সামগ্রিকভাবে পোশাক খাতের জন্য যে প্রণোদনা প্যাকেজ রয়েছে, তা থেকে ৭০ শতাংশ কারখানার চাহিদা পূরণ হচ্ছে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্য নয়, এমন প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য ছোট কারখানা মিলিয়ে বাকি ৩০ শতাংশ কারখানা প্রণোদনার বাইরে থাকছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের কারখানাগুলো বেশি বিপদে আছে। তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। পাশাপাশি ছোট কারখানাগুলোর জন্য প্যাকেজ থেকে ঋণ নেওয়ার পদ্ধতি সহজ করতে হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) যৌথভাবে পরিচালিত ‘কোভিড মহামারির কারণে পোশাক খাতের নাজুক পরিস্থিতি, ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা ও পুনরুদ্ধার: মাঠপর্যায়ের জরিপ থেকে যা পাওয়া গেল’ শীর্ষক এক জরিপ প্রবন্ধে এসব সুপারিশ ওঠে এসেছে। গতকাল শনিবার ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে এই প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানে সিপিডির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, পোশাক খাতের সমূহ বিপদ রক্ষায় সমন্বিত বিমা কর্মসূচি গ্রহণের সময় এখন। সরকার, ক্রেতা, দাতা সংস্থাসহ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সমন্বয়েই নিতে হবে এই কর্মসূচি। এমআইবির প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আক্তার। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সম্মানিত অতিথি ছিলেন। এতে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন স্বাগত বক্তব্য দেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্টের (সিইডি) উপদেষ্টা রহিম বি তালুকদার সমাপনী বক্তব্য দেন। জরিপটি করা হয় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ছোট, মাঝারি ও বড় মিলিয়ে ৬১০টি কারখানার ওপর। এর মধ্যে ছোট কারখানা ৫৪ শতাংশ, মাঝারি কারখানা ৪০ শতাংশ ও বড় কারখানা ৬ শতাংশ। জরিপে অংশ নেওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ৮২ শতাংশ, বাকি ১৮ শতাংশ বিজিএমইএর সদস্য নয়। জরিপে উঠে আসে, বিদেশি ক্রেতারা ৩৩ শতাংশ ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন। ১৬ শতাংশ জানান, ক্রেতারা মূল্য কমিয়ে দিয়েছেন। ৭৫ শতাংশ জানান, ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল। আর ২৩ শতাংশ জবাব দেন, যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। নতুন কাজের সুযোগও তৈরি হওয়ার কথা বলেন মাত্র ৪ শতাংশ। আর ৬০ শতাংশ জানান, মহামারির সময়ে শ্রমিকের মজুরি কমে গেছে। পোশাক কারখানাগুলো মাস্ক পরা, তাপমাত্রা মাপা এবং স্যানিটাইজারের ব্যবহারের নিয়মকানুন শুরু থেকে মেনে চললেও জরিপে অংশ নেওয়া ১৩ শতাংশের জবাব হচ্ছে, কোনো কিছুই তাঁরা আর মানছেন না। টেকসই পোশাক খাতের জন্য আরও কিছু বিষয়ে জোর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রবন্ধে। এগুলো হচ্ছে গুটি কয় বিদেশি ক্রেতা ও ব্র্যান্ডনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা, বিজিএমইএ এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, কারখানার আর্থিক ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা ইত্যাদি। পোশাক কারখানাবান্ধব রাজস্বনীতি প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, শ্রমিকদের মজুরি মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আক্তার বলেন, যে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, তা ব্যবহারের তদারক ব্যবস্থা দুর্বল। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এ কে এনামুল হক পোশাক খাতকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে বিমা কর্মসূচি চালুর পক্ষে মত দেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সলিডারিটির সমন্বয়ক তাসলিমা আক্তার বলেন, লাভের বড় অংশ বিদেশি ক্রেতারা নিয়ে যাবেন, কিন্তু শ্রমিকদের জীবন-মান ও নিরাপত্তায় তাঁরা কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না, এটা কোনো কথা হতে পারে না। বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সুইডেনের এক ক্রেতা ১৩ লাখ ডলারের একটি আদেশ দেওয়ার পর সুতার দাম বেড়েছে ২ লাখ ডলার। জানানো হলেও কোম্পানিটি দাম একটুও বাড়াতে চায়নি।