Home বাংলা নিউজ কৃত্রিম তন্তুর পোশাকে বড় সম্ভাবনা

কৃত্রিম তন্তুর পোশাকে বড় সম্ভাবনা


ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের চাহিদার কারণে ধীরে ধীরে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাকের উৎপাদন বাড়ছে বাংলাদেশে। সে জন্য কৃত্রিম তন্তুর আমদানিও বাড়ছে। যদিও দেশের তিন-চারটি বস্ত্রকল কৃত্রিম তন্তু উৎপাদন করছে। তবে অধিকাংশ বস্ত্রকল বিদেশ থেকে পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার, ভিসকস স্ট্যাপল ফাইবার, টেনসিল তন্তু আমদানি করে সুতা ও কাপড় উৎপাদন করছে।

ফ্রান্সের প্রকৌশলী ও শিল্পপতি হিলাইরে দ্য চার্ডোনের উদ্ভাবিত কৃত্রিম সিল্কের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছিল একটি প্রতিষ্ঠান। দুই বছর না যেতেই ১৮৯৪ সালে সেই ব্যবসা দেউলিয়া হয়ে যায়। ১২৭ বছর আগের সেই ঘটনার সঙ্গে আজকের বাস্তবতা মেলাতে গেলে যে কেউ ধাক্কা খাবেন। কারণ, প্রাকৃতিক তুলা বা কটনের তৈরি পোশাকের রাজত্বে হানা দিয়ে বর্তমানে ছড়ি ঘোরাচ্ছে ম্যানমেইড ফাইবার বা কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাক।

বাংলাদেশে বসে কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের জয়জয়কার বোঝাটা একটু কঠিনই বটে। কারণ, আমরা এখনো কটন পোশাকে অভ্যস্ত। এমনকি দেশের রপ্তানিকারকেরা সারা বছর যে পরিমাণ পোশাক রপ্তানি করেন, সেগুলোর চার ভাগের তিন ভাগই কটনের। তবে ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশের বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। একটা উদাহরণ দিলে কিছুটা পরিষ্কার ধারণা মিলবে। ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ১৯ হাজার থেকে ২০ হাজার কোটি ডলারের কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানি হয়। ২০২৫ সালে সেটি বেড়ে ৪০ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চ এমন পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে বিশ্বের মোট পোশাকের কত শতাংশ কৃত্রিম তন্তুর, সেটি নিয়ে কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। তবে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারার ফেডারেশনের (আইটিএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মোট পোশাকের ৭৮ শতাংশই কৃত্রিম তন্তুর। বাকি ২২ শতাংশ তুলার তন্তুর।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই মনের ভেতর প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, কেন কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা বাড়ছে? আসলে এক শ একটা কারণ রয়েছে। দু-চারটা শোনা যাক। দুনিয়াজুড়েই ক্রেতাদের মধ্যে পরিবেশ–সচেতনতা বাড়ছে। তুলা উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে পানি লাগে। তারপর কাপড়ে রং কিংবা ধোঁয়া বা ওয়াশে প্রচুর পানির ব্যবহার হয়। এ কারণে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম তন্তু বা ব্যবহৃত পোশাক পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে উৎপাদিত কাপড় তৈরিতে ঝুঁকছে। আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে দ্রুত ফ্যাশন পরিবর্তন। নিত্যনতুন ফ্যাশনের পোশাক তৈরিতে কৃত্রিম তন্তুর জুড়ি নেই। তা ছাড়া আরামদায়ক ও টেকসই হওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহজেই করা যায়।

বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ। প্রথম চীন ও তৃতীয় ভিয়েতনাম। তারপরও কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানিতে চীন তো বটেই, ভিয়েতনাম থেকেও পিছিয়ে বাংলাদেশ। ভিয়েতনাম যেখানে বিশ্বের কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের ১০ শতাংশ হিস্যা দখল করে আছে, সেখানে বাংলাদেশের হিস্যা ৫ শতাংশের কাছাকাছি। তবে দেরিতে হলেও বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা পোশাকের রপ্তানি বাড়াতে কৃত্রিম তন্তুর দিকে ঝুঁকছেন। কৃত্রিম তন্তুর সুতা ও কাপড় উৎপাদনে বিনিয়োগ বছর বছর বাড়ছে।

পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, কৃত্রিম তন্তু রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের ভবিষ্যৎ। অধিকাংশ বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ব্যবসাকে টেকসই করতে কৃত্রিম ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত তন্তুর দিকে ঝুঁকছে। ফলে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সময় নেই।

তুলা তো গাছে হয়, কৃত্রিম তন্তু কীভাবে

তুলার মতো কৃত্রিম তন্তুও গাছ, বাঁশ বা কাঠ থেকে হতে পারে। গোলমেলে ঠেকছে? মোটাদাগে কৃত্রিম তন্তু দুই প্রকার—ন্যাচারাল পলিমার ও সিনথেটিক পলিমার ফাইবার বা তন্তু। বিভিন্ন রকম গাছ, কাঠ বা বাঁশ অর্থাৎ উদ্ভিদজাত তন্তু মূলত ন্যাচারাল পলিমার ফাইবার। এ ধরনের তন্তুর মধ্যে ভিসকস, টেনসিল, মোডাল বেশ জনপ্রিয়। এসব তন্তুর সঙ্গে বিভিন্ন মাত্রায় তুলা মিশ্রণ করে সুতা উৎপাদন করা হয়। তবে উদ্ভিদজাত হওয়ায় অনেকেই এটিকে কৃত্রিম তন্তু বলতে রাজি নন।

অন্যদিকে পেট্রোকেমিক্যাল থেকে সিনথেটিক পলিমার ফাইবার হয়। এ ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল বেশি ব্যবহৃত হয়। সিনথেটিক তন্তুর মধ্যে পলিয়েস্টার ও নাইলন বেশি জনপ্রিয়। এসব তন্তুর থেকে সুতা তৈরি করে জ্যাকেট, রেইনকোট, স্পোর্টসওয়্যার, অন্তর্বাসসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাকের কাপড় উৎপাদিত হয়। তা ছাড়া সিনথেটিক ফাইবারের সঙ্গে তুলার সংমিশ্রণ করে টি–শার্ট, শার্ট, প্যান্টসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় প্রস্তুত করা হয়।

কৃত্রিম তন্তুর পোশাকে বড় সম্ভাবনা

কৃত্রিম তন্তুর আমদানি বাড়ছে

ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের চাহিদার কারণে ধীরে ধীরে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাকের উৎপাদন বাড়ছে বাংলাদেশে। সে জন্য কৃত্রিম তন্তুর আমদানিও বাড়ছে। যদিও দেশের তিন-চারটি বস্ত্রকল কৃত্রিম তন্তু উৎপাদন করছে। তবে অধিকাংশ বস্ত্রকল বিদেশ থেকে পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার, ভিসকস স্ট্যাপল ফাইবার, টেনসিল তন্তু আমদানি করে সুতা ও কাপড় উৎপাদন করছে।

বাংলাদেশ বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালে ২৯ হাজার ১৪৬ টন ভিসকস স্ট্যাপল ফাইবার আমদানি হয়েছিল। গত বছর সেটি বেড়ে ৫৩ হাজার ২৮৯ টনে দাঁড়িয়েছে, যার আমদানি মূল্য ৮৮৫ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৬ সালে ৭৮ হাজার ২০৮ টন পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার আমদানি হয়। গত বছর সেটি বেড়ে হয়েছে ৯৬ হাজার ৭৭ টন। এই পরিমাণ পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবারের আর্থিক মূল্য ৯২৭ কোটি টাকা।

দীর্ঘদিন ধরে কৃত্রিম তন্তুর পোশাক বিশেষ করে জ্যাকেট, স্পোর্টসওয়্যার, ওয়ার্ক ওয়্যার ইত্যাদি রপ্তানি করছে স্নোটেক্স গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের রপ্তানি বাড়াতে হলে আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। চীন থেকে কাপড় আমদানি করে পোশাক উৎপাদনের পর রপ্তানিতে খরচ ও লিডটাইম (ক্রয়াদেশের পর পণ্য জাহাজীকরণ পর্যন্ত সময়)—দুটোই বেশি লাগে।

এস এম খালেদ বলেন, কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের বাজার দ্রুত ধরতে হলে প্রথমে ডায়িং ফিনিশিংয়ে জোর দেওয়া দরকার। গ্রে ফ্যাব্রিকস আমদানি করে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত রং করে পোশাক বানানো সম্ভব। দ্বিতীয় ধাপে সুতা আমদানি করে কাপড় উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ, সুতার অল্প কয়েক ধরন হলেও কাপড় হাজার রকমের হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে আমাদের সুতা ও তন্তু উৎপাদনে যাওয়া প্রয়োজন।

দেশে নতুন বিনিয়োগ

কৃত্রিম তন্তুর সুতা ও কাপড় উৎপাদনে বিনিয়োগ করছেন দেশের বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা। করোনাকালেও সেটি থেমে নেই। সর্বশেষ গত মে মাসে শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ডিবিএল ৫৬২ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

ডিবিএল গ্রুপ তাদের মতিন স্পিনিং মিলসের বিদ্যমান ইউনিটের পাশাপাশি নতুন করে স্পেশাল ইয়ার্ন ইউনিট স্থাপন করছে। নতুন এ ইউনিটে কৃত্রিম তন্তুসহ বিশেষায়িত বেশ কিছু সুতা উৎপাদিত হবে। তার জন্য বিনিয়োগ হচ্ছে ২ কোটি ১৯ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ১৮৬ কোটি টাকা। ৪ শতাংশ সুদে এই অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জার্মান ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউট (ডিইজি)। অন্যদিকে হামজা টেক্সটাইলের দ্বিতীয় ইউনিটে বিশেষায়িত সুতা-কাপড় ডায়িং ও ফিনিশিংয়ের জন্য ৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার বা ৩৭৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে ডিবিএল। ৪ শতাংশ সুদে এই অর্থ দিচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)।

জানতে চাইলে ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার সম্প্রতি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কাশিমপুরে হামজা টেক্সটাইল ও মতিন স্পিনিংয়ের সম্প্রসারিত ইউনিট দুটি যথাক্রমে আগস্ট ও ডিসেম্বরে উৎপাদনে যাবে। ম্যানমেইড ফাইবার, ব্লেন্ডসহ আমাদের কিছু উদ্ভাবিত সুতা নতুন কারখানায় উৎপাদিত হবে। তা ছাড়া ডায়িং ইউনিটে পলিয়েস্টার ও সিনথেটিক কাপড় রং করা হবে। কিছু বিশেষ ধরনের ফিনিশিং প্রক্রিয়াও থাকবে সেখানে।’

আগামী কয়েক বছর পর অনেক নামীদামি ব্র্যান্ডই পুনঃপ্রক্রিয়াজাত ছাড়া অন্য তন্তুর পোশাক বানাবে না। তাই সামনের দিনে কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা আরও বাড়বে।

মো. সালেউদ জামান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এনজেড টেক্সটাইল

এনজেড টেক্স গ্রুপ কৃত্রিম তন্তু আমদানি করে প্রথমে ভিসকস, টেনসিল ও মোডাল সুতা এবং তা দিয়ে কাপড় উৎপাদন করছে। প্রতিবছর তাদের ব্যবসা ৩০ শতাংশ হারে বাড়ছে। নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় প্লাস্টিকের বোতল থেকে পলিয়েস্টার তন্তু উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের জন্য ১০০ কোটি বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি। করোনার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে এনজেড টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সালেউদ জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, আগামী কয়েক বছর পর অনেক নামীদামি ব্র্যান্ডই পুনঃপ্রক্রিয়াজাত ছাড়া অন্য তন্তুর পোশাক বানাবে না। তাই সামনের দিনে কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা আরও বাড়বে। তিনি বলেন, ‘পলিয়েস্টার তন্তু উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল প্রয়োজন। আমাদের কারখানাতেই দিনে ১০০ টন বোতল লাগবে। দেশের ভেতর থেকে এই পরিমাণ বোতল পাওয়া কঠিন। আরও কয়েকটি কারখানা হলে সংকট আরও বাড়বে। তবে বিদ্যমান আইনে বিদেশ থেকে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল আমদানির সুযোগ নেই। সে জন্য পলিয়েস্টার তন্তু উৎপাদনের স্বার্থে সরকারকে বোতল আমদানির দুয়ার খুলে দিতে হবে।’

ভারত যেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে বেশ পিছিয়ে। তবে কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের ব্যবসা ধরতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটির উদ্যোক্তারা। সরকারও সহযোগিতা করছে। বর্তমানে বছরে প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানি করছে ভারতের ব্যবসায়ীরা।

পোশাক ও বস্ত্র খাতের রপ্তানি শক্তিশালী অবস্থানে নিতে ভারত তিন বছরের মধ্যে সে দেশে সাতটি বড় আকারের টেক্সটাইল পার্ক বা বস্ত্রপল্লি করার পরিকল্পনা করেছে। একেকটি বস্ত্রপল্লি এক হাজার একরের বেশি জমির ওপর গড়ে তোলা হবে। সেখানে থাকবে বিশ্বমানের অবকাঠামো। সেই সঙ্গে বস্ত্র খাতের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনের জন্য ১০ হাজার ৬৮৩ কোটি রুপির প্রণোদনা স্কিমের পরিকল্পনা করেছে দেশটি। গত ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার দিন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ এসব ঘোষণা দেন।

ব্যবসা টেকসই করতে অধিকাংশ ব্র্যান্ডই কৃত্রিম বা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত (রিসাইক্লিং) তন্তুর পোশাকের দিকে ঝুঁকছে। সেই সুযোগ নিতে উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।

মোস্তাফিজ উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড

প্রস্তুতির জন্য উদ্যোক্তারা যা চান

কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের ব্যবসা ধরতে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দাবি করেছিল। তাদের প্রত্যাশা, সহায়তা পেলে বর্তমান কারখানাগুলোই বাড়তি ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে পারত। যদিও অর্থমন্ত্রী বিজিএমইএর দাবির দিকে সুনজর দেননি।

চট্টগ্রামের ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘ব্যবসা টেকসই করতে অধিকাংশ ব্র্যান্ডই কৃত্রিম বা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত (রিসাইক্লিং) তন্তুর পোশাকের দিকে ঝুঁকছে। সেই সুযোগ নিতে উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, লিডটাইমের বাধ্যবাধকতার কারণে আমাদের অবশ্যই কৃত্রিম বা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত তন্তু, সুতা ও কাপড় উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে হবে। একেকটি কারখানা করতে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের স্বল্পমূল্যে বা ইজারায় জায়গা দিতে পারে সরকার। স্বল্পসুদে ঋণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়াটাও প্রয়োজন।’ এ ছাড়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিটিএমএ জানায়, বর্তমানে প্রায় ৮০টি বস্ত্রকল পলিয়েস্টার, ভিসকস, টেনসিল, মোডালসহ বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম তন্তুর সুতা ও কাপড় উৎপাদন করছে। যদিও ২০১৬ সালে সংখ্যাটি ছিল ৫০-এর নিচে। দু–তিন বছরের মধ্যে আরও কয়েকটি বস্ত্রকল উৎপাদনে যাবে।

জানতে চাইলে বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃত্রিম তন্তুর কাপড়ে অনেক ধরনের ফ্যাশনেবল পোশাক করা যায়, যা কটন কাপড়ে হয় না। সে কারণে কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা বাড়ছে বিশ্বব্যাপী। সুযোগটি নিতে না পারলে আমরা ট্রেন মিস করব। চীন, ভিয়েতনাম ও ভারত ইতিমধ্যে অনেক কিছু করে ফেলছে। কৃত্রিম তন্তুর জন্য আমাদের সংযোগশিল্পকে শক্তিশালী করতে হবে। সে জন্য নীতিসহায়তা লাগবে।’

বিটিএমএর সভাপতি বলেন, ‘প্রতিবছর আমাদের ৭০০-৮০০ কোটি ডলারের ওভেন কাপড় আমদানি করতে হয়। কিন্তু ওভেন কাপড় উৎপাদন করমুক্ত ঘোষণা করা হলে চীনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে। তখন দেশের অর্থ দেশেই থাকবে। কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানিতেও আমরা শক্ত অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারব।’ দেশীয় বাজারে কৃত্রিম তন্তুর সুতা বিক্রিতে কেজিতে ৬ টাকা এবং কাপড়ের ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here