দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস তৈরি পোশাক শিল্প খাত মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে বলে আশংঙ্কা প্রকাশ করেছেন তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক। যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ ও প্রস্থান নীতি না থাকা, পশ্চিমা ক্রেতাদের দেউলিয়া হওয়া এবং নির্দয়ভাবে ক্রয়াদেশ বাতিলের কারণে এই শিল্প অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে তিনি এসব কথা বলেন। করোনাকালে প্রণোদনা তহবিল থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের জন্য ঋণ দিয়েছিল ব্যাংকগুলো। ওই ঋণের মাসিক কিস্তি পরিশোধে বাণিজ্যিক ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে কারণে ব্যাংকগুলো ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে দিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিতে শুরু করেছে। চিঠিতে চলমান করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে পোশাক খাতে সৃষ্ট সংকট নিয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং ব্যাংক থেকে নেয়া ওই ঋণের টাকা ফেরত না দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন রুবানা হক। তিনি বলেন, শিল্প আজ সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ এমনকি প্রস্থান নীতি না থাকায়, পশ্চিমা ক্রেতাদের দেওলিয়াত্ব বরণ, নির্দয়হীনভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল এবং ফোর্স মেজার্স ক্লোজেজ-এর কারণে এই শিল্প চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কারখানাগুলো টালমাটাল পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে। রুবানা হক বলেন, শিল্প ভালো করছে ও সরকারের কাছ থেকে সব সহযোগিতা পাচ্ছে, অনেকে এমন ধারণা পোষণ করছেন। সেটির প্রকৃত মূল্যায়ন হওয়া অন্তত জরুরি। করোনায় রপ্তানিতে কী প্রভাব পড়েছে? তার বিবরণ দিয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউনের প্রভাবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রি ও চাহিদার ওপর কী প্রভাব ফেলছে, সেটি সমগ্র বিশ্ব দেখছে। বড়দিনের বিক্রিতে স্মরণকালের মন্দা গেছে। এসব কারণে সেপ্টেম্বর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে ৫ শতাংশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় আমরা বিপর্যস্ত। করোনার টিকার প্রাপ্যতা এখনও নিশ্চিত হয়নি। আমাদের শঙ্কা, পোশাক রপ্তানির নিম্নমুখী প্রবণতা আগামী এপ্রিল পর্যন্ত থাকতে পারে। এই খাতের প্রকৃত অবস্থা বোঝাতে রুবানা হক পোশাক রপ্তানি হ্রাসের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২০ সালের জুনের পর ওভেন পোশাকের রপ্তানি খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়েছে। ডিসেম্বরে ওভেন পোশাকের রপ্তানি কমেছে ১৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। সেই তুলনায় নিট পোশাকের রপ্তানি স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। ডিসেম্বরে নিটের রপ্তানি কমেছে দশমিক ৪৫ শতাংশ। ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত চেয়ে ওই খোলা চিঠিতে এই পোশাক শিল্প উদ্যেক্তা বলেন, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে তৈরি পোশাক শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্ততপক্ষে ৬ মাসের জন্য স্থগিত অথবা ঋণের অর্থ পরিশোধে অতিরিক্ত এক বছর সময় বাড়ানো না হলে, এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা দুরূহ হবে। বর্তমানে প্রণোদনার ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২ বছর। এর মধ্যে প্রথম ৬ মাস কিস্তি দিতে হয়নি, যা ইতোমধ্যে পার হয়েছে। করোনার কারণে গত মার্চে পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় মালিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে সরকার রপ্তানিমুখী শ্রমিকদের মজুরি দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। পরে সেই তহবিলের আকার বেড়ে ৯ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা দাঁড়ায়। সেই তহবিল থেকে ঋণ পেয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৮০০ কারখানার মালিক। প্রথম ৩ মাসের জন্য ২ শতাংশ ও চতুর্থ মাসের জন্য সাড়ে ৪ শতাংশ সেবা মাশুল দিতে হবে তাদের। বিজিএমইএ গত মাসে সংবাদ সম্মেলন করে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের অর্থ পরিশোধে ২ বছরের পরিবর্তে ৫ বছর সময় দাবি করেছে। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধে ৬ মাসের গ্রেড পিরিয়ডকে ১২ মাসে উন্নীত করার দাবিও জানিয়েছিল সংগঠনটি।