ঢাকার অদূরে সাভারে দেশের বৃহৎ তৈরি পোশাক কারখানাগুলো রয়েছে। শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ায় ১৫০০ তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিন থেকেই এই কল-কারখানাগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল ব্যাপক। গত বছর লকডাউন শুরু হলে এসব তৈরি পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংক্রমণ কিছুটা কমে এলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়া হয়। তারপরও এলাকাগুলো নিয়ে চিন্তা ছিল ব্যাপক। গত মাসের শেষ থেকে চলতি মাস পর্যন্ত দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সংক্রমণ অতি মাত্রায় বেড়ে যায়। যে কারণে সর্বত্র লকডাউন দেওয়া হয়। কিন্তু, স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলে খোলা রাখায় হয় তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। গত সাত দিনের লকডাউনেও প্রায় চলেছে এসব কারখানা। চলতি সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউনেও কলকারখানাগুলো প্রায় বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। তবে, সাভারে লকডাউনের মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার খুলছে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। এদিকে, সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকর করতে সাভারের সড়ক-মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বসেছে পুলিশের চেকপোস্ট। চলছে ভ্রম্যমাণ আদালতের অভিযান। শিল্পাঞ্চল খুললেও অধিকাংশ শিল্প-কারখানার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে শ্রমিক পরিবহনের ব্যবস্থা না থাকায় মারাত্মক ভোগান্তি কবলে পড়েছেন সাভার-আশুলিয়ার গার্মেন্টস শ্রমিকরা। কল-কারখানা খোলার কথা শুনে সরেজমিনে বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কোথাও সর্তকতা কোথাও বা আবার ঢিলেঢালাভাব। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সতর্কতার অংশ হিসেবে বেশকিছু শিল্প কারখানা শ্রমিকদের আগমন এবং প্রস্থানের সময় চার থেকে ছয় পর্বে নির্ধারণ করে দিয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকার এবং বিজিএমইএ’র নির্দেশনা মেনে কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে মালিক পক্ষ। গত লকডাউনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে করোনা মোকাবিলায় এবার কারখানা পরিচালনা করছেন বলে জানিয়েছেন তারা। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, শিল্পাঞ্চলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ ছাড়াও জেলা প্রশাসন, কলকারখানা অধিদপ্তর, মেট্টোপলিটন পুলিশ কাজ করছে। কোনো কারখানার মালিক যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করব। সড়কগুলোতে পরিবহন চলাচলে তেমন ব্যস্ততা না থাকায় দেখা গেছে ঢিলেঢালা ভাব। প্রয়োজন ছাড়াই ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে অনেকেই ঘুরতে বেরিয়েছেন। কাঁচা বাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানগুলোতেও উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব রাখার বিষয়টি। অপরদিকে, সকাল থেকে সাভার উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ-আল-মাহফুজের নেতৃত্বে শুরু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ-আল-মাহফুজ বলেন, সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকর করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মহাসড়কে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তারপরেও অনেক মানুষজন বিনা প্রয়োজনে বাসার বাইরে আসার চেষ্টা করছে, তাই সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকর করতে তারা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার দায়ে বেশকিছু ব্যবসায়ীকে আর্থিক জরিমানা করা হয়। এ সময় সচেতনও করতে মাস্কও বিতরণ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট।