বিশ্ব পোশাকের বাজারে বরাবরই চালকের আসনে বায়ার ও ব্র্যান্ডগুলো। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্রয়াদেশ বাতিল, অন্যত্র স্থানান্তর কিংবা অর্থ পরিশোধে বিলম্ব করে। এমনকি বিভিন্ন শর্ত দেখিয়ে কখনো কখনো অর্থ পরিশোধ না করার কথাও শোনা যায়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন রপ্তানিকারকরা। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের অনৈতিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে (আনএথিকাল বায়িং প্র্যাকটিস) একজোট হয়েছে এশিয়ার ছয়টি দেশের ৯ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি। বিশ্বের শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন ছাড়াও বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের পোশাক ও টেক্সটাইলপণ্য রপ্তানিকারক সমিতিগুলোর সমন্বয়ে এ জোট গঠিত হয়েছে। সম্মিলিতভাবে বিশ্ববাজারের রপ্তানিকৃত পোশাকের ৬০ শতাংশই রপ্তানি করে এসব দেশের রপ্তানিকারকরা। এর নাম দেওয়া হয়েছে সাসটেইনেবল টেক্সটাইল অব দ্য এশিয়ান রিজিয়ন বা স্টার নেটওয়ার্ক। এ ধরনের একটি প্ল্যাটফরম আগেই গঠিত হলেও গত ১২ জানুয়ারি এ জোট নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মুখপাত্র নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মিরান আলী। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্টার নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, পণ্য পাঠানো (বায়ারের কাছে) এবং অর্থ পরিশোধ পদ্ধতিতে একটি একক অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে পণ্য উত্পাদনকারীদের একজোট হওয়া দরকার, যাতে পারচেজিং প্র্যাকটিসের উন্নয়নে শক্ত অবস্থান থাকে। এই জোটে যুক্ত সংগঠনগুলো হলো— বাংলাদেশের পোশাকশিল্প মালিকদের দুইটি সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ, চায়না ন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল কাউন্সিল (সিএনটিএসি), দ্য গার্মেন্ট ম্যানুফেচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কম্বোডিয়া (জিএমএসি), মিয়ানমার গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমজিএমএ), পাকিস্তান হোসিয়ারি ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিএইচএমএ), পাকিস্তান টেক্সটাইল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিটিইএ), টাওয়েল ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তান (টিএমএ) এবং ভিয়েতনাম টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ভিআইটিএএস)। স্টার নেটওয়ার্কের মুখপাত্র মিরান আলী ইত্তেফাককে বলেন, এই জোটের উদ্দেশ্য হলো— পণ্য ক্রয় কার্যক্রমে ক্রেতাদের নৈতিকতার মধ্যে আনতে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করা। অনেক সময় পণ্য পাঠানো, অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্রেতা অনৈতিক দাবি করে থাকেন। এ অনৈতিক দাবি না মানলে তারা অন্য দেশে ক্রয়াদেশ নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। এই জোট শক্তিশালী হলে এ ধরনের অনৈতিক চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা সতর্ক হবেন বলে আশা করছি। সম্প্রতি করোনার সময়ও অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন শর্তের দোহাই দিয়ে ঢালাওভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন। অনেকে বিপুল পরিমাণ ডিসকাউন্ট দাবি করেছেন কিংবা অর্থ পরিশোধ ইচ্ছামাফিক পিছিয়ে দিয়েছেন। এতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ জোটকে শক্তিশালী করার তাগিদ অনুভব করেন রপ্তানিকারকরা।