সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তরণের কার্যক্রম শুরু করবে। যদিও করোনা সংক্রমণের কারণে কোনো কোনো মহল থেকে উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তরণের প্রক্রিয়া আরও কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। কারণ, উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তরণ ঘটলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ বেশকিছু সুবিধা হারাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলতি অর্থবছর থেকেই উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের কার্যক্রম শুরু হবে বলে মনে হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয়েছিল, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়ে অনেকটাই কম হতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ খুব সহজেই যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারে। কাজেই বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তরণ খুব একটা কঠিন হবে না। কিন্তু সমস্যা দেখা দেবে অন্যত্র। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতি একই ছাতার নিচে অবস্থান করছে। কোনো একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হলে তার প্রভাব কম-বেশি অন্য দেশের ওপরও পড়ে। করোনার কারণে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা রপ্তানি মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে পণ্য ও সেবা রপ্তানি খাত। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জনশক্তি রপ্তানি খাত। করোনার কারণে এ দুটি খাত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনা সংক্রমণের সময়ও চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জনশক্তি রপ্তানি খাতের আয় রেকর্ড সৃষ্টি করলেও এটি আগামীতে অব্যাহত থাকবে বলে মনে হয় না। সবচেয়ে বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে পণ্য ও সেবা রপ্তানি খাতটি। ইতোমধ্যে পণ্য ও সেবা রপ্তানি খাতের আয় অস্বাভাবিক কমে গেছে। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণভাবে পণ্য ও সেবা উৎপাদন কমেছে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি শঙ্কার সৃষ্টি করেছে অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোক্তাদের ভোগব্যয় করার সামর্থ্য ও প্রবণতা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা রপ্তানি খাত এখনো শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি। যদিও এই খাত থেকেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় মূলত কিছু দেশ ও অঞ্চলের দেওয়া বিশেষ বাণিজ্যিক সুবিধার ওপর নির্ভর করে টিকে আছে। বাংলাদেশ প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে, তার ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয়। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা প্রদান করত। পরে কোটা সুবিধা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা প্রদান করত। কিন্তু সেটিও এখন বন্ধ রয়েছে। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আমলে পুনরায় জিএসপি সুবিধা পাওয়া যাবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পরিবর্তন হলেও তাদের আন্তর্জাতিক নীতি খুব একটা পরিবর্তিত হয় না। তাই আমাদের এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করতে হবে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত জিএসপি সুবিধা দিয়ে আসছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক সামগ্রীর সাফল্যের কারণ মূলত এটিই। কিন্তু বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উন্নীত হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া জিএসপি সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও তারা বলছে, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও বাংলাদেশকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা দেওয়া হবে। এরপর বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া জিএসপি সুবিধা হারাবে। তবে সেই সময় বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের সঙ্গে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাবে। তবে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে হলে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নসহ যেসব শর্ত পরিপালন করতে হবে, বাংলাদেশের পক্ষে তা হয়তো সম্ভব হবে না। কাজেই আগামীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্য অধরাই থেকে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার করোনার কারণে অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ভোগব্যয় অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। ফলে আগামীতে স্বাভাবিক অবস্থায় পণ্য রপ্তানি বাড়ানো বাংলাদেশের জন্য কঠিনই হবে। এদিকে আরও একটি দুঃসংবাদ আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক সামগ্রীর সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী হচ্ছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কয়েক বছর আগে তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ১০ বছর মেয়াদি একটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো, তারা ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনাকালে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে অতিক্রম করে যাবে। ভিয়েতনাম গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে জিএসপি সুবিধা লাভ করেছে। আগে তারা এই সুবিধা পেত না। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে তারা বাংলাদেশি তৈরি পোশাক সামগ্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতার কুলিয়ে উঠতে পারত না। কারণ, তাদেরকে তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য ১২ শতাংশের মতো ট্যাক্স প্রদান করতে হতো। এখন ভিয়েতনাম ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার ফলে ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশের বাজারে তাদের পণ্য রপ্তানিতে কোনো কর দিতে হবে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা ২০২৭ সালের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। এই অবস্থায় বিকল্প বাজার খোঁজাও আমাদের জন্য খুব একটা সহজ কাজ হবে না। ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে, ভিয়েতনাম তাদের অধিকাংশ রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে। ফলে রপ্তানি আয় থেকে তাদের জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশ বেশিরভাগ রপ্তানি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক উৎপাদনে যে কাঁচামাল ব্যবহার করে; তার অধিকাংশই আমদানিনির্ভর। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ের ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশই কাঁচামাল আমদানিতে চলে যায়। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে এই খাতের মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে কম। এ ছাড়া আরও একটি সমস্যা অর্থনীতিবিদদের ভাবিয়ে তুলেছে; তা হলো, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়া। নৈতিকতার চরম অবক্ষয়ের কারণেই এমনটি হচ্ছে। সাধারণভাবে মনে করা হয়, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৬৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটি কোনোভাবেই অর্থ পাচারের পূর্ণাঙ্গ হিসাব নয়। মুদ্রা পাচারের পরিমাণ এর চেয়ে আরও অনেক বেশি। কারণ, যারা অর্থ পাচার করে, তারা কোনোভাবেই তার পরিমাণ প্রকাশ করে না। তাই এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যেতে পারে যে, পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি (জিএফআই) তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে মোট ৬১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য অর্থ পাচার হয়েছে। পাচারকৃত এই অর্থের পরিমাণ ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ। একই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিসইনভয়েসিং-এর মাধ্যমে প্রতিবছর গড়ে ৭ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। এটি বর্ণিত সময়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মোট আয়ের ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। কিছুদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন, কানাডায় যেসব ব্যক্তি বাড়ি ক্রয় করেছেন; তাদের ২৮ জনের মধ্যে ২৪ জনই সরকারি কর্মকর্তা। একজন সরকারি কর্মকর্তা যে বেতন-ভাতা পান, তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হলেও সঞ্চয় করা খুবই কঠিন। তাই একজন সরকারি কর্মকর্তা যখন বিদেশে কোটি কোটি ডলার খরচ করে বাড়ি ক্রয় করেন, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, তার এই অর্থ কীভাবে উপার্জিত হয়েছে। কিন্তু আমরা কি তাদের অবৈধ আয়ের রাস্তা বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ কখনো নিয়েছি? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন গাড়িচালক আব্দুল মালেক যখন কয়েক শত কোটি টাকার মালিক হন, তখন তার আয়ের উৎস সম্পর্কে কি আমরা কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেছি? আব্দুল মালেক গ্রেপ্তার হয়েছেন; কিন্তু তিনি যে কর্মকর্তার গাড়ি চালাতেন, তার তো কিছুই হলো না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা ছাড়া আব্দুল মালেকের পক্ষে কি অবৈধ কয়েকশ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব ছিল? ৪১ হাজার মার্কিন ডলারের হিসাব না মেলায় অস্ট্রেলিয়ার একজন অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন কিছুদিন আগে। আমাদের দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কি এ ধরনের দুঃসাহস দেখাতে পারবেন? গত বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা উল্লেখ করেছিল, গত ১০ বছরে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অবৈধ সঞ্চয়ের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশিদের সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ১৫৬ শতাংশ। বর্তমানে জমার পরিমাণ পাঁচ হাজার ৩৮৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এটি শুধু সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের হিসাব। অন্যান্য দেশের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ যোগ করলে এটি কতটা স্ফীত হবে, তা ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। অথচ বর্ণিত সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি না পেয়ে বরং কমেছে। এই যে অর্থ পাচার হচ্ছে, এর বেশিরভাগই পাচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে। গত ২৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কয়েকজন ক্ষুব্ধ সংসদ সদস্য জানতে চেয়েছেন: অর্থ পাচারকারী এসব লুটেরা কারা? তাদের কী পরিচয়? তারা কি দলে, নাকি সরকারে, নাকি সরকারের আশপাশে? তারা আরও বলেন, সরকারপ্রধান হিসাবে জননেত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নিরলস চেষ্টা করে গেলেও কিছু মানুষ তার সেই প্রচেষ্টায় নানাভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করে চলেছেন। একজন সংসদ সদস্য দেশের আর্থিক খাতকে পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেন, কোনোভাবেই আর্থিক খাতকে সঠিক পথে আনা যাচ্ছে না। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম জানতে চান: কারা এই অর্থ পাচারকারী? রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি আয়ের তথ্যে গরমিলের অভিযোগ উত্থাপন করে তিনি বলেন, এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ৫ বছরের রপ্তানি আয়ের তথ্যে যে গরমিল ধরা পড়েছে; তা দিয়ে অন্তত ৬টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, গত ৫ বছরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই আয়ের পরিমাণ ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, এ দুটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার হিসাবের গরমিল হচ্ছে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় গেল? বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, লুটের এক টেক্সটবুক এক্সাম্পল হচ্ছে বাংলাদেশ। লুটের টাকার একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে সেকেন্ড হোম। গত এক যুগের জানা-অজানা লুটের ফসল হচ্ছে বাংলাদেশে কোটিপতির বাম্পার ফলন। তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৪৯২ জন। ২০২০ সালে এসে তা ৮৭ হাজার ৪৮৮ জনে উন্নীত হয়েছে। এর বাইরে আরও অনেক কোটিপতি আছেন। বিশ্বে ২৫০ কোটি টাকার বেশি অতি ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সবার শীর্ষে; অর্থাৎ এক নম্বরে। আর সাধারণ ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। সম্প্রতি একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনার সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অবশ্য সরকারের দুজন মন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে এই গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিত্তবানের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে নিয়ামক ভূমিকা পালন করছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি। কোনোভাবেই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ লাভ করা যাচ্ছে না। আগামীতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমাদের সংকট মোকাবিলা করতে হবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন হচ্ছে, তার পুরোটা যাতে দেশে আসে; কোনোভাবেই যেন তা বিদেশে থেকে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এম এ খালেক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিষয়ক কলাম লেখক