দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক পোশাক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। তবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে দাবি করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। চাকরি হারানো শ্রমিকদের মধ্যে অন্তত ৬৫ শতাংশ গ্রামে ফিরে গেছে। তবে এপ্রিল মাসে যখন কারখানাগুলো আবার খুলতে শুরু করল, তখন স্বাস্থ্যবিধির অজুহাতে মালিকরা তাঁদের আর কাজে নেননি। অনিশ্চয়তার মধ্যে চাকরিহারা অনেক পোশাক শ্রমিক অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ এখন অটোরিকশা চালিয়ে, কেউ ফুটপাতে কাপড়ের ব্যবসা করে, মুদি দোকান দিয়ে আবার কেউ বা গ্রামে ফিরে গিয়ে দিনমজুরি, কৃষিকাজ, মাছ শিকার, নির্মাণকাজ, মাছ বা মুরগির খামার করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। অথচ এখন পোশাক খাতে শ্রমিক সংকট তৈরি হয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক পোশাক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। তবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে দাবি করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। চাকরি হারানো শ্রমিকদের মধ্যে অন্তত ৬৫ শতাংশ গ্রামে ফিরে গেছে। তবে এপ্রিল মাসে যখন কারখানাগুলো আবার খুলতে শুরু করল, তখন স্বাস্থ্যবিধির অজুহাতে মালিকরা তাঁদের আর কাজে নেননি। অনিশ্চয়তার মধ্যে চাকরিহারা অনেক পোশাক শ্রমিক অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ এখন অটোরিকশা চালিয়ে, কেউ ফুটপাতে কাপড়ের ব্যবসা করে, মুদি দোকান দিয়ে আবার কেউ বা গ্রামে ফিরে গিয়ে দিনমজুরি, কৃষিকাজ, মাছ শিকার, নির্মাণকাজ, মাছ বা মুরগির খামার করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। অথচ এখন পোশাক খাতে শ্রমিক সংকট তৈরি হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, করোনা মহামারির কারণে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। তখন থেকে গত ২৬ আগস্ট পর্যন্ত কাজ হারিয়েছেন এক লাখ ১০ হাজারের বেশি পোশাক শ্রমিক। অবশ্য কোনো কোনো সংগঠনের হিসাবে এই সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজার। আবার কেউ বলছে, তাদের হিসাবে নেই এমন চাকরিচ্যুত পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা দুই থেকে আড়াই লাখ। শেরপুর জেলার শ্রীবরদী এলাকার বাসিন্দা মো. জুয়েল কাজ করতেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায়। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার পর কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি আর কাজে ফিরতে পারেননি। নিজের গ্রামেই অটোরিকশা চালিয়ে এখন তিনি সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। জুয়েল কালের কণ্ঠকে বলছিলেন, করোনায় কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার পর তিনি অন্য কারখানায় কাজ খুঁজতে গিয়েছিলেন, কিন্তু মালিকপক্ষ স্বাস্থ্যবিধির কথা বলে তাঁকে কাজে নেয়নি। একইভাবে বরিশালের আবদুল্লাহ আল মামুন কাজ করতেন রাজধানীর মালিবাগ এলাকার ড্রাগন সোয়েটার নামের একটি কারখানায়। করোনার কারণে চাকরি হারিয়ে তিনি এখন রাইড শেয়ারিং অ্যাপভিত্তিক গাড়ি চালাচ্ছেন। দীর্ঘ ১০ বছর ওই কারখানায় কাজ করলেও তিনি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। করোনার কারণে দেশের রপ্তানিমুখী শীর্ষ এ খাতে সংকট তৈরি হবে, সেটা বিবেচনা করেই সরকার গত ২৫ মার্চ পোশাক খাতসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি দিতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করে। তিন দফায় শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য মোট ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এরপর ৫ এপ্রিল সরকার একই খাতের চলতি মূলধনের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। ওই সময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য দেওয়া হয় ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা। কিন্তু সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনাকালে শ্রমিকরা পুরো মজুরিও পাননি। সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের ঐকমত্যে শ্রমিকরা ৬০ শতাংশ মজুরি পান এপ্রিল মাসে। মে ও জুন মাসে পান ৬৫ শতাংশ। জুলাই থেকে শতভাগ মজুরি পান। সিপিডির এই কর্মকর্তা বলছেন, সংকটকালে কাজ না পেয়ে গ্রামে চলে যাওয়া অনেক শ্রমিক ভিন্ন পেশায় টিকে থাকার চেষ্টা করলেও বন্যা এবং পর্যাপ্ত কাজের অভাবে তাঁরা কাঙ্ক্ষিত আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এতে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয়েছেন নারী শ্রমিকরা। এখন আবার কারখানায় নতুন করে নিয়োগ দিলে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা ফিরে আসতে পারেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন। নিট পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশের তৈরি পোশাক খাত দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, মার্চ মাসের শেষ দিকে দেশে করোনার কারণে কারখানা বন্ধ করতে হয়েছে। এই সময় কারখানার উৎপাদন নেমে আসে ৫৫ শতাংশে। তবে গত অর্থবছরের শেষ মাস জুন থেকে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় আবার বাড়তে শুরু করেছে। শ্রমিক স্বার্থ তদারকি করা কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডাইফি) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৫টি কারখানার ২৩ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। এ সময় লে অফ হয়েছে ২৬টি কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করতেন ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক। পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য অনুসারে, করোনাকালে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত ১১৩টি ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাকে নজরদারিতে রাখা হয়। এর মধ্যে ৯০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ২৩টি কারখানা এখনো চালু আছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানায় কাজ করা ৫১ হাজার ৫০০ শ্রমিক তাঁদের সম্পূর্ণ মজুরি পেয়েছেন বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক বলছেন, দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৭০ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। গত বুধবার রাতে ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি) আয়োজিত এক অনলাইন সেমিনারে (ওয়েবিনার) তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১০৬টি কারখানা থেকে এসব শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। পোশাক খাতে অন্তত ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। তার ৮০ শতাংশই নারী। তবে বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার কালের কণ্ঠকে বলছেন. ‘আমাদের সংগঠনের তথ্য অনুসারে, গত ২৬ মার্চ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত কাজ হারিয়েছেন এমন শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখ ১০ হাজারের বেশি। কেউ কেউ নতুন করে কাজ পেলেও ৬৫ শতাংশ শ্রমিক গ্রামে ফিরে গেছেন।’ উদ্যোক্তারা শ্রমিক কমালেও উৎপাদন কমাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁরা একই লোকসংখ্যা দিয়ে উৎপাদন চালিয়ে নিয়েছেন। চাকরি হারিয়েছেন এমন শ্রমিকরা গ্রামে গিয়ে দিনমজুরি, মাছ শিকার, কৃষিকাজ, নির্মাণকাজ, মাছ চাষ, মুরগির খামার করে বিকল্প জীবিকা বেছে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।mসম্প্রতি রাজধানীর কাছের পোশাক শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জ ও ফতুল্লায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এসব এলাকায় কারখানার ফটকে ফটকে প্রচুর শ্রমিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে। জানতে চাইলে নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানি খাতের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি ও ফতুল্লা গার্মেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে এহেসান শামীম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিক দিয়ে কাজ চালাতে হয়েছে। এ সময় বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকরা গ্রামে ফিরে যায়। ওই শ্রমিকরা আর কাজে না ফেরায় শ্রমিক সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে কারখানার ফটকে ফটকে এমন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখা যাচ্ছে।’