ঈদের ছুটির পর আবার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে শুরু করেছে তৈরি পোশাক শিল্প বা গার্মেন্টস কারখানাগুলো। ১৭ মে (সোমবার) থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা। তবে আগামী ২০ মের মধ্যে সব কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে কারখানা মালিকরা। এছাড়া, এবারের ঈদে বেতন বোনাস পরিশোধের বিষেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে শ্রমিক ও ব্যবসায়ী নেতারা। কারখানা মালিকরা জানিয়েছেন, লকডাউনে কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা রয়েছে তার ভিত্তিতেই খোলা হচ্ছে। এ বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে কারখানা খুলতে কোনো বাধা নেই। জানা গেছে, বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৬৪৩টি। বিকেএমইএর ৮১৬টি, বিটিএমএর ৩১০টি, বেপজার ৩৬৯টি এবং অন্যান্য ৪ হাজার ৭৫৪টি কারখানা রয়েছে। বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, দেশের অর্থনীতিতে রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আসে তৈরি পোশাক শিল্পের মাধ্যমে। এ শিল্পে ৪৪ লাখ শ্রমিক কর্মরত আছে, যার প্রায় ৬০ শতাংশ নারী। পরোক্ষভাবে প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল এবং ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড শিল্প মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে এ খাতে। প্রায় ৫ কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে এই শিল্পের ওপর তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য নির্ভরশীল। ঈদের আগে ও পরের পরিস্থিতির বিষয়ে বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী রাইজিংবিডিকে বলেন, বিজিএমইএর বর্তমান কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও এই খাতে আমারও কারখানা রয়েছে। এছাড়া বিজিএমইএর সাবেক প্রতিনিধি হিসেবে খাত সম্পর্কে আমার পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কারখানা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেনি। তবে কারো যদি জরুরি উৎপাদন প্রয়োজন হয় তারা খুলেছেন। মঙ্গলবার থেকে কারখানা খুলতে শুরু করবে। এটি হয়তো পুরোপুরি কার্যক্রমে আসতে ২০ মে পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। শ্রমিকের বেতন-বোনাসের বিষয়ে সালাম মুর্শেদী বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও কিছু সমস্যা ছিল। তবে তা কারখানা মালিক ও সংশ্লিষ্ট সংগঠন এবং শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। বিজিএমইএর নেতৃত্বে যে যার অবস্থান থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করেছি। এক্ষেত্রে সরকার আমাদের সহযোগিতা করেছে। যতটুকু ভয় পাচ্ছিনাম, ততটুকু আমাদের মোকাবিলা করতে হয়নি। কারণ বিজিএমইএর বর্তমান কমিটি খুব সুন্দরভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রায় ৬০ শতাংশ শ্রমিক গ্রামে চলে গেছেন। বাকি ৪০ শতাংশ দিয়েতো কারখানা চালানো যাবে না। তাই মালিকদের এবং সরকারকে ফিরতি যাত্রায় সহায়তা করতে হবে। যাতে শ্রমিকরা স্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রম অঞ্চলে পৌঁছাতে পারে এবং কাজে যোগ দিতে পারেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১৮ মে) থেকে সব কারখানা খোলার নির্দেশনা রয়েছে। আশা করছি শ্রমিকরা এর মধ্যে তাদের কর্ম এলাকায় পৌঁছাবেন। শ্রমিক নেতা রনি বলেন, ঈদের বেতন বোনাস নিয়ে কিছু কারখানায় সমস্যা ছিল, তা সমাধানের জন্য মালিকপক্ষ, বিজিএমইএ এবং অন্যান্য সংগঠন একযোগে কাজ করেছে। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করেছে। আমাদের জানামতে, শ্রমিকরা তাদের বেতন-বোনাস পেয়েছেন।