কঠোর লকডাউনে পোশাক কারখানা খোলা রাখা! বিষয়টি সারা দেশে যুগপৎ হাস্যরস ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। পোশাক কারখানা খোলা রাখার পেছনে নানান বাস্তবতার কথাই বলা যাবে। অভিন্ন যুক্তি দেখানো যাবে অন্য আরও কিছু শিল্পের ক্ষেত্রেও। গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাক শ্রমিকদের দুর্ভোগ বেড়েছে। তারা চাকরি বাঁচাতে হেঁটে, রিকশা ও অটো রিকশাযোগে কারখানায় আসা-যাওয়া করছেন। এতে একদিকে খরচ অন্যদিকে ভোগান্তি বেড়েছে। সামনে ঈদ। এক দিন অনুপস্থিত থাকলেই কাটা হবে বেতন। শ্রমিকদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে বেতন কম পাওয়ার ভয় বেশি কাজ করছে। কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন গত বৃহস্পতিবার এ অবস্থা দেখা গেছে।
আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম দেশের শিল্প-কারখানাগুলো অবস্থিত। এসব কারখানায় কর্মরত বড়সংখ্যক শ্রমিক কারখানা থেকে অনেক দূরে বাস করেন। লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের মতে, শ্রমিকরা কারখানার আশপাশে বাস করেন। লকডাউন হলেও সমস্যা হচ্ছে না। হেঁটে কারখানায় যাতায়াত করছে। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, তৈরি পোশাক বস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের কারখানার শ্রমিকের বড় একটি অংশ কারখানার দূরে অবস্থান করেন। গাজীপুর ও আশুলিয়া-সাভারের কারখানাগুলোর অর্ধেক শ্রমিক দূরে বসবাস করেন। গাজীপুরের শ্রমিকদের একটি অংশও দূর থেকে কারখানায় আসেন।
ফোনে কথা হয় আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার শ্রমিক আক্কাস আলীর সঙ্গে। আক্কাস আলীর কারখানা বাসা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে, জামগড়ায়। লকডাউনের কারণে গত কয়েক দিন ধরেই গণপরিবহন চলছে না। অটোরিকশা, রিকশা ও পায়ে হেঁটে কারখানায় যাচ্ছেন তিনি। আগে যাতায়াতে খরচ হতো সর্বোচ্চ ২০ টাকা। এখন সেই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে দিন ভেদে ২০০ টাকা। একই কথা বলেন গাজীপুরের বোর্ড বাজারের রেহেনা। রেহেনার বাসা বোর্ড বাজারে। তার কারখানা বাইপাসে, গাজীপুরে চৌরাস্তার কাছাকাছি। লকডাউনের আগে বাসে ও ইজিবাইকে যাতায়াত করতেন। খরচ হতো ২০ টাকা। এখন সে খরচ দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। খরচ কমাতে কখনো রিকশায় শেয়ার করে যাতায়াত করেন। তারপরও স্বাভাবিকের চেয়ে খরচ কয়েকগুণ বেশি হয়। সেই সঙ্গে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি নিয়ে করে অফিসে চলাফেরা করেন।
করোনার মধ্যে কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানানো হচ্ছে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ-র পক্ষ থেকে। কারখানায় ঢোকার সময় সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে দূরত্ব বজায় রেখে প্রবেশ করতে হবে। কারখানার মেশিনগুলোও দূরত্ব বজায় রেখে বসানো হয়েছে যাতে এক শ্রমিক থেকে আরেক শ্রমিক আক্রান্ত না হতে পারে। কারখানা থেকে বের হওয়ার সময়ও দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিরপুরের চারটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, একটি কারখানায় পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। বাকি তিনটিতে স্বাস্থ্যবিধি অনেকটা দায়সারা। তবে বিজিএমএইর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সব কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে! পোশাক শ্রমিকদের দুর্ভোগ লাঘবে পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবেন বলেই প্রত্যাশা।