চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন চারটি গুদাম থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের বিপুল রপ্তানি পণ্য ও কাঁচামাল জব্দ করেছে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট। চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ও ইপিজেডে তৈরি এসব পণ্য রপ্তানি না করে অবৈধভাবে এসব গুদামে মজুদ করা হয়েছিল। আর সেগুলো চট্টগ্রামের টেরিবাজার, হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন শপিং মলে সরবরাহ করা হচ্ছিল। অথচ বন্ডের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা কাঁচামালে তৈরি এসব পণ্য শতভাগ রপ্তানির বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট গত শুক্রবার সকালে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে ট্রাকসহ পণ্য আটক করে। পরে চারটি গুদামের পণ্য জব্দ করা হয়। অভিযানের পর গাঢাকা দিয়েছেন গুদাম মালিক ইউসুফ হোসেন সওদাগর। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ হোসেনের অনুপস্থিতিতেই পণ্যের কায়িক পরীক্ষা শুরু হয়।
নগরীর কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় এই অভিযানে নেতৃত্ব দেয় অতিরিক্ত কমিশনার মাহফুজুল হক ভূঞা, উপকমিশনার তপন কুমার চক্রবর্তীসহ চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের প্রিভেন্টিভ টিম। বন্ড কর্মকর্তারা বলছেন, গুদামে মজুদ করা পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাকের শুল্কহার ১২৭ শতাংশ এবং সুইং থ্রেডের শুল্কহার ৬১ শতাংশ। সে হিসাবে এখানে পাওয়া পণ্যের দাম শুল্কসহ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, কালুরঘাটে ব্যক্তিমালিকানাধীন চারটি গুদামে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক শিল্পের পণ্য পাওয়া গেছে। জব্দ এসব পণ্য বন্ড সুবিধায় আমদানি করা। গুদাম মালিক ইউসুফ হোসেনের কোনো বন্ড লাইসেন্স নেই। ওই সব গুদামেরও কোনো বন্ড লাইসেন্স নেই।
জানা গেছে, কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে নিজের একাধিক গুদামে এবং অন্যের গুদাম ভাড়া নিয়ে বন্ড সুবিধায় আনা কাঁচামাল ও রপ্তানি পোশাক পণ্য অবৈধভাবে মজুদ করেন হাজি ইউসুফ হোসেন। পরে ট্রাকে করে সেগুলো চট্টগ্রামের বড় পাইকারি মার্কেট, বিশেষ করে টেরিবাজার, হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতেন তিনি। কাস্টমস ও বন্ড অফিসে এ ধরনের নানা অভিযোগ এলেও এত দিন কোনো অভিযান চলেনি। কমিশনার হিসেবে এ কে এম মাহবুবুর রহমান যোগদানের পর এই প্রথম অভিযান চলে।
বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার সকালে অভিযানের সময় গুদামের সামনেই তৈরি পোশাক শিল্পের পণ্যভর্তি একটি ট্রাক (চট্ট মেট্রো-অ-১১-১১২০) চালকসহ আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে চালক জানান, জব্দ করা গাড়িটিতে কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত গুদাম থেকে পণ্য বোঝাই করা হয়েছে। পরে গুদামের নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে নম্বর নিয়ে গুদাম মালিক ইউসুফ হোসেনকে ফোন দেন বন্ড কর্মকর্তারা। ইউসুফ আধাঘণ্টার মধ্যে গুদামে আসার কথা বলে নানা অজুহাতে অভিযান টিমকে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। এক পর্যায়ে ফোন বন্ধ করে দেন তিনি। এরপর ইউসুফ সওদাগর কলোনির কয়েকজন ভাড়াটিয়ার উপস্থিতিতে চারটি গুদাম খুলে বিপুল পরিমাণ রপ্তানি পণ্য এবং বন্ড সুবিধায় আনা কাঁচামাল জব্দ করা হয়।