অতিমারি করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করছে। এ সময় সব কিছু বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা ভোগান্তিতে পড়েছে। তাঁরা বলেন, শ্রমিকদের দায়িত্ব না নিয়ে মালিকদের সুবিধা দিতে লকডাউনে তাঁদের সঙ্গে পরিহাস করা হয়েছে। সামনে অভাব, আর পেছনে করোনার ঝুঁকি। তাই পরিবহনের ব্যবস্থা না থাকলেও হেঁটে কারখানায় যেতে হয়। গত সাত দিনের বিশেষ নিষেধাজ্ঞার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে গাজীপুরের চন্দ্রার পোশাক শ্রমিক আসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রায় ছয় কিলোমিটার হেঁটে কারখানায় যেতে হয়েছে। আমি যে কারখানায় কাজ করি, ওই কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও।’ বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশন সভাপতি মরিয়ম আক্তার শিউলি কালের কণ্ঠকে বলেন, ক্রেতাদের চাপে কমপ্লায়েন্স কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও নন-কমপ্লায়েন্স কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। এ রকম প্রায় দুই হাজার কারখানা আছে। এসব অনেক কারখানা বিজেএমইএ এবং বিকেএমইএ সদস্য নয়। ফলে তাদের নজরদারির সুযোগ কম। এ ছাড়া ওয়াশিং, প্রিন্টিং কারখানায় কোনো স্বাস্থ্যবিধিই মানা হয় না। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (জিটিইউসি) আন্তর্জাতিক সম্পাদক মঞ্জুর মঈন কালের কণ্ঠকে বলেন, লকডাউনে শিল্প-কারখানা চালু রাখতে কী ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সেটি এখনো পরিষ্কার করেনি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। তবে গত বছরের করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় তারা একটি নির্দেশনা দিয়েছিল, সেই নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে। শ্রমিকের যাতায়াতে ভোগান্তির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মালিকরা পরিবহনের ব্যবস্থা করলে এতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। যেখানে পাঁচটি গাড়ি দরকার সেখানে দুটি গাড়ি দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে। ফলে প্রতি সিটে দুজন করেই বসতে হয় শ্রমিকদের। এ ছাড়া দূরের শ্রমিকদের পরিবহন দিয়ে নিয়ে এলেও কারখানার একেবারে কাছে নয়; এমন শ্রমিকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়ই কারখানায় যেতে হয়। ডিআইএফইএর উপমহাপরিদর্শক এ টি এম সালাউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কারখানা চালু করতে হলে স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মানতে হবে। যদি কোনো কারখানা তা না মানে তাদের বিরুদ্বে মামলা করা হবে। তবে এ ব্যাপারে কারখানার মালিকরা আমাদের সহযোগিতা করবে বলে নিশ্চিত করেছেন।’ তিনি বলেছেন, ‘শ্রমিকদের পরিবহনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমাদের শিল্পাঞ্চলের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি নজরদারি করছে। এ ছাড়া কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারাও নিশ্চিত করছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে নজরদারির জন্য ১৬৩৫৭ টুল ফ্রি নাম্বার দেওয়া আছে যে কেউ এতে অভিযোগ করতে পারবে।’ তৈরি পোশাক শিল্পের মালিক সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি আরশাদ জামাল দিপু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গতকাল আমরা বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানায় ত্রুটি হলে সেই কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য আমাদের একটি মোবাইল টিম থাকবে।’