গ্রামে ও শহরে বসবাসকরীদের মাঝে বৈষম্য হ্রাস করার লক্ষ্যে শিল্পনীতি প্রণয়ন করা হবে। আলোচনার ভিত্তিত্তে যে শিল্পনীতি প্রণয়ন করা হবে, তা ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন এবং ব্যবসা পরিচালনার সূচকসহ অন্যান্য সূচকে দেশের অবস্থান আরও উন্নত করবে। রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘শিল্পনীতির সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ মন্তব্য করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। শিল্পমন্ত্রী জানান, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যে শিল্পনীতি প্রণয়ন করা হবে- তার মাধ্যমে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। সিএমএসএমইতে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে, কর্মসংস্থান সহায়ক প্রবৃদ্ধি ঘটবে। পাশাপাশি দেশের শিল্প-কারখানায় দেশীয় দক্ষ লোকবল যেন কমর্সংস্থানের সুযোগ পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, অর্থনীতির শিল্পখাতের অধিকাংশ উদ্যোক্তারাই কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার মধ্যে অর্ন্তভুক্ত। এদের উন্নয়ন করা গেলেই দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বিনিয়োগ বাড়বে এবং সচল হবে দেশের অর্থনীতি। সরকারি প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে ২০ হাজার কোটি টাকা সিএমএসই খাতের জন্য বরাদ্দ দেয়া হলেও ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মঞ্জুরকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা- যা এখাতে ঘোষিত মোট প্রণোদনার ৩৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। যেখানে তৈরি পোশাক ছাড়া প্রায় সব শিল্প খাতে প্রণোদনা বণ্টনে ব্যাংকগুলো পিছিয়ে রয়েছে। সরকারের ঘোষিত নীতিগত ও আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে যেন কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বঞ্চিত না হয়, সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, করোনো মহামারির কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক গতিধারায় একটি মন্থরভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থা উত্তরণে একটি টেকসই ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, এটির যথাযথ বস্তবায়ন করা আবশ্যক। রফতানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণ ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়টি এখন বেশ প্রকট হয়েছে এবং এ অবস্থা উত্তরণে বিশেষ করে কৃষি খাত ও এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি বলেন, এসএমইদের সংজ্ঞায়নে বেশ সমস্যা রয়েছে, যা নিরসন করা একান্ত আবশ্যক। তিনি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে ছোট এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা অঞ্চল স্থাপন করার প্রস্তাব করেন। প্রণোদনার টাকা ফেরত দেয়ার সময়সীমা অন্তত ২ বছর বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে এসএমইদের জন্য প্রণোদনার প্যাকেজে বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, গত তিন দশকে বাংলাদেশের শিল্পখাত প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও তা ছিল মূলত রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাত নির্ভর। তবে শিল্পখাতের বহুমুখীকরণে চামড়া, পাট, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, জাহাজ নির্মাণ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রভৃতি শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা একান্ত আবশ্যক। প্রয়োজনীয় গবেষণা ও বিনিয়োগের অভাবে দেশের উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে বেশ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাসুদুর রহমান প্রমুখ।