করোনায় গত বছরটি দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে চীনা রপ্তানিকারকদের। মহামারির ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাঁদের তৈরি পোশাক রপ্তানি অর্ধেকের মতো কমে গিয়েছিল। সেই দুঃস্বপ্ন এখনো পিছু ছাড়েনি। চলতি বছরের প্রথম মাসেও গা ঝাড়া দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি তাঁরা, যদিও দুনিয়াজুড়ে করোনা সংকট অনেকটাই সহনীয় হয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলতি ২০২১ সালের প্রথম মাস, অর্থাৎ জানুয়ারিতে ১২৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে চীন। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ কম। গত বছরের জানুয়ারিতে রপ্তানি করেছিল ১৬১ কোটি ডলারের পোশাক। সেই রপ্তানি তার আগের ২০১৯ সালের জানুয়ারির চেয়ে ৩৬ শতাংশ কম ছিল। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি কমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকার কারণেই মূলত পোশাক রপ্তানি কমছে। বছরের প্রথম মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা মোট ৫৫২ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছেন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। গত বছরের জানুয়ারিতে ৬৭৬ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছিলেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) চলতি সপ্তাহে এসব হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ ছয় রপ্তানিকারক দেশই ব্যবসা হারিয়েছে। কিন্তু চীনের মতো দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা সবার নয়। যেমন বাংলাদেশ খুব একটা খারাপ করেনি। রপ্তানি হ্রাসে শীর্ষ সাতের মধ্যে নিচের দিক থেকে সর্বশেষ মেক্সিকোর ওপরে আছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ, রপ্তানি কমায় বাংলাদেশ ৬ নম্বর অবস্থানে রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৫২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রয়াদেশ হারায় চীন। এই ক্রয়াদেশের একটি অংশ বাংলাদেশে আসতে থাকে। তাতে ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরও শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। জানুয়ারিতে ৬২ কোটি ডলার রপ্তানির বিপরীতে প্রবৃদ্ধি হয় ১৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি হয় ১১ শতাংশ। করোনার কোপে মার্চ থেকে রপ্তানিতে ধস নামে। বছরের শেষ দিকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সামগ্রিকভাবে রপ্তানি কমেছে ১১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ৫২৩ কোটি ডলার। তবে রপ্তানি কমলেও বাজারটিতে বাংলাদেশের হিস্যা বেড়েছে। ২০১৯ সালে যেখানে হিস্যা ছিল ৭ শতাংশের কাছাকাছি, সেখানে তা বেড়ে এখন ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ হয়েছে। গত জানুয়ারিতেও হারটি বজায় আছে। জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার টিকা ব্যাপক হারে নিচ্ছেন মার্কিনরা। ধীরে ধীরে মহামারি আকারে দেখা দেওয়া ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসছে। আশা করছি, চলতি মার্চের শেষ দিকে ক্রেতারা ভালো ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করবেন।’