক শ্রমিককে ছাঁটাই করে দেয়। এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে মালিকদের চুক্তি অনুযায়ী এমন অমানবিক হওয়ার কথা ছিল না। এই করোনাকালে কথা ছিল সাধারণ ছুটি এবং সরকারের প্রণোদনার কারণে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই হবে না। কারখানা লে-অফ হবে না। এর পরও দেখা গেছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শ্রমিক নিরাপত্তার কথা ভেবে পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য বিভিন্নভাবে নগদ প্রণোদনাসহ সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। এর পরও শ্রমিকরা বঞ্চিত হয়। শ্রমিক ঠকানোর এমন কৌশল বিশ্ববাজারে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। যেকোনো উপায়ে হোক শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি পরিশোধ করা উচিত বলে আমি মনে করি।’