করোনাভাইরাস মহামারীর অভিঘাতে তৈরি পোশাক রপ্তানি এবং রেমিটেন্স কমে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব ব্যাংক।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুকের’ জানুয়ারি সংখ্যায় এই ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক ও রেমিটেন্স। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা লেগেছে এই খাতে। আর রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। দেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশের মতো অবদান রাখে বিদেশে থাকা ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ । বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বো হয়েছে, মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে তৈরি পোশাকের চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। “প্রবৃদ্ধির জন্য বাহ্যিক উৎসের উপর নির্ভরশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হবে দুর্বল। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের কারণে বাংলাদেশে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দুর্বল থাকবে।” মহামারীকালে বাংলাদেশের রেমিটেন্সের গতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে প্রবাসী আয়ে যে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তার কারণ হলো- বৈধ পথে অর্থ পাঠানো বৃদ্ধি, সরকারের প্রণোদনা এবং অভিবাসী কর্মীদের জমানো টাকাসহ দেশে ফিরে আসা। তবে উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার খুব শ্লথ হওয়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে নতুন করে মহামারীর প্রকোপ বাড়ার কারণে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশসহ রেমিটেন্সনির্ভর দেশগুলোর ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, মহামারী থেকে দীর্ঘমেয়াদী পুনরুদ্ধারের অর্থনৈতিক পরিণতি হিসেবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে আভ্যন্তরীণ ব্যাংক খাতের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে। এর ফলে দেউলিয়াত্ব বাড়ার পাশাপাশি ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের ব্যালান্স শিট দুর্বল হতে পারে। এছাড়া চরম আবহাওয়ার প্রভাবও আঞ্চলিক ঝুঁকি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, মহামারীর কারণে গত বছর বিশ্ব অর্থনীতি শেষ পর্যন্ত ৪ দশমিক ৩ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হয়েছে। তবে ২০২১ সালে তা ৪ শতাংশ হারে বাড়তে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে উৎপাদনের ক্ষতি গভীর হয়েছে বলে দক্ষিণ এশিয়ায় দারিদ্র্য ও বেকারত্ব ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে মহামারী ও দেশজুড়ে লকডাউনের প্রভাবে ২০২০ সালে এই অঞ্চলের উৎপাদন ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হয়ে থাকতে পারে।