Home বাংলা নিউজ পাওনা আদায়ে এবার শ্রম আদালতে ড্রাগনের শ্রমিকরা

পাওনা আদায়ে এবার শ্রম আদালতে ড্রাগনের শ্রমিকরা

দীর্ঘদিন আন্দোলন করে পাওনা বুঝে না পাওয়ায় অবশেষে শ্রম আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ড্রাগন সোয়েটারের শ্রমিকেরা। পাওনা আদায়ে এবার শ্রম আদালতে মামলা করেছেন অন্তত ৩০ শ্রমিক। এসব মামলায় ড্রাগন সোয়েটারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানকে আসামি করা হয়েছে। চাকরিচ্যুত শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ও শ্রম আদালত থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। যেসব শ্রমিকরা মামলা করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আ. কুদ্দুস, আল-আমিন, বাবুল, জাহাঙ্গীর আলাম, মাহিন কবির, ইলিয়াস হোসেন, তারেকুল হক, ইমন, ইলিয়াস হায়দার, শহিদুল ইসলাম, আসাদুল হক সজল প্রমুখ। জানতে চাইলে ড্রাগন সোয়েটারের শ্রমিক কুদ্দুস সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার অজুহাতে আমাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়। আমরা চাকরি হারিয়েছি। চাকরি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছি, সেটিও হয়নি। আইন অনুযায়ী ন্যায্য পাওনাও পাইনি। দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছি। কোনো সুরাহা হয়নি। বাধ্য হয়ে শ্রম আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ত্রি-পক্ষীয় চুক্তির পরও আমাদের শ্রমিক হিসাবে গণ্য করা হয়নি। আমাদের ন্যায্য পাওনা দেয়নি। তাই শ্রম আইন অনুযায়ী ন্যায্য পাওনা দাবি করেছি।’ এ প্রসঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন ও দরকষাকষি বিভাগের সদস্য এ কিউ এম কাদের সারাবাংলাকে বলেন, ‘ড্রাগনের মালিকের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২৮ থেকে ৩০টি মামলা করা হয়েছে। আরও মামলা প্রক্রিয়ায় রয়েছে। প্রায় ৭০টি মামলা রয়েছে ড্রাগন সোয়েটারের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ছয়টি মামলা শুনানি পর্যায়ে রয়েছে। পুরোনো অনেক মামলা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এসব মামলার নিষ্পত্তি অনেকাংশে নির্ভর করে মালিকের ওপর।’ তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো মামলার সমন হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে মালিক পক্ষ সময়ের আবেদন করলে তা অটো মঞ্জুর হয়ে যায়। ফলে এসব মামলার কার্যক্রম কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলা মুশকিল। তবে সাধারণত এক থেকে দুই বছরে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়। কিন্তু ড্রাগন এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম।’ এদিকে ড্রাগন সোয়েটারের বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলা হয়েছে বলেও শ্রম আদালত থেকে সারাবাংলাকে জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিকে পুঁজি করে রাজধানীর মালিবাগের ড্রাগন সোয়েটারের প্রায় ৫০০ শ্রমিককে চাকরিচুত্য করা হয়। লকডাউন শুরু হলে ২৬ মার্চ থেকে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আর ওই শ্রমিকরা কারখানাটিতে প্রবেশ করতে পারেননি। তবে ওই সময় থেকেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন তারা। সার্ভিস বেনিফিট ও প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ ন্যায্য পাওনার দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশ, দেনদরবার— এমন কিছু নেই, যা তারা করেনি। পাওনা বঞ্চিত শ্রমিকরা বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে অনশন ও ঝাড়ু মিছিল করেছেন। সরকারের বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি পর্যন্ত দিয়েছেন। তবু শ্রমিকদের দাবি মানেননি কারখানাটির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। ‘ওসি কুদ্দুস’ নামে পরিচিত এই ব্যবসায়ী তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি। ড্রাগন সোয়েটার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের চলমান শ্রম অসন্তোষ নিরসনের জন্য গত বছরের ১২ অক্টোবর কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরির্দশন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায়ের সভাপতিত্বে অধিদফতরের সভাকক্ষে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ওই কারখানার চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছসহ শ্রমিক ও বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সবার সম্মতিতে যেসব সিদ্ধান্ত হয়, তার মধ্যে রয়েছে— প্রত্যেক শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে চাকরির ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রতিবছর চাকরির জন্য ১৫ দিনের মূল মজুরি মালিক কতৃপক্ষ পরিশোধ করবে; জমা থাকা সাপেক্ষে ২০১৮ সালের পরবর্তী সময়ের জন্য প্রত্যেক শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে বাৎসরিক ছুটির (অর্জিত ছুটি) পাওনা শ্রম আইন অনুযায়ী মালিক কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে; মালিকের কাছে সঞ্চিত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার সব অর্থ মালিকের কাছে থাকা হিসাব অনুযায়ী মালিক কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে। তবে প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিকের অর্থ পরিশোধ করেনি। গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে সরকার, ড্রাগন সোয়েটার কর্তৃপক্ষ, তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি ও শ্রমিক নেতাদের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পাওনা বঞ্চিত ড্রাগন সোয়েটারের শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তবে শ্রমিকরা বলছেন, চুক্তি করেও ন্যায্য পাওনা দিতে নারাজ কারখানাটির মালিক। তাদের দাবি পূরণ হয়নি। কারখানাটির স্টাফ ও শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতেই কারখানাটির বঞ্চিত স্টাফ ও শ্রমিকরা শ্রম আদালতে মামলা করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here