আগামী ১৫ দিন তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ- এই বিবেচনা করছেন উদ্যোক্তারা। দফায় দফায় রপ্তানির কার্যাদেশ কমে যাওয়া ও রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার পর করোনার টিকার ইতিবাচক ফলের দিকে চেয়ে আছেন তারা। উদ্যোক্তারা মনে করছেন, টিকা শুরু হয়েছে। এই টিকা কার্যকর হলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রপ্তানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এজন্য আগামী ১৫ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইউরোপ আমেরিকায় করোনার দ্বিতীয় অভিঘাত শুরু হলে আবারও কার্যাদেশ কমে যায়। উদ্যোক্তাদের হিসাব অনুযায়ী কার্যাদেশ হ্রাসের হার প্রায় ২০ শতাংশ। ২০২০ সালে করোনার আঘাত শুরু হলে মার্চ এপ্রিল মাসে দেশে স্মরণকালের স্থবির অবস্থা নেমে আসে। স্থগিত ও বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যাদেশ-রপ্তানি। মে মাসে করোনার মধ্যেই কারখানা খুলে দিলে কার্যাদেশ পুনরায় আসা শুরু হয়। এবং দুই মাসের মধ্যেই প্রায় স্বাভাবিক হয় যায়। রপ্তানি আয় আগের স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে অতিক্রম করে যায়। কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ শুরু হলে আবার কার্যাদেশ কমতে শুরু করে। রপ্তানি আয়েও ধাক্কা লাগে।
২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি প্রথম ছয় মাসে পোশাক রপ্তানি করে আয় আসে ১৫ দশমিক ৫৪৬ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক তিন শতাংশ কম। এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ কম। এর মধ্যে ওভেন জাতীয় তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে রপ্তানি কমে ১০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চেয়ে ১৪ শতাংশ কম রপ্তানি হয়। রপ্তানির এ চিত্র তৈরি পোশাক শিল্পের তথা পুরো রপ্তানি আয়ের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি এম এ রহিম ফিরোজ খোলা কাগজকে বলেন, দেশে কার্যাদেশ স্থগিতের হার প্রায় ২০ শতাংশ। ফলে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো আরও একটি ঝুঁকি মোকাবিলা করছে। এই ঝুঁকিকে আরও তীব্র করে তুলেছে ক্রয়াদেশের মূল্য কমে যাওয়া (মার্জিন) ও রপ্তানিমূল্য (পেমেন্ট) পেতে দেরি হওয়া। এর ফলে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। কার্যাদেশ বা পোশাক প্রস্ততকরার পর সময়মতো রপ্তানিমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। আগে রপ্তানি করার সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানিমূল্য পাওয়া যেত। এখন পেমেন্ট পেতে দুই মাস থেকে তিন মাস পর্যন্ত দেরি হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন করে কবে পেমেন্ট আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে করোনার অভিঘাত মোকাবিলার করার পরবর্তী পরিস্থিতি এসে যাচ্ছি বলে মনে হলে ঝুঁকিগুলো সঙ্গেই থাকছে।
তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউরোপ আমেরিকায় দ্বিতীয় ঢেউ লাগার ফলে দ্বিতীয়বার কার্যাদেশ কমেছে। এ হ্রাসের হার প্রায় ২০ শতাংশ। তবে নতুন করে আর কমছে না। আমরা আশা করেছিলাম ইউরোপ-আমেরিকায় করোনার টিকা শুরু হলে মানুষের মনে সাহস আসবে। মানুষ কেনাকাটা শুরু করবে। এর প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে। স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাব। কিন্তু করোনার তৃতীয় ওয়েব, নতুন ধরনের করোনার অস্তিত্ব ধরা পড়া ও করোনার টিকার ফল পুরোপুরি দৃশ্যমান না হওয়ার কারণে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে যেতে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এম এ রহিম ফিরোজ বলেন, আমাদের সম্ভাবনাগুলো কতটা কাজে তা দেখার জন্য আরও কমপক্ষে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। প্রথমত করোনার টিকা কতটা সফল হচ্ছে তা দেখার জন্য ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। টিকার ফলাফল ইতিবাচক ও নতুন-পুরাতন করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে টিকা কার্যকর হলে আমরা দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াব। দ্বিতীয়ত, হলো যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন কেন্দ্রিক যে সহিংসতা ও অনিশ্চয়তা হয়েছে, ২০ তারিখে ক্ষমতা হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে যদি পরিস্থিতি অশান্ত না হয় তাহলে কার্যাদেশের অনিশ্চয়তাগুলো কেটে যাবে।
দ্বিতীয় দফায় কার্যাদেশে কোপ লাগায় বেশ কিছু কারখানাকে আবারও পুরোপুরি বা আংশিক লে-অপে যেতে হয়েছে। কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বেশ কিছু কারখানায় কার্যাদেশ থাকার পরও সময়মতো রপ্তানিমূল্য না আসার কারণে শ্রমিকদের সময়মতো বেতন দিতে পারেনি। এর ফলে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। মিরপুর, সাভার, টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেড এ ধরনের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রণোদনার কিস্তি দেওয়া শুরুর সময় বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়েছে। নিট তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা আরও এক ধাপ এগিয়ে ২০২০ সালের শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট না দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এর ফলে শ্রমিকদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে।