যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে অভিবাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বাভাবিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। প্রবাসী আয় ও তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়ার যে আলোচনা ছিল, বর্তমান সরকারের সময়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। ডেমোক্রেটিক নেতা জো বাইডেনের বিজয়ের মধ্যে সে আলোচনার পথ আবার শুরু হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার বাংলাদেশের জন্য ভালো হলো বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুই ভিত প্রবাসী আয় ও তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয়। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন কনজারভেটিভ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের দুটি খাতেই ঝুঁকিতে পড়ে। প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বিপুলসংখ্যক ছাত্র আমেরিকা যায়। তারাই পরে সেখানে অভিবাসী হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে স্টুডেন্ট ভিসা কমে আসে। রামরুর প্রতিষ্ঠাতা ড. তাসনিম সিদ্দিকী খোলা কাগজকে বলেন, জো বাইডেনের জয়ের মধ্য দিয়ে এ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে। প্রতি বছর ডিসেম্বরে স্টুডেন্ট ভিসা ছাড়া হয়। জো সরকার ডিসেম্বরে দায়িত্ব না নিলেও এর প্রভাব পড়া শুরু করবে। তাছাড়া জো বাইডেন ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন, দায়িত্ব নিয়েই তার প্রধান কাজ হবে আমেরিকায় করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় সর্বোচ্চ কার্যক্রম গ্রহণ করা। এজন্য বিপুলসংখ্যক লোকবলের প্রয়োজন হবে। এছাড়া কনজারভেটিভ মনোভাব থেকে বের হয়ে আসার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৈরী অবস্থা বিরাজ করছে তা দূর হবে। সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তনটা হবে তা হলো আমেরিকার রক্ষনশীল প্রেসিডেন্টের পতনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্য ও ভারতের রক্ষণশীল সরকারের পতনের একটি রাস্তা তৈরি হয়ে গেল। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার পরও আমাদের জিএসপি বা ডব্লিউটিও-এর আওতায় আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়নি। তৈরি পোশাক বাদে আমাদের অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ও অ্যাপেক্স ট্রেডবডি এফবিসিসিআই-এর সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, আমেরিকার সরকার বদল হলেও নীতির পরিবর্তন হয় না। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা হতে পারে। আমেরিকা তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য আলোচনার নতুন দ্বার উন্মোচন হলো। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র তৈরি পোশাক শুল্কমুক্ত রপ্তানির জন্য অনেকগুলো শর্ত দিয়েছিল। আমরা শর্ত পালন করেছিলাম; এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করে তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যাতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেতে পারিÑ তাও আমেরিকা মানেনি। জো বাইডেন বিজয়ী হওয়ায় নতুন করে সব বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হলো। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে। প্রতিবেশী মেক্সিকো থেকে শুরু করে আরব দেশগুলোর সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক তৈরি করে। দেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় ও বর্ণবাদী বৈরী সম্পর্ক তৈরি করে। বর্ণবাদী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা শুরু হয়। দাঙ্গা-হাঙ্গামা হতাহত পর্যন্ত গড়ায়। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের মতো মুসলিম ও তুলনামূলক ছোট্ট অর্থনীতির আফ্রিকান দেশগুলোর ওপর। দল বেঁধে অভিবাসীরা দেশে ফিরতে শুরু করে। যারা যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যায় দেশে তাদের পরিজনদের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। জো বাইডেনের নেতৃত্বে ডেমোক্রেটিক পার্টি বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে আমেরিকার একটি স্থিতিশীল পরিবেশের পথ উন্মুক্ত হলো। ফলে বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি আফ্রিকান দেশগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ খোলা কাগজকে বলেন, জো বাইডেনের বিজয় এসব ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। জো বাইডেন অনেক লিবারেল ও নমনীয়। ফলে তার কাছে আমরা আশা করতে পারি। যারা ওখানে আটকে আছে, যারা ওখানে যেতে পারছেন না- তাদের জন্য সহজ হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে যার যার দেশের স্বার্থ তারা দেখে থাকে। তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে তাই হতে পারে। আমাদের রপ্তানি তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানিনির্ভর। এখনই বলা মুশকিল হবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টিসিয়াল বিষয়ের সঙ্গে এসব বিষয় যুক্ত কিনা, প্রেসিডেন্টর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য পর্যায়ের কোনো সম্পর্ক আছে কি-না। আমদানি-রপ্তানিতেও লেবারাইজেশন যদি হয়, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। আমি সার্বিকভাবে বলব, বাইডেনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালোই হবে।