দেশের উন্নয়নপ্রক্রিয়াকে আরো পরিবেশবান্ধব ও টেকসই করতে শুধু অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হলেই হবে না। এ জন্য সামাজিকভাবেও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। জোর দিতে হবে পরিবেশগত উন্নয়নে। কিন্তু এতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের সুযোগ থাকলেও চাহিদা কম। সে জন্য সব খাতকে সমন্বয় করে প্রণোদনা দেওয়া গেলে প্রয়োজনীয় সাড়া পাওয়া যাবে বলে মনে করেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। এতে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মনে করেন তাঁরা। গতকাল রবিবার ‘বিল্ডিং ব্যাক এ গ্রিনার বাংলাদেশ’ বিষয়ে ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপ যৌথভাবে এই ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংক গ্রুপে জ্যেষ্ঠ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অংজু ওয়াই।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘সবুজ অর্থায়নকে সহজ করতে এসংক্রান্ত আইনি জটিলতা কমিয়ে আনতে হবে। এটি হবে দীর্ঘমেয়াদি এবং কম সুদে।’
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম দিকে শুধু তৈরি পোশাক খাতকে প্রাধ্যান্য দিলেও এখন ৫২টির বেশি খাতে সবুজ অর্থায়ন করে থাকে। প্রথমে ভুল করলেও ভুল থেকে সংশোধন হই। একই সঙ্গে বড় আকারে কাজ করতে থাকি। এ জন্য একটি সমন্বয় কর্তৃপক্ষ দরকার। এটি শুরু হতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। এই মন্ত্রণালয়ে একটি ‘গ্রিন ইউনডো’ থাকা উচিত। তারা সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত করে সবুজ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরো বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা আছে। সেই অনুসারে প্রতিটি দেশকে শুধু অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হলেই হবে না, এটিকে সামাজিকভাবেও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পরিবেশগত দিক থেকেও উন্নত হতে হবে। এই কোরিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশ কাজ করেছে। সেই হিসেবে কোরিয়ার মডেল থেকে অনুসরণ করে বাংলাদেশ তার নিজস্ব বাস্তবতার আলোকে কিভাবে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে, এ বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।’
এ সময় অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, “প্রযুক্তি নির্বাচনেও বাংলাদেশকে যথেষ্ট সাবধান হতে হবে। এরই মধ্যে যেসব মাস্টারপ্ল্যান হয়েছে, যেমন—অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ডেল্টা প্ল্যান এবং আরো একটি পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে, সেটি হলো ‘মুজিব ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রসপারিটি প্ল্যান’।”
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে সম্পদের সুষম বণ্টনসহ পরিবেশগত শুধু জলাভূমি বা বনভূমি রক্ষা নয়, সব মানদণ্ডকে পরিকল্পিতভাবে ভবিষ্যতের উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে সুচারু বাস্তবায়ন করতে হবে, যে কাজটি কোরিয়া করেছে। সেই আলোকে বাংলাদেশের বাস্তবতায় করতে চাই।’
পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তারের সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য দেন ড. আহসান এইচ মনসুর, ড. ম তামিম, ড. সাদিক আহমেদ ও ড. আতিক রহমান।