ভোর হলেই লাখো নারীর পদভারে মুখরিত হয় নগরী। এ যেন নারীর অগ্রযাত্রার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। শীত-বর্ষা কিংবা প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে কারখানার চাকা সচল রেখে চলেছেন নারীরা। পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন খাত থেকে রফতানি আয় ঘরে আনার পাশাপাশি কৃষিপণ্য উৎপাদনেও সমানভাবে অবদান রেখে চলেছেন। ১৯৭১ সালে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ছিল যেখানে মাত্র ১০ ভাগ, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর তা হয়েছে ৩৬ ভাগ। অর্থাত্ বেড়েছে ২৬ শতাংশ। কৃষি, তৈরি পোশাক, ব্যাংক, অফিস-আদালতসহ কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন প্রায় ৩৬ ভাগ নারী। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যে তিনটি খাত বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে, তার সবগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। যদিও কুসংস্কার, সামাজিক বিধিনিষেধ আর নিরাপত্তাহীনতা নারীর অগ্রযাত্রায় পাহাড়সমান বাধা হিসেবে কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাকি ৬৪ ভাগ নারী কিন্তু শ্রমবাজারে নেই। তারা কোনোভাবেই কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত নন। তারা কাজও খুঁজছেন না। নারীদের একটা বড় অংশ শ্রমবাজারে আসতে পারছেন না। হয়তো তার শিক্ষা নেই, কিংবা পুঁজি নেই। কারণ এ সমাজে একটা অবিবাহিত ছেলে তার পরিবার থেকে পুঁজি পায়, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একটা অবিবাহিত মেয়েকে তার অভিভাবক ব্যবসা করার জন্য পুঁজি দেন না। ফলে মেয়েটির কর্মসংস্থান হয় না। কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতা ও অনিরাপত্তা। অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে, প্রশংসিত হয়েছে। নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে সুফল । গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা রেখে নারী শিক্ষার বৈপ্লবিক প্রসার ঘটিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই তুলনায় শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ এখনো কম। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, নারীর আর্থসামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন দৃশ্যমান হয়। এজন্য দরকার নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা ও সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা।