২০১৩ সালে রানা প্লাজায় অবস্থিত একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতো বিলকিস বেগমের বোন এবং তার স্বামী। ২৪শে এপ্রিল-যেদিন রানা প্লাজা ধসে পড়ে সেদিন মারা যান স্বামী-স্ত্রী দুজনেই। বিলকিস বেগম বলছেন, ভবনটি ধসে পড়ার কয়েক মাস আগে একদিন তার বোনের সাথে গিয়েছিলেন ঐ কারখানায়। তিনি বলছেন, ঐ ভবনের সিঁড়িতে কোন রেলিং ছিল না। বোনকে তিনি বলেছিলেন কাজ না করার জন্য। “বিল্ডিং দেখে মনে হয়েছে চার/পাঁচ তলা করলে ঠিক ছিল। কিন্তু সেটা আট তলা ছিল। আমার বোন কাজ করতো চারতলায়। কিন্তু আমি দুইতলা পর্যন্ত উঠে আর উঠতে পারিনি। কারণ সিঁড়িতে কোন রেলিং ছিল না।” “আমার খুব ভয় লাগলো। আমার বোন ছুটি নিল তার বাচ্চা হওয়ার জন্য। আমি তাকে বললাম তুই যখন ছুটি নিয়েছিস আর কাজ করতে যাইস না। কিন্তু তারপরেও সে গেল।” বিলকিসের বোনের মরদেহ ২৪শে এপ্রিল পাওয়া গিয়েছিল। তার স্বামীর মরদেহ পাওয়া যায় ন’দিন পর। তাদের ছ’মাসের একটা ছেলে ছিল।
বিলকিস বলছেন, “ঐ ছেলের বয়স এখন সাড়ে আট বছর। সে জানে আমি তার মা। আর যে মারা গেছে সে তারা খালা।” ঢাকার কাছে সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার কারণ হিসেবে সেসময় মোট ন’টি কারণের কথা উল্লেখ করে গার্মেন্ট মালিকদের সমিতি বিজিএমইএ। সংগঠনটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নকশা বহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ, নিচু মানের সামগ্রী ব্যবহারই ছিল রানা প্লাজা ধসের প্রধান কারণ। এছাড়াও ভবনের নিচু মানের পিলার, ফ্লোরে জেনারেটর স্থাপন, বয়লার আর ভারী মেশিন বসানো, অতিরিক্ত কাঁচামাল আর ধারণ ক্ষমতার বেশি কর্মী থাকা- ভবন ধসের জন্য এরকম মোট ন’টি কারণ সনাক্ত করেছে বিজিএমইএ। এই ঘটনার পর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কাজ শুরু করে বলে দাবি করা হয়।
কিন্তু এই আট বছরের পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে? অধিদপ্তরের সেফটি শাখার যুগ্ম মহাপরিদর্শক ফরিদ আহাম্মদ বলছিলেন তারা কাজ করছেন কিন্তু এখনো সন্তোষজনক অবস্থায় পৌছানো যায় নি। “কাজ হচ্ছে কিন্তু সন্তুষ্টির পর্যায়ে যায়নি। পজেটিভ কাজ হচ্ছে এবং অনেকগুলো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সন্তুষ্ট এখনই বলা যাবে না।” তিনি বলছিলেন ২০১৪ সালের পর আনুমানিক ১৫০০ কারখানাকে সিলেক্ট করা হয়েছে। এখন সেগুলোর পর্যালোচনার কাজ চলছে। এজন্য কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বিশাল এই কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করার জন্য অনেক জনশক্তির দরকার বলে উল্লেখ করেন মি. আহাম্মদ। “রানা প্লাজা ধসের পর আমাদের যেসব আরএমজি কারখানা আছে ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ-অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স এর মাধ্যমে সেগুলো এসেসমেন্ট করা হয়। সরকারের সাথে আইএলওর ফান্ডের একটা প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা ১৫৪৯টি কারখানা এসেসমেন্ট করি। সেটা নিয়ে এখন আমরা কাজ করছি।” তিনি বলেন, “এর মধ্যে ৭০০ কারখানা চালু আছে। বাকিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আর যেগুলো চালু আছে সেগুলোর উপরে আমরা কাজ করছি। এখানে আমাদের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ,” বলছিলেন তিনি। রানা প্লাজা ধসের পর কল-কারখানাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক এবং আবাসিক ভবনের অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। বেশ কয়েকটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উঠে আসে নিরাপত্তার প্রশ্ন। কিন্তু সরকারের এই অধিদপ্তর বলছে এত ভবন নির্মাণের আগে এসবের নিরাপত্তার জন্য নকশা পাশ করাসহ নানা দিক রয়েছে, যেগুলো সরকারের কয়েকটি সংস্থায় করা হয়।