ঈদের আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে এবার ঝামেলা কম। তবে কিছুটা গড়িমসি আছে। ঈদের আগেই অধিকাংশ শ্রমিক বেতন-বোনাস পাবেন। এমনটি আশা করছেন শ্রমিকরা। তবে অখুশি হয়েছেন পাওনা ছুটি নিয়ে। শ্রমিকদের দাবি, গত দেড় মাস ধরে প্রত্যেক শুক্রবার তারা ডিউটি করেছেন ঈদে ৮ থেকে ১০ দিন ছুটি পাবেন এই আশায়। কিন্তু ছুটি দেওয়া হচ্ছে মাত্র তিনদিন। বেশ কয়েকটি কারখানায় ছুটি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা ফুঁসেও উঠেছেন। টঙ্গীসহ কয়েক জায়গায় বিক্ষোভ-ভাঙচুর হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদ-উল ইসলাম খান বলেন, এবার শ্রমিকদের মধ্যে বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা নেই। এরই মধ্যে ৭০-৭৫ শতাংশ শ্রমিক বেতন-বোনাস পেয়েছেন। আগামীকালের (১১ মে) মধ্যে বাকিরাও পেয়ে যাবেন। তিনি উল্লেখ করেন, এবার ঈদে ছুটি দেওয়ার কথা বলে শ্রমিকদের প্রতি শুক্রবার ডিউটি করানো হয়েছে। ঈদে ৮-১০ দিন ছুটি পাবে এই আশায় শুক্রবারের ডিউটিও মেনে নিয়েছেন তারা। কিন্তু এখন তিনদিনের বেশি দেওয়া হচ্ছে না। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র বলছে, কোনও অজুহাতেই পাওনা ছুটি থেকে শ্রমিককে বঞ্চিত করা যায় না। তাদের অভিযোগ, ঈদের ছুটির আগাম ক্ষতিপূরণ হিসেবে এপ্রিলের প্রতিটি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শ্রমিকদের ডিউটি করানো হয়েছে। এখন লকডাউন ভঙ্গ হওয়ার অজুহাতে ছুটি কেটে রাখা হচ্ছে। গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল বলেন, শ্রমিকরা ঈদের সময়টাই পরিবারের সঙ্গে কাটায়। এখন তাতেও ঝামেলা পাকানো হচ্ছে। আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা-এ ছয় এলাকায় মোট কারখানা আছে ৭ হাজার ৯৮২টি। এই ছয় শিল্প এলাকায় কাজ করছেন ৪০-৪১ লাখ শ্রমিক। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনের সক্রিয় সদস্য কারখানার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৮০০। এর সিংহভাগ কর্মীর বেতন-বোনাস পরিশোধ হয়েছে। শিল্প মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর তথ্য অনুযায়ী, আট শতাধিক সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি কারখানা বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছে। গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন, ঈদের আগের দিন পর্যন্ত বেতন-বোনাস পরিশোধ কার্যক্রম চলবে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, যে সব কারখানার অর্ডার বাতিল হয়েছে, এমন কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বুধবার বেতন-বোনাস পাবেন। এ ব্যাপারে আমরা আগামীকাল ব্যাংকের সঙ্গে বসবো। বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না দিয়ে কারখানা বন্ধ করে পালিয়েছে। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি, তাকে আটক করতে। শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের জন্য। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ওই প্রতিষ্ঠানটির নাম কটন পাওয়ার এক্সেল। প্রতিষ্ঠানটিতে তিন শ’রও বেশি শ্রমিক কাজ করে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তালা ঝুলছে কারখানাটিতে। মালিককেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে টঙ্গীতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ওপর পুলিশের হামলার বিচার, গুলিতে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জহিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল রায় এক যুক্ত বিবৃতিতে সোমবার শ্রমিকদের আন্দোলনে পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানান। ওই দিন পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ ও ৩৫ জনের বেশি আহত হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, মালিকপক্ষ থেকে নোটিসে মাত্র তিনদিনের ছুটি ঘোষণা করায় শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় তাদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জে আহত হন অনেকে। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে নেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘যেখানে ঈদের আনন্দে সময়মতো বেতন-বোনাস নিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ পালনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা, সেখানে তাদের ওপর চললো গুলি, টিয়ারশেল, লাঠিচার্জ। যে শ্রমিকরা মালিকের মুনাফা ও দেশের প্রবৃদ্ধির জন্য ওভারটাইম খাটছেন, তাদের ওপর এমন নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না।’ এর আগে গতকাল রবিবার (৯ মে) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয় তৈরি পোশাক শিল্পবিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ টিসিসির সভা। সার্বিক পরিস্থিতি ও ঈদের ছুটি নিয়ে সরকারি নির্দেশনা পরিপালন বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি ছুটি তিনদিনই থাকছে। এর বাইরে মালিক-শ্রমিক আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার শর্তে দু-একদিন বেশি ছুটি দিতে পারবে কারখানা কর্তৃপক্ষ।