তৈরি পোশাক খাতের ঘাটতি উত্তরণে টিআইবির ৯ দফা সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) টিআইবি এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব সুপারিশ করে। টিআইবি বলছে, করোনায় গার্মেন্টস খাতে দেওয়া সরকারি প্রণোদনার মাত্র ১৬ ভাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শ্রমিকদের। অথচ প্রায় ৪২ ভাগ শ্রমিক এখনো সেই প্রণোদনার অর্থ পায়নি। গার্মেন্টস খাতে প্রণোদনা বাবদ সরকার, উন্নয়ন সংস্থা ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক ও ঋণ সহায়তা বাবদ ৬২ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা পেয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ মাত্র শতকরা ১৬ ভাগ। এর মধ্যে আবার মোট শ্রমিকের ৪২ ভাগ বা প্রায় ১৪ লাখ শ্রমিক সরকারি প্রণোদনার অর্থ পায়নি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করোনার কারণে ৬৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। ছাঁটাই হয়েছে ২১ হাজার শ্রমিক। কারখানা বন্ধ ঘোষণা ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি লঙ্ঘিত হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে টিআইবি। প্রতিবেদনে তৈরি পোশাক খাতে করোনাভাইরাস উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় ৯টি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো-
১. করোনা মহামারি বিবেচনায় নিয়ে সব শ্রেণির শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তার বিধান সংযুক্ত করে ‘শ্রম আইন, ২০০৬’-এর ধারা ১৬ এবং ধারা ২০ সংশোধন করতে হবে।
২. বিজিএমইএ কর্তৃক প্রণীত গাইডলাইন অনুযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ব্যত্যয় হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ‘ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি)’ সুবিধা বাতিল এবং জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. বিজিএমইএর অঙ্গীকার করা করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার বাকি তিনটি ল্যাব দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে স্থাপন করতে হবে।
৪. ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নৈতিক ব্যবসা পরিচালনায় অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। পোশাকের ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ ও কার্যাদেশগুলোর বিদ্যমান শর্তের সঙ্গে দুর্যোগকালে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতকরণের বিষয় সংযুক্ত করতে হবে।
৫. করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকার ও মালিক সংগঠনগুলোর গঠিত বিভিন্ন কমিটিকে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ও যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে এসব কমিটি শ্রমিকদের অধিকার ও কারখানায় তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
৬. লে-অফকৃত কারখানায় এক বছরের কম সময় কর্মরত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. শ্রমিক অধিকার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির নিয়মিত ও কার্যকর পরিদর্শন নিশ্চিত করতে হবে।
৮. ইইউ ও জার্মানির সহায়তা তহবিল ব্যবহারের জন্য করোনা মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সঠিক তালিকা অবিলম্বে প্রণয়ন করতে হবে।
৯. করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া, শ্রমিক ছাঁটাই, কার্যাদেশ বাতিল ও পুনর্বহাল, প্রণোদনার অর্থের ব্যবহার ও বণ্টন ইত্যাদি সব তথ্য সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে; এসব তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে।