তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা বলছেন, গত বছরের শুরু থেকে চলা মহামারির কারণে বৈশ্বিক চাহিদা কমায় ক্রয় আদেশের দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছিল দেশের রপ্তানিমুখী প্রধান খাত৷ ৫ আগস্টের পরও যদি কারখানা বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা৷
সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে কারখানার কর্মীদের গণটিকাদানের পাশাপাশি শেষ পর্যায়ে থাকা ক্রয় আদেশের কাজগুলো সারতে সীমিত সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কারখানা খোলার প্রস্তাব রেখেছেন মালিকরা৷
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ সভাপতি শহিদুল আজিম সোমবার বলেন, “জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস হচ্ছে পোশাক রপ্তানির ‘পিক টাইম’৷ সারা বছরের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ রপ্তানি হয় এই সময়ে৷ পশ্চিমের দেশগুলোতে ক্রিসমাস ও উইন্টার সিজনের অর্ডারগুলো এখন শিপমেন্টের পর্যায়ে রয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে পণ্য দিতে না পারলে পরে এই পণ্যগুলো নিয়ে তারা বিক্রি করতে পারবে না৷”
২০২০ সালের মার্চে প্রথম দফায় লকডাউন ঘোষণার সময়ও পোশাক কারখানাগুলো শতভাগ বন্ধ করতে হয়নি৷ এবার পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নেওয়ায় ১৪ দিনের লকডাউনে সব কারখানা এর আওতায় রাখা হয়েছে৷
ঈদের পর করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে৷ সোমবার ১৫ হাজার ১৯২ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷ আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে সর্বাধিক ২৪৭ জন মারা গেছেন৷
মহামারির মধ্যেও সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ে আগের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে৷ গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের (৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ৷ মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে৷
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই৷
এই পরিস্থিতিতে একাধিক রপ্তানিকারক জানান, কারখানাগুলোর সাপ্লাই চেইনে এমন অনেক অর্ডারও রয়েছে যেগুলোর প্রায় ৯০ শতাশ কাজ হয়ে গেছে; শুধু ফিনিশিং বা কার্টনিং বা প্যাকেজিং করলেই শিপমেন্ট দেওয়া সম্ভব৷ লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে এই কাজগুলো সম্পূর্ণ করার কথা ভাবতে হবে৷
বিজিএমএইর সিনিয়র সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পোশাক ব্যবসায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সরকারের কাছে বলেছি, যেসব অর্ডারের কাজ প্রায় চূড়ান্ত সেগুলো ক্ষুদ্র পরিসরে রপ্তানি উপযোগী করা হোক৷”
সময়মতো শিপমেন্ট দিতে না পারলে ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করার হুমকি দিচ্ছেন বলে জানান নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম৷
এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানান বিজিএমইএ সহ-সভাপতি আজিম৷ তিনি বলেন, “এই সংকট থেকে উত্তরণে সবচেয়ে বড় সমাধান হচ্ছে টিকা৷”
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতারও মনে করেন রপ্তানিমুখী পোশাক খাত সচল রাখতে শ্রমিকদের গণটিকাদানই একমাত্র সমাধান৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)