নামী ব্রিটিশ সুপাারমার্কেট মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, টেসকো এবং সেইন্সবেরিস, আর বিশ্বখ্যাত আমেরিকান ফ্যাশন ব্র্যান্ড রাল্ফ লোরেনের জন্য পোশাক সরবরাহ করে ভারতের পোশাক কারখানাগুলো। কিন্তু সেখানকার শ্রমিকরা বিবিসিকে বলছেন যে কীভাবে তারা শোষিত ও নিগৃহীত হচ্ছেন। রাল্ফ লোরেন ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করেন এমন একজন নারী শ্রমিক বলেছেন, অর্ডারের কাজ শেষ করার জন্য তাদের সারারাত কারখানায় কাজ করতে বাধ্য করা হয়। কখনও ঘুমের প্রয়োজন হলে তাদের কারখানার মাটিতে শুয়ে ঘুমাতে হয়। ”আমাদের এক নাগাড়ে কাজ করে যেতে হয়। প্রায়ই সারারাত কাজ করতে হয়, ভোর তিনটায় ঘুমাই একটুক্ষণ, আবার ভোর পাঁচটায় উঠে পড়ে পরের দিন সারা দিন ডিউটি করতে হয়,” একজন নারী কর্মী বলছিলেন।
“আমাদের বসরা আমাদের কথা ভাবে না, তারা শুধু উৎপাদনের দিকটা নিয়েই ভাবে,” তিনি বলেন। যারা কথা বলেছেন বিবিসি তাদের নাম গোপন রাখতে রাজি হয়েছে। এই শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিবিসি এসব কারখানার নামও প্রকাশ করছে না। ব্রিটিশ বহুজাতিক সুপারমার্কেটগুলোর জন্য যেসব কারখানা পণ্য সরবরাহ করে সেখানকার শ্রমিকরা বলেছেন তাদের যে মানবেতর পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করা হয়, ওইসব প্রতিষ্ঠানের ব্রিটিশ কর্মীরা কখনই ওই কর্মপরিবেশ মেনে নেবেন না। “আমাদের টয়লেটে যেতে দেয়া হয় না, শিফট চলার সময় আমাদের এমনকি পানি খাবারও সময় দেয়া হয় না। আমাদের দুপুরের খাওয়ার জন্য যেটুকু সময় দেয়া হয় তা প্রায় না দেয়ার মত,” এক নারী জানান। তিনি বলেন, ক্যান্টিনে খেতে বসলে প্রায়ই একজন ম্যানেজার কর্মীদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং হুইসেল বাজিয়ে তাদের জানান দেন এবার কাজে ফিরতে হবে। আরেকজন কর্মী বলেন, শ্রমিকদের ওভারটাইম করতে বাধ্য করা হয় এবং বাড়তি কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বাসায় যেতে দেয়া হয় না। ”আমাদের ওপর কাজের চাপ তারা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে কাজ শেষ করার জন্য আমাদের বাড়তি সময় কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। না থাকলে ওরা আমাদের ওপর চোটপাট করে, গালি দেয়, আমাদের তাড়িয়ে দেবার হুমকি দেয়। আমরা কাজ হারাতে চাই না, তাই ভয়ে ভয়ে থাকি।” যে কারখানাগুলোয় আমরা অনুসন্ধান চালিয়েছি, তারা চারটি বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য পোশাক সরবরাহ করে। এই চারটি প্রতিষ্ঠানই বলেছে যে বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে আসা শ্রমিকদের এই অভিযোগের কথা জানতে পেরে তারা উদ্বিগ্ন এবং তারা এ বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন।
এইসব পোশাক কারখানায় যেসব নারী কাজ করেন, তারা সবাই দক্ষিণ ভারতের একটি গ্রামে দারিদ্রের মধ্যে জীবন কাটাতেন। এই এলাকার ৪৫টি গ্রামের ১২০০-য়ের ওপর নারী গার্মেন্টস শ্রমিককে সাহায্য করে দাতব্য সংস্থা অ্যাকশনএইড। তারা বিবিসিকে জানিয়েছে, এই কারখানাগুলোতে বাধ্যতামূলক ওভারটাইম, গালিগালাজ এবং খারাপ কর্ম পরিবেশ নৈমিত্তিক সমস্যা। তবে এই ধরনের অভিযোগ শুধু গার্মেন্টস শিল্পেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতে বেতন কম এবং শ্রম আইন দুর্বল হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরেই বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর কাছে তাদের পোশাক বা অন্য পণ্য তৈরির জন্য ভারত একটা আকর্ষণীয় দেশ। বেসরকারি খাতে ইউনিয়নের অস্তিত্ব বিরল – প্রায় অনুপস্থিতই বলা চলে। ফলে বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক বা চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিকদের অবস্থা থাকে খুবই নাজুক। যদিও কারখানা পরিদর্শন বাধ্যতামূলক, কিন্তু গোটা প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা আর ব্যাপক দুর্নীতির কারণে দেখা যায় যে আইন ভাঙলেও কারখানাগুলোকে জবাবদিহিতা করতে প্রায় কখনই বাধ্য করা হয় না। গার্মেন্টস শিল্পের দিকে নজরটা বেশি থাকে, কারণ গার্মেন্টস শিল্প মূলত রফতানি নির্ভর এবং বিশ্বের বড় বড় নামী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের খদ্দের হবার কারণে সেখানে তাদের নামও জড়িয়ে থাকে। বিশ্বে সবচেয়ে বড় পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক দেশ হলো চীন। এরপরই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। ভারতে পোশাক তৈরির কারখানাগুলো সরাসরি কাজে নিয়োগ করে থাকে এক কোটি ২৯ লক্ষ শ্রমিক। এর বাইরেও নিজেদের বাসায় বা অন্যত্র পোশাক তৈরির কাজে জড়িত আছেন আরও কয়েক লাখ শ্রমিক। এই তথ্য দিয়েছে গার্মেন্টস খাতের নিয়োজিত কর্মীদের নিয়ে ২০১৯-য়ে চালানো একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট থেকে। আমেরিকান ফ্যাশান প্রতিষ্ঠান রাল্ফ লোরেনের জন্য কাজ করেন এমন একটি কারখানার বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিক বিবিসিকে বলেছেন, কারখানায় একটা ভয়ের পরিবেশে তাদের কাজ করতে হয়। তারা জানান, বাড়তি সময় কাজের প্রয়োজন হলে ম্যানেজাররা কখনই তাদের আগেভাগে জানান না। বরং যখন তারা বাড়তি সময় কাজ চান, তখনই তাদের বলেন ওভারটাইম করতে হবে, করতে না পারলে ছাঁটাই করে দেবার হুমকি দেন। ”সুপারভাইজাররা সবসময় আমাদের ওপর চিৎকার করেন, ধমক দেন,” একজন নারী বলেন। ”সেলাইয়ে কোনও রকম ভুল করলে আমাকে ধরে মাস্টারের কাছে নিয়ে যায়। মাস্টার বেজায় বদরাগী। মাস্টার গালিগালাজ শুরু করেন, আমাদের চিৎকার করে ধমক দেন। সেটা একটা ভীতিকর অভিজ্ঞতা।” আরেকজন বিধবা নারী, যার পরিবার আর্থিকভাবে তার ওপর পুরো নির্ভরশীল, তিনি বলেন: “তারা আমাকে এত দেরি পর্যন্ত কাজ করতে বলে যে আমি রাতে আমার বাচ্চাদের খেতে দিতে পর্যন্ত পারি না। তারা আমাদের যে দাসীর মত দেখে, সেটা ঠিক নয়। তাদের উচিত আমাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়া।”
তাদের এসব দাবি ভারতের কারখানা আইনের লংঘন। এই আইনে বলা আছে যে কোন শ্রমিককে সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। ওভারটাইম করালেও সপ্তাহে ৬০ ঘন্টার বেশি বেআইনি এবং এক দিনে নয় ঘন্টার বেশি কাজ করনো আইনের লংঘন। আইনে আরও বলা আছে যে নারীরা নিজেরা চাইলেই শুধু তাদের রাতের শিফটে কাজ করানো যাবে। রাল্ফ লোরেন তাদের ২০২০ সালের একটি প্রতিবেদনে বলেছে, তাদের সংস্থা “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যারা আমাদের পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করে তাদের সকলের সম্মানের প্রতি যথাযথ মর্যাদা দিয়ে মানবিক রীতি মেনে আমরা আন্তর্জাতিক স্তরে আমাদের কাজকর্ম পরিচালনা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” এই প্রতিবেদনে আরও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে যে, তাদের কর্মচারীদের “অতিরিক্ত ঘন্টা যাতে কাজ করতে বাধ্য করা না হয়, সেটা তারা নিশ্চিত করবে”। এবং বলা হয় যে “কাউকে মুখে গালিগালাজ করা যাবে না, ভয়ভীতি দেখানো যাবে না, শাস্তি দেয়া বা নির্যাতন করা যাবে না”। আর ব্রিটেনের তিনটি সুপারমার্কেট এথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ বা ইটিআই (নৈতিক বাণিজ্য উদ্যোগ) সংগঠনের সদস্য, এবং সংগঠনের মূল নীতিগুলো মেনে চলার ব্যাপারে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ – যার মধ্যে রয়েছে কাজের সময় অতিরিক্ত না হওয়া, ওভারটাইম ঐচ্ছিক ভিত্তিতে করানো এবং কর্মীদের গালিগালাজ না করার বিষয়গুলো তারা নিশ্চিত করবে। রাল্ফ লোরেন এক বিবৃতিতে বলেছে, বিবিসি তার অনুসন্ধানে পাওয়া যেসব অভিযোগ তাদের জানিয়েছে, তাতে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং বিষয়গুলো তারা তদন্ত করবে। “আমাদের পণ্যসামগ্রী যারা সরবরাহ করে আমরা চাই তারা সকলেই কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যগত এবং নৈতিক মান বজায় রেখে কাজ করার দায়বদ্ধতা কঠোরভাবে অনুসরণ করবে। আমরা নিয়মিতভাবে তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে কারখানার মান নির্ধারণ করে থাকি,” জানাচ্ছে রাল্ফ লোরেন। রাল্ফ লোরেনের সাথে সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো তাদের শ্রমিকদের অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে এবং বলেছে তারা আইন মেনে কাজ করে। তিনটি সুপারমার্কেটের প্রত্যেকেই বলেছে এইসব অভিযোগের খবরে তারা হতবাক এবং সমস্যা সমাধানে তারা একসাথে কাজ করবে, বিশেষ করে অতিরিক্ত সময় কাজ করানোর ব্যাপারে। সেইন্সবেরিস বলেছে, “তাদের সাথে কাজ করতে হলে সরবরাহকারী কারখানাগুলোকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তারা ইতোমধ্যেই জোর দিয়েছে,”। তারা বলছে “কিছু কিছু পদক্ষেপ নেবার ব্যাপারে এসব কারখানা আগেই যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেগুলো তারা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করেছে কিনা সে দিকেও কড়া নজরদারি অব্যাহত রাখা হবে।” টেসকো বলেছে: “শ্রমিকের অধিকার লংঘন আমরা বরদাস্ত করি না এবং এসব অভিযোগ আসার সাথে সাথেই আমরা পূর্ণ তদন্ত করেছি এবং আমরা যা জেনেছি তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
টেসকো বলছে, অতিরিক্ত ওভারটাইম নিষিদ্ধ করা এবং অনুযোগ-অভিযোগ শোনার প্রক্রিয়া আরও জোরদার করার লক্ষ্যে এবং বাড়তি সময় কেউ কাজ করলে তাকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবার প্রক্রিয়াও নিশ্চিত করতে তারা পদক্ষেপ নেবে। মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার বলেছে, তারা এইসব দাবি সম্পর্কে জানার পরেই “অবিলম্বে অঘোষিত পরিদর্শন ও তদন্তের ব্যবস্থা” করেছেন। তারা দেখেছেন, “যেভাবে শ্রমিকদের ওভারটাইমে বাধ্য করা হচ্ছে তা অগ্রহণযোগ্য”। তবে টয়লেটে যেতে না দেয়া বা পানি খেতে না দেবার অভিযোগের সত্যতা তারা পাননি বলে তারা জানাচ্ছে। তারা আরও বলেছে, এ ধরনের কাজ যাতে ভবিষ্যতে না ঘটতে পারে, তার জন্য তারা “পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে কারখানা পরিদর্শন করা হবে আইনকানুন মানা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে”।
‘ব্র্যান্ডগুলোই দায়ী’
এই ধরনের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর নিজস্ব কোন কারখানা ভারতে নেই, যে কারণে কারখানার কর্মপরিবেশ এবং তাদের মধ্যে দূরত্ব বিশাল। তবে একটি পোশাক কারখানার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন যে বড় বড় আন্তর্জাতিক বিপণন সংস্থাগুলো যদি সস্তায় পোশাক পেতে চায়, তাহলে তাদের সরবরাহ জোগানদাতা কারখানাগুলোর উৎপাদনের খরচ কমানোর জন্য সব রকম পথ নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। “এসব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড তাদের পকেটে সর্বোচ্চ মুনাফা রাখতে চায়। ফলে আমাদের মত কারখানাগুলোকে তারা এমন একটা চাপের মধ্যে ফেলে যে ব্যবসা বাঁচানোর জন্য শ্রমিকদের শোষণ করা ছাড়া আমাদের পথ থাকে না।” এই কারখানা মালিক যিনি এক সময় ব্রিটেনে প্রথম সারির একটি বিপণন প্রতিষ্ঠানে পোশাক সরবরাহ করতেন, যাদের কেউই এই প্রতিবেদনের অংশ নয়, তিনি বলেছেন যে কারখানা পরিচালনার ওপর যে নজরদারি চালানো হতো তা “লজ্জাজনক”। “অডিটররা কখন আসবে কারখানা জানতো, তারা সেসময় আগে থেকে সব কিছু ত্রুটিহীন অবস্থায় রাখতো,” তিনি বলেন। “অডিট শেষ হয়ে গেলেই সব কিছু আবার আগের মতন, অর্থাৎ শোষণ আর আইন অমান্য করা।” তিনি বলেন, নজরদারির দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় এড়ানোর সংস্কৃতি যতদিন থাকবে, এধরনের শোষণ ও নির্যাতন বন্ধ করা খুবই কঠিন। “পোশাক বা বস্ত্র শিল্প এভাবেই চলে – শুধু ভারতে নয়, সর্বত্র।” আর লাভের অঙ্ক যত সঙ্কুচিত হয়, নারী শ্রমিকরা তত ক্ষতির মুখে পড়েন। বিবিসি ভারতে যেসব পোশাক শ্রমিকদের আয়ের কাগজ দেখেছে, তাতে দেখা গেছে গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত একজন নারী শ্রমিকের বেতন দিনে আড়াই পাউন্ড সমপরিমাণ। আর ওই বেতনে যে বাজারের জন্য তারা পোশাক তৈরি করছেন, সেগুলো ব্রিটেনের বাজারে বিক্রি হচ্ছে শত শত পাউন্ড দামে।
অ্যাকশনএইড ইন্ডিয়ার নারী শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে ৪০ শতাংশ নারী শ্রমিকের গড় মাসিক আয় ২,০০০ থেকে ৫,০০০ রুপির মধ্যে। অ্যাকশনএইডের চেন্নাই অফিসের সহযোগী পরিচালক বলেন, “গার্মেন্টসের পুরো সরবরাহ চেইনে সবচেয়ে কম মূল্য নারী কর্মীদের, তাদের বেতনও প্রত্যেকটি স্তরে কম।” বিবিসি যেসব নারী পোশাক শ্রমিকের সাথে কথা বলেছে তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, তারা দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটান । তারা যে বেতন পান, তাতে সংসার চালানো তাদের জন্য একটা সংগ্রাম। এদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী এবং তাকেই পুরো সংসারের বোঝা বইতে হয়। পোশাক কারখানায় কাজ করেন এমন অল্প বয়সী অনেক মেয়ের বেতন ন্যূনতম বেতন কাঠামোর মধ্যে থাকলেও তা যথেষ্ট নয় বলেই অনেক অধিকার সংগঠন মনে করে। দক্ষিণ এশিয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের উচ্চ বেতনের জন্য তদ্বিরকারী সংগঠন এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স মনে করে যে ভারতে একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের জীবন ধারণের জন্য মাস মাইনে হওয়া উচিত ১৮,৭২৭ রুপি অর্থাৎ ১৯০ পাউন্ড। ব্রিটেনের তিনটি সুপারমার্কেট প্রতিষ্ঠান টেসকো, সেইন্সবেরিস এবং মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার আগে বলেছিল তারা শ্রমিকের জীবন ধারণের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ বেতন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদিও এধরনের কোন অঙ্গীকার রাল্ফ লোরেন করেনি। কিন্তু ভারতে তাদের সরবরাহকারী কারখানাগুলোর শ্রমিকদের আয়ের কাগজ দেখেছে বিবিসি। তারা কেউই এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স-এর সুপারিশ করা ন্যূনতম বেতনের ধারে কাছেও তাদের শ্রমিকদের মাইনে দেয় না।
এই চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বেতনের বিষয়টা জানতে চেয়েছিল বিবিসি। কিন্তু কেউই এ বিষয়ে কিছু বলেনি। শ্রম অধিকার সংগঠন লেবার বিহাইন্ড দ্য লেবেলের মুখপাত্র অ্যানা ব্রাইহার মনে করেন, ন্যায্য ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব ক্রেতা সংস্থা হিসাবে এসব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের। “আপনি যদি নামকরা ব্র্যান্ডের মালিক হন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আপনার পোশাক উৎপাদনের কাজ চালান, তাহলে আপনার দোকানের জন্য পোশাক তৈরি করছেন যেসব কর্মী, তারা সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচছে কি-না, সেটা দেখা আপনারই দায়িত্ব,” তিনি বলেন। “আপনার সরবরাহ চেইনের মাথায় বসে আছেন আপনি। আপনাকেই জানতে হবে এই চেইনের বিভিন্ন স্তরে কী ঘটছে। এবং সবকিছু ন্যায়সঙ্গতভাবে নৈতিকভাবে হচ্ছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে,” আন্তর্জাতিক বিপণন সংস্থাগুলোকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন। এ ধরনের আন্তর্জাতিক গার্মেন্টস চেইনের ওপর গবেষণা করেছেন ইংল্যান্ডে বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়ার লেকচারার ভিভেক সুন্দরাজান। তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে যেসব শ্রম আইন আছে সেগুলো এই শোষণের সংস্কৃতি মোকাবেলায় যথেষ্ট নয়। “সবকিছু ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা জানতে স্থানীয়ভাবে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, সেখানে শ্রমিকদের কণ্ঠ অনুপস্থিত। তাদের প্রয়োজন সেখানে উপেক্ষিত থেকে যায়,” তিনি বলছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো সেখানে কারখানা পরিচালনা না করলেও, যেহেতু কাজটা হচ্ছে তাদেরই জন্য, ব্যবসার সব লাভটাও তারাই পাচ্ছে, তাই তাদের পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করা একান্ত জরুরি।