করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় গেল অক্টোবরে পণ্য রপ্তানি কম হয়েছে ৪ শতাংশ। নভেম্বরে রপ্তানি পরিস্থিতি আরও খারাপ। গত ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি কম হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। আগামী মাসগুলোর জন্য রপ্তানি আদেশ কমছে। এ ছাড়া আগে থেকেই দর কমার প্রবণতা ছিল। এই কমের ওপর এখনও আরও দর কমছে। সব মিলিয়ে কঠিন সময় পার করছে পোশাক খাত। সাধারণত রপ্তানি পরিস্থিতির আগাম চিত্র পাওয়া যায় ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশনের (ইউডির) তথ্যে। রপ্তানি আদেশের বিপরীতে কাঁচামাল আমদানির অনুমতির সনদ হলো ইউডি। শুল্ক্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির এই সনদ দিয়ে থাকে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ইউডি গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে ইউডির সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২১৩টি। গত বছরের একই মাসে সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৬১৩টি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ছিল দুই হাজার ৭৭০টি। চলতি মাসে গত ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ইউডির সংখ্যা মাত্র এক হাজার ৪৭৯টি। মাস শেষ না হওয়ায় গত বছরের নভেম্বরের গোটা মাসের সঙ্গে তুলনা করা যাচ্ছে না। তবে মাস শেষ হতে আর মাত্র ৯ দিন বাকি অথচ গত বছরের একই মাসের তুলনায় ব্যবধান প্রায় অর্ধেক। আন্তর্জাতিক একাধিক বার্তা সংস্থার খবরে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাকের চাহিদা কমেছে ১২ শতাংশ। ইইউতে কমেছে ১৩ শতাংশ। গত মার্চ থেকে প্রতি মাসেই কমছে ভোক্তা চাহিদা। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সূত্রে জানা গেছে, প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য নেওয়া পোশাকের দর গত সেপ্টেম্বরে কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। জোটগত প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ১ শতাংশের মতো। গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাকের দর কমেছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ইইউতে কমেছে শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি এবং ফেম সোয়েটার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউল আজম সজল সমকালকে বলেন, রপ্তানি আদেশের পাশাপাশি পণ্যের দর একই সঙ্গে কমতে থাকায় পোশাক খাতের পরিস্থিতি খুব সহজেই অনুমান করা যায়। তিনি বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়েছে। প্রথম ধাক্কার কারণে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত শীত মৌসুমের পোশাক এখনও অনেক ক্রেতার গোডাউনে পড়ে আছে। গোডাউনে পড়ে থাকা পোশাক বিক্রি করাই এখন ক্রেতাদের প্রধান লক্ষ্য। এ কারণে আগামী জানুয়ারি-মার্চ সময়ের চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের রপ্তানি আদেশ দেওয়ার খুব প্রয়েজন নেই। নূ্যনতম হারেই রপ্তানি আদেশ দিচ্ছেন তারা। মশিউল আজম সজল আরও বলেন, শিল্প আসলেই কঠিন সময় পার করছে। ছোট-বড় কোনো কারখানায় পর্যাপ্ত কাজ নেই। ২০০ লাইনের সক্ষমতার কারখানায় ৫০ লাইনের কাজ চলছে। যে কোনো উপায়ে কাজ ধরে রাখা এবং ক্রেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাইছেন তারা। যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যাপ্ত কাজ পাওয়া যায়। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক কূটনীতি এবং উদ্যোক্তাদের পক্ষে আরও কার্যকর নেতৃত্বের প্রস্তাব করেন তিনি। বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, কম রপ্তানি আদেশ ও কম দরের পাশাপাশি মূল্য পরিশোধেও সময় নিচ্ছেন ক্রেতারা। প্রায় সব ক্রেতাই তিন থেকে ছয় মাস পরে মূল্য পরিশোধ করতে চান। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তিনি বলেন, শ্রমিক মজুরি, গ্যাস-বিদ্যুতের বিলসহ মাসের নির্ধারিত ব্যয় মেটাতে আপস করেই কাজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। অবশ্য এ পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের খুব বেশি কিছু করার নেই। ইউরোপ, আমেরিকাসহ অনেক দেশের বিভিন্ন শহরে লকডাউন ও কারফিউ চলছে। অনলাইনে স্বাভাবিক বেচা-বিক্রি সম্ভব নয়। এ ছাড়া ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদাও কমেছে।