লকডাউনে শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণায় তৈরি পোশাকের শতাধিক রপ্তানি আদেশ স্থগিত হয়ে গেছে। অনেক কারখানার রপ্তানি আদেশ বাতিল করা হয়েছে। যেসব ব্র্যান্ড ও ক্রেতার সঙ্গে রপ্তানি আদেশের বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে ছিল সেগুলো আপাতত বন্ধ। ১০টি কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে একই রকম তথ্য জানা গেছে।
ডিবিএল গ্রুপ, অ্যাডাম অ্যাপারেল, ম্যায়চিচ গার্মেন্টস, ফতুল্লা অ্যাপারেলস, উর্মি গ্রুপ, ইতাল অ্যাডওয়েজসহ কয়েকটি কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, জোটগত প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং একক প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি প্রায় করোনার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। সব মার্কেট, দোকানপাট ও ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলোর ফ্লোর খুলে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন স্থবির থাকার পর এসব বাজারে পোশাকপণ্যের চাহিদা এখন যেকোনো সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের কারণে ভারতে ক্রেতারা কম যাচ্ছেন। সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারেও ক্রেতারা যাচ্ছেন না। ফলে হাতে এখন প্রচুর রপ্তানি আদেশ।
এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঈদের পর কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে সব ধরনের শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাও বন্ধ থাকবে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই খবর প্রচারের পরপরই ক্রেতারা উদ্বেগ জানিয়ে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ইমেইলে, ফোনে যোগাযোগ করতে শুরু করেন।
তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান সমকালকে বলেন, এরই মধ্যে শতাধিক কারখানার রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়ে গেছে। অনেক ক্রেতা কেবল হাতের কাজটিই কোনো রকমে উঠিয়ে দিতে বলেছেন। বাড়তি কাজ আর দিচ্ছেন না।
নিজের কারখানার উদাহরণ দিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, জায়ান্ট গ্রুপের কারখানায় মার্কিন ব্র্যান্ড ওয়ালমার্টের রপ্তানি আদেশের কাজ চলছিল। আরও কাজ নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই ব্র্যান্ড প্রতিনিধিরা হাতের কাজ আগে শেষ করতে বলেছেন। বাকি রপ্তানি আদেশের আলোচনা স্থগিত আছে।
ফারুক হাসান বলেন, রপ্তানি আদেশ বাতিল না করার জন্য ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছি আমরা।
বিজিএমইএ সভাপতির আশা, প্রধানমন্ত্রী কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকেও লকডাউনে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের শিল্প-কারখানা খোলা রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার বস্ত্র ও পোশাক খাতের মালিকদের পাঁচ সংগঠনের সভাপতিরা আগের লকডাউনের মতো আগামী লকডাউনে কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। যৌথভাবে এক চিঠিতে সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, টানা ১৪ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে রপ্তানি আদেশ হারাতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিটি পৌঁছান তারা। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বিটিটিএলএমইএ ও বিজিএপিএমইএ- এই পাঁচ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী তার সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানা গেছে।
বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম শুক্রবার সমকালকে বলেন, ইতোমধ্যে অন্তত দেড়শ কারখানার রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। আমার নিজের কারখানা এমবি নিটেরও কাজ স্থগিত হয়েছে।
মোহাম্মদ হাতেম জানান, ওই ক্রেতাদের কাছে দুই লাখ এবং এক লাখ করে মোট তিন লাখ পিস শার্ট সরবরাহ করার কথা ছিল। অনেক কারখানা মালিক আমাদের কাছে এই অভিজ্ঞতা জানিয়ে প্রতিকার চাচ্ছেন।
তৈরি পোশাক দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। মোট রপ্তানি আয়ে সমজাতীয় পণ্য মিলে পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ। ৩৬ লাখ শ্রমিক কাজ করে এ খাতে। বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি বেশি হয়েছে ১৩ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক।