Home বাংলা নিউজ সমীক্ষা: পোশাক কর্মীদের বেতন পরিশোধে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার কমছে

সমীক্ষা: পোশাক কর্মীদের বেতন পরিশোধে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার কমছে

মোবাইল আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে ক্যাশ আউটে অধিক চার্জ, এ সংক্রান্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে স্পষ্ট ধারণার অভাব ও মোবাইল না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) শ্রমিকরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন বলে এক জরিপে উঠে এসেছে। করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে অধিকাংশ পোশাক কারখানা থেকে শ্রমিকদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা দেওয়া হলেও, পরে এ প্রবণতা কমতে দেখা গেছে। দেশের পোশাক শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব মূল্যায়ন করতে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও মাইক্রো ফাইন্যান্স অপরচুনিটিজ (এমএফও) পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠান দুটি গত এপ্রিল থেকে ১ হাজার ৩৭৭ শ্রমিকের ওপর ধারাবাহিকভাবে জরিপ চালিয়ে আসছে। জরিপে অংশ নেওয়া শ্রমিকরা চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত আছেন এবং তাদের তিন-চতুর্থাংশ নারী। কারখানাগুলোর নগদ অর্থে বেতন প্রদানের দিকে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় কারণ হলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন গ্রহণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিকের অনীহা। এ জরিপের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত উপাত্তগুলো নিয়ে “বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের বেতনের আধুনিকীকরণ প্রবণতা” শীর্ষক একটি সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছে। জরিপে শ্রমিকদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তারা কোন কারখানায় কর্মরত আছেন, কত বেতন পাচ্ছেন এবং কোন উপায়ে অর্থাৎ নগদ অর্থ নাকি ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন পেয়েছেন। সমীক্ষা প্রতিবেদনে কারখানাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়- “ব্র্যান্ড-কেন্দ্রিক” এবং “ব্র্যান্ড-কেন্দ্রিক নয়”। সমীক্ষায় সাধারণ প্রবণতা হিসেবে দেখা যায়, চলতি বছরের মে মাসে শ্রমিকদের বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে এবং পরবর্তী মাসগুলোতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে আসে। চলতি বছরের মে মাসের আগে কিছু কারখানা বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে ডিজিটাইজড হয়েছিল, কিছু কারখানা সাময়িক সময়ের জন্য ডিজিটাইজড হয়েছিল এবং কিছু কারখানা কখনোই ডিজিটাইজড পদ্ধতিতে বেতন প্রদান করেনি। সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, চলতি বছরের মে মাসের আগে ডিজিটাইজড পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড-কেন্দ্রিক কারখানাগুলো এগিয়ে ছিল। একইসাথে মে মাসের পর থেকে ডিজিটাইজড পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের হার বৃদ্ধির প্রবণতাও ব্র্যান্ড-কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে তুলনামূলক অনেক বেশি ছিল। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্র্যান্ড-কেন্দ্রিক ৩৭% কারখানা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শ্রমিকদের বেতন প্রদান করত, যেখানে এপ্রিল মাসে ব্র্যান্ড-কেন্দ্রিক নয় এমন ২০% কারখানা শ্রমিকদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন প্রদান করেছে। মে মাসে পোশাক খাত সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ পাওয়ার পর শ্রমিকদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের প্রবণতা বেড়ে ব্র্যান্ড-কেন্দ্রিক কারখানার জন্য হয় ৮৫% এবং ব্র্যান্ড-কেন্দ্রিক নয় এমন প্রতিষ্ঠানর জন্য হয় ৫৭%। ব্র্যান্ড-কেন্দ্রিক কারখানাগুলোর ডিজিটাইজড পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের হার ছিল জুন মাসে ৮৫%, জুলাই মাসে ৮৭%, আগস্ট মাসে ৭৬% এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৭৩%। অপরদিকে ব্র্যান্ড-কেন্দ্রিক নয় এমন কারখানার ক্ষেত্রে ডিজিটাইজড পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের হার জুন মাসে ছিল ৬০%, জুলাই মাসে ছিল ৫৪%, আগস্ট মাসে ছিল ৪৫% এবং সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৪০%। করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য পোশাক খাতে প্রদেয় সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ কারখানাগুলোকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করেছে বলে উঠে এসেছে সমীক্ষায়।  তবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের অনেক সুবিধা যেমন- নগদ অর্থে বেতন প্রদান সংক্রান্ত খরচের উল্লেখযোগ্য হ্রাস, নিরাপত্তার যে ঝুঁকি থাকত তা দূর হওয়া ও বেতন সংগ্রহের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের যে উৎপাদনের সময় অপচয় হতো তা দূর হওয়া সত্ত্বেও কারখানাগুলো পুনরায় নগদ অর্থে বেতন প্রদানের দিকে ফিরে যাচ্ছে। এর একটি ব্যাখ্যা হলো- কারখানাগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের সুবিধাগুলো দ্রুত বুঝতে পারছে না, কারণ অনেক কারখানায় তাদের সম্পূর্ণ বেতন প্রদানের পদ্ধতি নগদ অর্থ থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিবর্তন করেনি।  কারখানাগুলোর নগদ অর্থে বেতন প্রদানের দিকে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি কারণ হলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন গ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিকদের অনীহা। এ ক্ষেত্রে ক্যাশ আউটের চার্জ, লেনদেনের ক্ষেত্রে স্পষ্ট ধারণার অভাব, মোবাইল না থাকা, স্বামীর নামে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট বা ব্যাংক একাউন্ট থাকায় উপার্জিত অর্থ ব্যবস্থাপনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ কমে আসা ইত্যাদি বিষয়কে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন গ্রহণের ক্ষেত্রে অনীহার কারণ হিসেবে শ্রমিকরা চিহ্নিত করছেন।    সানেম এবং এমএফও-র যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এ জরিপগুলো ‘গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ’ শীর্ষক প্রকল্পের অংশ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বৈশ্বিক পোশাক সরবরাহ ও উৎপাদক দেশগুলোতে নিয়োজিত শ্রমিকদের শ্রম ঘণ্টা, আয়, ব্যয় এবং অন্যান্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে নিয়মিত, নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে সরকারি নীতি, শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায় এবং কারখানা ও ব্রান্ডের মাধ্যমে পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here