Home বাংলা নিউজ পোশাক কারখানায় বেড়েছে ব্যস্ততা

পোশাক কারখানায় বেড়েছে ব্যস্ততা

মার্চ মাসেও নতুন মৌসুমে কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকা অনেক তৈরি পোশাক কারখানায় এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। লকডাউনের মধ্যেও বিশেষ ব্যবস্থায় চালু থাকা চট্টগ্রামের অনেক পোশাক কারখানায় এখন নির্দিষ্ট সময়ে শিপমেন্ট দেওয়ার ব্যস্ততা। গত এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের অর্ডারের চাপ বেড়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক গার্মেন্ট মালিক। বিশেষ করে গত মার্চের শেষ দিকে ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে আশীর্বাদের ঢেউ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কারণ গত এপ্রিল থেকে তৈরি পোশাকের অনেক অর্ডার ভারত থেকে বাংলাদেশে সরে এসেছে। সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও নতুন অর্ডার বাড়ার হার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বলে মনে করছেন গার্মেন্ট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে কনটেইনার পরিবহনের ঊর্ধ্বগতিও এর পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে। জাহাজের মেইনলাইন অপারেটরদের হিসাবে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত মাসে রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৭৭০টি, যা মে মাসের (৫৬ হাজার ১০৮ একক) চেয়ে ১৩.৬৫ শতাংশ বেশি। জাহাজের মেইনলাইন অপারেটরদের হিসাবে চলতি জুলাই মাসে কনটেইনারবাহী রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ আরো বাড়বে। এই রপ্তানি পণ্যের ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক। ২০২০ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৪৯ হাজার ১৬৯ একক কনটেইনার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

শিপিং কম্পানি জিবিএক্স লজিস্টিকসের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনতাসির রুবাইয়াত কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন এবং এই বছরের জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছয় মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৩১ শতাংশ। আর এই বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশের বেশি। যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে জুলাই মাসে রপ্তানি সর্বোচ্চ পরিমাণ হবে।’

তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বাড়ার পেছনে প্রধান ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছে লকডাউন আর এ সময় শিল্প-কারখানাগুলো খোলা রাখার সাহসী সিদ্ধান্ত। আপনি দেখবেন, মিয়ানমার ও ভারতে লকডাউনে সব কারখানা বন্ধ ছিল। বিদেশি ক্রেতারা চান অনটাইম ডেলিভারি। সেদিক থেকে এই মুহূর্তে বেশ ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।’

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের গার্মেন্ট সেক্টরে কাজ করেন এক সময়ের পোলো রাল্ফ লরেনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ও বর্তমানে জার্মানভিত্তিক বিখ্যাত রিটেইলার মেট্রো সোর্সিংয়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ নিয়ামত আলী। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে তৈরি পোশাকের অনেক অর্ডার সরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে উল্লেখ করে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারখানার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে লক্ষ করেছি, গত এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে অনেক কারখানায় কাজের ভলিউম বেড়ে গেছে। খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারলাম মূলত ভারত থেকে এবং বেশ কিছু অর্ডার মিয়ানমার থেকে সরে বাংলাদেশে এসেছে। কারণ, করোনায় বিপর্যস্ত ভারত পরিস্থিতি সামাল দিতে লকডাউনে শিল্প-কারখানাও বন্ধ করে দেয়। এতে দিশাহারা ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতাদের বাংলাদেশমুখী হওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না।’

ভারত থেকে অর্ডার সরে আসা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ উল্লেখ করে বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি ও আল-আমিন গার্মেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম চৌধুরী সেলিম বলেন, ‘এপ্রিল মাসে ভারতে কভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বাংলাদেশে হঠাৎ করে অর্ডার ফ্লো বাড়তে থাকে। এই অর্ডারগুলো মূলত ভারত থেকে সরে বাংলাদেশে এসেছে।

একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কী পরিমাণ অর্ডার ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে, তা বলা মুশকিল। অন্তত দুটি মৌসুম গেলে বোঝা যাবে। তবে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ দেওয়া গেলে এসব ক্রেতার অনেকে বাংলাদেশি স্থায়ী হবেন।

বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি ও ইস্টার্ন অ্যাপারেলস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাছির উদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত দুই মাসে আমাদের ক্যাপাসিটির চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্ডার এসেছে। এর মধ্যে ব্র্যান্ডের অর্ডার যেমন আছে, তেমনি বাল্ক অর্ডারও আছে। ওয়ালমার্টের প্রচুর অর্ডার এসেছে। এই অর্ডারের বেশির ভাগ এসেছে ভারত ঘুরে। পাশাপাশি গত কয়েক মাসে মিয়ানমারেরও কিছু অর্ডার এসেছে বাংলাদেশে। সেখানে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর কোটা সুবিধা ভোগ করা অনেক বিদেশি ক্রেতা বাংলাদেশমুখী হয়েছেন।’

ভারত-মিয়ানমার থেকে নতুন করে কী পরিমাণ অর্ডার এসেছে তা নিশ্চিত করতে না পারলেও আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ শতাংশ অর্ডার বেড়েছে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

kalerkantho

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here