দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশ চীনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বেশ হৃদ্যতা প্রকাশ করেন। তার মতে, ভারতকে কখনো নিজেদের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেনি চীন।
তিনি বলেন, চীন কখনো ভারতকে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে না। আমরা মনে করি, আমাদের (চীন-ভারত) সম্পর্ক আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। তাই এটা কখনো ভাববেন না যে, ভারতের প্রতি চীনের বিদ্বেষমূলক মনোভাব রয়েছে। এমন কিছুই নেই।
ভারতের মানুষ ও এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে লি বলেন, আমরা এখনো অনেক বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আর ঐতিহাসিকভাবে গত দুই থেকে তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দুই অঞ্চলের মানুষের মাঝে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক আছে। যে কোনো শিক্ষিত চীনা নাগরিকের ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আলাদা একটি শ্রদ্ধার জায়গা রয়েছে, যা কখনো জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়নি।
বৃহস্পতিবার কসমস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় (ওয়েবিনার) এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন চীনা রাষ্ট্রদূত। অনুষ্ঠানটি কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
ওই আলোচনায় উদ্বোধনী ও সমাপনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান এবং সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
এ ছাড়া সভায় আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের এম চৌধুরী, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড. জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো ড. নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। ওয়েবিনারে মূল আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
ভারত সম্পর্কে চীনা রাষ্ট্রদূতের আলোচনার আলোকে কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান ২০০৪ সালে চীনের বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই-এর (তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) সাক্ষাৎকার নেওয়ার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম ভারত-চীন সম্পর্কে মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়? তিনি তাৎক্ষণিকভাবেই উত্তর দিয়েছিলেন- ভারত এবং চীনের মাঝে সেতু বন্ধন করতে পারে বাংলাদেশ।
প্রযুক্তির আদান-প্রদান
প্রযুক্তির আদান-প্রদান বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত লি জানান, বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে ব্যাপক হারে প্রযুক্তির আদান-প্রদান চলছে।
এ সময় উদাহরণ হিসেবে লি আরও জানান, বেশ কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের কাছ থেকে পোশাক আমদানি করতো না চীন। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের এক নম্বর রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্প খাত চীনেও জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এখন চীনে পোশাক আমদানি করছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনাদের তৈরি পোশাক শিল্প খাত এখন এতটাই উন্নতি করেছে যে, বাংলাদেশের কাছ থেকে চীন গারমেন্টস পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হয় যে, দুই দেশের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির আদান-প্রদান ঘটছে।