করোনা মহামারির ক্ষতি সামলাতে তৈরি পোশাক খাতে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। তার পরও সেই করোনার দোহাই দিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাইছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। শ্রমিকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট থেকে বঞ্চিত করতে শ্রম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে পোশাক খাতের একটি সংগঠন। সূত্র জানায়, পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিবছরের মূল বেতনের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট আপাতত দিতে চাইছেন না মালিকরা। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) গত রবিবার শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। তাতে শ্রমিকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট আগামী দুই বছরের জন্য স্থগিত চাওয়া হয়েছে। আর বিকেএমইএর এমন সিদ্ধান্তে পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনেরও (বিজিএমইএ) সমর্থন আছে। তারাও একই আবেদন জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে যাচ্ছে।
বিকেএমইএ সূত্রে জানা যায়, ইনক্রিমেন্ট স্থগিত চেয়ে করা বিকেএমইএর আবেদনটি গত রবিবার শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়। এর বিষয়বস্তুতে বলা হয়েছে—বিশ্ব মহামারি কভিড-১৯-এর প্রেক্ষাপটে বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট সাময়িক স্থগিত রাখার জন্য আবেদন। চিঠিতে বলা হয়, ‘করোনার কারণে সংকুচিত হয়ে পড়েছে কর্মক্ষেত্র। কোথাও চলছে সাময়িক বন্ধ, কোথাও শ্রমিক ছাঁটাই, আবার কোথাও চলছে শ্রমিকের মজুরি কমানো। এই পরিস্থিতিতে সরকারের ঘোষিত সহযোগিতা নিয়ে কোনোভাবে টিকে থাকতে লড়াই করছেন শিল্প মালিকরা। বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছে। যেসব পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে তার টাকা মিলবে আরো ১৮০ থেকে ২০০ দিন পর। এ ছাড়া বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যমূল্য আগের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় লোকসান দিয়ে মালিকরা কারখানা চালু রেখেছেন। পরিস্থিত বিবেচনায় যেখানে শ্রমিক-কর্মচারীদের বর্তমান বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে এই সংকটের সময়ে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়া কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। সুতরাং ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির বিধানটি আগামী দুই বছরের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ এই আবেদনের অনুলিপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এফবিসিসিআই সভাপতি এবং বিজিএমইএ সভাপতিকেও দেওয়া হয়েছে। বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সর্বশেষ ২০১৮ সালে যখন গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়, তখন সেটিই আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। শুধু প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে আমরা সেই মজুরি কাঠামো মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু ওই মজুরি দেওয়ার সামর্থ্য শিল্প মালিকদের ছিল না। তখনই বলা হয়েছিল, এখন থেকে প্রতিবছর শ্রমিকদের মজুরি ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। কষ্ট করে হলেও গত দুই বছর তা মালিকরা দিয়েছেন। কিন্তু এ বছর ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়া শিল্প মালিকদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, প্রতিবছর ৫ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি শ্রমিকদের আইনি অধিকার। এই অধিকার থেকে মালিকরা শ্রমিকদের বঞ্চিত করলে তা মোটেই ঠিক হবে না। আইনে আছে, এটি দিতেই হবে। করোনার কারণে গার্মেন্ট মালিকরা যেমন সমস্যায় আছে, তার চেয়েও বেশি সমস্যায় আছে শ্রমিকরা। তারা যা বেতন পায় তা দিয়ে এই দুঃসময়ে চলা কঠিন। সরকার মালিকদের এই আবেদন মেনে নিলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।