Home বাংলা নিউজ খাল দখল করে গড়ে উঠেছে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি

খাল দখল করে গড়ে উঠেছে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি

খাল দখল করে গড়ে উঠেছে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি)। রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি খালের ওপর প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠে এসেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে। সম্প্রতি খালটি দখলমুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে নদী রক্ষা কমিশন।

নদী রক্ষা কমিশনের সর্বশেষ প্রণীত বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯ অনুযায়ী, খালটি দখল করে বিইউএফটি ছাড়াও উত্তরা ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হচ্ছে। তুরাগের নিশাতনগর এলাকার দিয়াবাড়ি খালের প্রায় ছয় বিঘা জমির ওপর ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিইউএফটি। দেশের তৈরি পোশাক খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১২ সালের ২০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন পায় বিইউএফটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শুরুর দিকে তুরাগ তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় বিআইডব্লিউটিএ। এ সময় দিয়াবাড়ি খালের ওপর নির্মিত বিজিএমইএর বিশ্ববিদ্যালয়টি ভেঙে ফেলার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে আরো যাচাই-বাছাই করার জন্য সময় নেয়া হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ ঠেকিয়ে রাখে।

এ বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এএসএম আলী কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করার পরই আমাদের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটিসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান দিয়াবাড়ি খালটি দখল করে রেখেছে। কোরবানির ঈদের আগে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছি। চিঠিতে অবিলম্বে এসব দখল করা ভবন ও প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে খালের প্রবাহ সচল করার জন্য বলা হয়েছে।

উত্তরা দিয়াবাড়ি খালটি বাউনিয়া মৌজার অধীনে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে খালটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতায় আসে। এর আগে খালটির অভিভাবক ছিল ঢাকা ওয়াসা। সরজেমিন গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তুরাগ নদীর বাঁধের পাশঘেঁষে বয়ে চলা দিয়াবাড়ি খালটি এখন দখল-দূষণে ডোবায় পরিণত হয়েছে।

খালটির বর্তমান অভিভাবক হিসেবে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বণিক বার্তাকে বলেন, সব খাল দখলমুক্ত করার জন্য আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। অনেক দূর কাজ এগিয়েছে। আমাদের সম্পত্তি বিভাগ বিইউএফটির বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। খালের জমি দখল করে থাকলে তা অবশ্যই উচ্ছেদ করা হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

খাল দখল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি জানতে চাইলে বিইউএফটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম মাহফুজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনেক বছর পর আমি এখানে ভিসির দায়িত্ব গ্রহণ করি। সুতরাং খাল দখল করে ইউনিভার্সিটি হয়েছে কিনা তা ট্রাস্টিরা ভালো বলতে পারবেন। যেহেতু রাজউক বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন দিয়েছে, তার মানে যাচাই-বাছাই করেই দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাজউক উত্তরা জোনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নাদিম বণিক বার্তাকে জানান, এখন অফিস বন্ধ। এ সম্পর্কে সুনির্দষ্ট কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। তবে রাজউকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, অনেক সময় একটি সম্পত্তির একাধিক সংস্থা মালিকানায় থাকতে পারে। এসব জমি নিয়েই পরবর্তী সময়ে বিরোধ বাধে। কিন্তু খালের মালিকানায় যে সংস্থাই থাকুক না কেন, তা দখল করে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বৈধ কাজ নয়।

ইউজিসির সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বিইউএফটির নিজস্ব জমির পরিমাণ ৫ দশমিক ৮৮ একর। নিজস্ব ভৌত অবকাঠামোর পরিমাণ পাঁচ লাখ বর্গফুট। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনটি ১০ তলা। এখানে পাঁচটি অনুষদ ও আটটি বিভাগ নিয়ে মোট ১৫টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। বিইউএফটির আসন সংখ্যা ২ হাজার ৬৮০। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১৯ সালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৩১৪ জন শিক্ষার্থী। বর্তমানে অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ হাজার ৪৬২। ২০৬ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে বিইউএফটির শিক্ষা কার্যক্রম।

খাল দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে বিইউএফটির ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুজাফফর উদ্দিন সিদ্দিকী বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের ইউনিভার্সিটি দিয়াবাড়ি খাল থেকে অনেক দূরে। আমরা খাল দখল করেছি তথ্যটি সঠিক নয়। বরং আমরা খালটি বাঁচাতে চাই। মাঝে মাঝে আমরা খাল-নদী রক্ষার ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here