তৈরি পোশাক কারখানায় উৎপাদন বাড়াতে হলে নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার, কারখানা ও বেসরকারি সংস্থা—সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আগের চেয়ে পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা বেড়েছে। ১৫ ডিসেম্বর এসএনভি ও প্রথম আলোর উদ্যোগে এক ভার্চ্যুয়াল সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহযোগিতায় পরিচালিত এসএনভি বাংলাদেশের ওয়ার্কিং উইথ ওমেন প্রকল্প-২ এবং প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে ‘পোশাক খাতে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা’ শিরোনামের ছয় পর্বের ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভার ষষ্ঠ পর্ব ছিল এ আয়োজন। সভায় ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের এসআরএইচআর অ্যান্ড জেন্ডারের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক মাশফিকা জামান সাতিয়ার বলেন, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস দীর্ঘদিন ধরে তৈরি পোশাক খাতে কাজ করছে। আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এ খাতে। সবার যৌথ প্রচেষ্টার ফলেই এ পরিবর্তন এসেছে। এখন কারখানার মালিক ও কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ভালোর জন্য আসলেই কাজ করছে। নারীর মাসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি এখন অনেক কারখানা দেখছে। স্যানিটারি ন্যাপকিন দিচ্ছে। কারখানাগুলো এটা বুঝেছে যে উৎপাদন বাড়াতে হলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যে নজর দিতে হবে। সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং পোশাক খাত–সংশ্লিষ্টরা মিলে টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান মাশফিকা জামান।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল কারখানা বা পোশাক খাতে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে দেশীয় দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে কাজ করার কথা বলেন আরশাদ জামাল। তিনি আরও যোগ করেন, যেসব অঞ্চলে পোশাকশ্রমিকদের বসতি, সেসব স্থানে গুচ্ছ পদ্ধতিতে দিবাসেবা কেন্দ্রসহ শিশু ও নারীর পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র তৈরি করা যেতে পারে। তবে তিনি বলেন, এসব সেবা একদম বিনা মূল্যে না হয়ে বিনিময়ে কিছু পরিমাণ ফি নেওয়া উচিত। আবার স্বাস্থ্যবিমা টেকসই করার আগে বিমার মান নিশ্চিত করার দিকে নজর দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। আরশাদ জামাল বলেন, ‘সব ক্রেতাই এখন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশেও নীতিমালা হয়েছে। নারীবান্ধব একটা শিল্প যেন হয় সে লক্ষ্যে বিজিএমইএ সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছে।’ এসএনভি বাংলাদেশের আরএমজি ইনক্লুসিভ বিজনেস প্রোগ্রামসের দলনেতা ফারথিবা রাহাত খান বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এসএনভি নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় পোশাক কারখানায় স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করে। যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে তখন পোশাক কারখানাগুলো সেভাবে সচেতন ছিল না। এগুলো নিয়ে বলারও তেমন কেউ ছিল না। ফারথিবা রাহাত খান জানান, তাঁরা প্রায় ৪৫টি কারখানায় কাজ করেছেন। যেখানে ৬০ হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছেন।
ফারথিবা রাহাত খান বলেন, আগে ক্রেতারাও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে খুব ভাবত না। পরে তাঁরা যখন দেখল যে এই পোশাক খাতের উন্নতির জন্য এই সেবার দরকার, তখন ক্রেতারাও এগিয়ে এসেছে। নীতিগত দিক থেকে বাংলাদেশ সরকার অনেক এগিয়ে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সমস্যাটা প্রয়োগের ক্ষেত্রে। কারখানাগুলোও এই প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে জানে কি না, সেটা একটা প্রশ্ন। কারখানাগুলোকে এ বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে হবে এবং এখানে বিনিয়োগ করতে হবে। এখানে শ্রমিকদেরও ফি দিতে হবে। তাহলে তাঁদেরও আগ্রহ বাড়বে। স্বাস্থ্যের কথা বললে স্বাস্থ্যবিমার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মাসিক স্বাস্থ্যসেবার কথা বললে তাঁর প্যাডের ব্যবস্থা করতে হবে। করোনায় কী ধরনের পরবর্তন এসেছে? ফারথিবা রাহাত খান জানালেন, শুরুতে স্বাস্থ্যসেবা পেতে শ্রমিকেরা সমস্যায় পড়েছিলেন। তবে বড় ধরনের পরিবর্তন আসেনি। এখন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এখানে কাজ করতে হবে। তিনি স্বাস্থ্যবিমার ওপর জোর দেন এবং বলেন, স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নে সরকারকে নজর দিতে হবে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।