কাঁচামাল সংকটের কারণে তৈরি পোশাক খাতের প্রায় তিন শতাধিক কারখানার রপ্তানি হুমকির মুখে পড়েছে বলে বলে মনে করছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলেন, এসব কারখানা স্থানীয় উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করলেও সম্প্রতি বন্ড কমিশনারেট অফিস ইউটিলিটি পারমিশন (ইউপি) বা কাঁচামালের প্রাপ্যতার অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়ায় তারা এমন সংকটে পড়েছে। এই ইস্যুতে উদ্বেগ জানিয়ে গত রবিবার বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের তিন সংগঠন ঢাকা ও চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট অফিসে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী সব প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে বন্ড লাইসেন্সবিহীন শতভাগ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত সব ধরনের পণ্য ও সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে আগের সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, এনবিআরের মতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা কাঁচামাল কিংবা কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্য কেবল একই ধরনের সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করতে পারবে। কিন্তু রপ্তানিকারকরা বলছেন, ২০১২ সালের এক আদেশের মাধ্যমে বেশ কিছু অ্যাকসেসরিজ পণ্যসামগ্রী বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত নয়, এমন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা যেত। শুধু তাই নয়, এর আওতায় বিশেষায়িত কিছু সুতা কিংবা কাপড়ও সরবরাহ করা হতো বলে তাদের দাবি। তবে শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্ড সুবিধার আওতায় আনা পণ্য নন-বন্ডেড প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হলে এর ফলে অনিয়ম তথা শুল্ক ফাঁকির আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্যই বিদ্যমান বন্ড নীতিমালায়ও এ ধরনের সরবরাহের ক্ষেত্রে ইউপি জারি বন্ধ করা হয়েছে। বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্ড কমিশনারেটের অফিসের এই সিদ্ধান্তের কারণে তিন শ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর ফলে রপ্তানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানান তিনি। এ ছাড়া এর ফলে নতুন বন্ড লাইসেন্স দেওয়া হলে; তদারকির অভাবে দুর্নীতি বাড়ারও আশঙ্কা করছেন তিনি। এদিকে চিঠিতে বলা হয়, হঠাৎ করে এই সুবিধা বন্ধ হওয়ার ফলে অনেক নন-বন্ডেড প্রত্যক্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে দেশের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং বিশালসংখ্যক শ্রমিক বেকার হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের হাতে রপ্তানি আদেশ রয়েছে, কিন্তু কাঁচামালের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা রপ্তানির জন্য পণ্য উৎপাদনে যেতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সালে এক আদেশের মাধ্যমে এনবিআর বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্যাকেজিং, হ্যাঙ্গার ও প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বন্ড লাইসেন্সবিহীন শতভাগ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে অ্যাকসেসরিজ পণ্য (কার্টন, হ্যাঙ্গার, প্লাস্টিক পণ্য) সরবরাহ করা যাবে। তবে বর্তমানে রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এবং বিদেশি ক্রেতার চাহিদার ভিত্তিতে নতুন নতুন পণ্য যুক্ত হচ্ছে।
নন-বন্ড প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যাই বেশি। বিকেএমইএর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সংগঠনটির সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশেরই বন্ড লাইসেন্স নেই। তারা দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্য রপ্তানি করে।
অবশ্য ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিসে সদ্য যোগদান করা কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান থেকে নন-বন্ড প্রতিষ্ঠান পণ্য বা কাঁচামাল সরবরাহের আইনগত কোনো সুযোগ নেই। কী উপায়ে তারা এত দিন এ সুবিধা পেয়ে আসছিল তা আমরা দেখব। তবে এসংক্রান্ত চিঠি এখনো পাননি বলে জানান তিনি।