করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে চট্টগ্রামে ২২ হাজার পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন বলে ‘বিলস লেবার রিসোর্স অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার’ নামের একটি সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বুধবার চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটির পক্ষ থেকে মহামারীর সময়ে বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের দুর্দশার তথ্য তুলে ধরেন বিভিন্ন শ্রমিক নেতারা। ১৩টি শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত বিলস লেবার রিসোর্স অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার বিভিন্ন শ্রমিকদের আইনি এবং বিভিন্ন সহায়তা দেয়। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি তপন দত্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, করোনাভাইরাসের তাণ্ডব নতুন বছরেও চলমান আছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভাইরাসটির প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান। দেশে স্বল্প দিনের লকড ডাউনের সুযোগ নিয়ে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি পোশাক খাতে শ্রমিকদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। তিনি জানান, শুধু চট্টগ্রামেই ৪৭টি পোশাক কারখানায় ২২ হাজার শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। যারা শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। আর যারা চাকরি করছেন তাদের বেতন দেওয়া হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ। তপন দত্ত বলেন, মহামারীর প্রথম দিকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানির আদেশ কমলেও পরিস্থিতির উন্নতিতে তা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পুনরায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি আদেশ কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। “কোভিড-১৯ সংক্রমণের অজুহাতে গার্মেন্টস মালিকরা দুই ও চার শতাংশ সুদে দুই দফায় ১০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা পেয়েছে। তবুও আইনসঙ্গত পাওনা না দিয়ে তারা শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। আবার এখন তারা বায়না ধরেছে শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি পাঁচ শতাংশ স্থগিত রাখার জন্য।” সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইএলওএর হিসাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণে বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় সাত লাখ শ্রমিক চাকুরিচ্যুত হয়েছেন। যাদের জীবন চলে স্বল্প মজুরির চাকরির ওপর। এছাড়াও স্বাস্থ্য খাতের শ্রমিকরা আংশিক, হোটেল, পরিবহন শ্রমিক, দোকান কর্মচারি নির্মাণ শ্রমিক, গৃহ শ্রমিক, কমিউনিটি সেন্টার ও ডেকোরেশন শ্রমিকসহ বহু শ্রমিক পুরোপুরি আয় শূন্য ছিল। কর্মহীন লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। কর্মহীন হওয়ার ফলে দারিদ্র্য বেড়েছে ১৯ শতাংশ ও দরিদ্র জনসংখ্যা বেড়েছে ২৪ শতাংশ। এদিকে মহামারীর মধ্যে পাটকল, চিনিকল বন্ধ হয়ে এসব খাতের অন্তত ৫০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন বলেও জানান শ্রমিক নেতা তপন দত্ত। মহামারীতে দেশের প্রত্যেকটি খাতে প্রভাব পড়লেও কৃষিতে কাজ অব্যাহত ছিল উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে তপন বলেন, “করোনা ভয় দূর করে কৃষি শ্রমিকরা ফসল ফলিয়েছে। কিন্তু কৃষি পণ্য নিয়ে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের নায্য দাম পায়না। “আবার সাধারণ ভোক্তারাও সস্তা মূল্যে কৃষিপণ্য পাচ্ছে না। কখনও পেঁয়াজ, কখনও চাল, আবার ভোজ্য তেল ও মসলা নিয়ে সিন্ডিকেট করে অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা করছে।” সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শ্রমিক নেতারা দেশের প্রচলিত শ্রম আইন ও আদালতের অবস্থা নিয়েও কথা বলেন। বিলস লেবার রিসোর্স অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান, লকডাউনের শুরুতে চট্টগ্রামের শ্রম আদালতের কার্যক্রম বন্ধ করা হলেও এখনও তা চালু হয়নি। দুইটি আদালতের একটিতেও এখনও বিচার কাজ চলছে না।যার কারণে শ্রমিকরা আইনি প্রতিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংস্থাটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শফর আলী বলেন, শ্রম আদালতের বিচারকরা জেলা জজ পদমর্যাদার হয়। শ্রম আদালতে কেউ নায্য বিচার না পেলে আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারেন। “কিন্তু কারখানা মালিকরা আপিল ট্রাইবুন্যালের রায় নিয়ে উচ্চ আদালতে যাচ্ছে। যার কারণে কোনো শ্রমিক মামলা করে তার রায় আর দেখে যেতে পারে না।” শ্রম আদালতের আপিল ট্রাইবুন্যালে পাওয়া রায় নিয়ে কেউ যেন উচ্চ আদালতে যেতে না পারে সেজন্য আইন করারও দাবি জানান তিনি।