Home বাংলা নিউজ শুল্ক্কমুক্ত সুবিধার পরও চীনে পোশাক রপ্তানি কমেছে

শুল্ক্কমুক্ত সুবিধার পরও চীনে পোশাক রপ্তানি কমেছে

অতিমারি করোনার মধ্যেও তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রপ্তানি বেশি হয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাসহ ছোট-বড় প্রায় সব বাজারেই রপ্তানি বেড়েছে কম-বেশি হারে। এই প্রবাহের মধ্যেও উল্টো রথে চলছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি। দেশটিতে পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৮ শতাংশের মতো। অথচ গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বেশি হয়েছে ১৩ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ( ইইউ) বেড়েছে ১২ শতাংশ।\হগত বছরের জুলাই থেকে বাংলাদেশের শুল্ক্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধার আওতা বাড়িয়ে ৯৭ শতাংশ পণ্যে এই সুবিধা কার্যকর করেছে বেইজিং। এর আগ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ পণ্যে এই সুবিধা ভোগ করত বাংলাদেশ। নতুন করে অনেক পণ্যে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা ঘোষণার পর আশা করা হয়েছিল, বিশাল ভোক্তা বাজারের চীন হবে বাংলাদেশের পোশাকের অন্যতম প্রধান বাজার। অথচ বাস্তবতা পুরোপুরিই উল্টো। ২০২০-২১ অর্থবছরে চীনে ২৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। শতভাগ শুল্ক্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩৩ কোটি ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল আরও অনেক বেশি। ওই অর্থবছরে ৫১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে চীনে।

শুল্ক্কমুক্ত সুবিধায় চীনে কেন পোশাক রপ্তানি কমছে, তা নিয়ে দু’রকম ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা বলছেন, ৯৭ শতাংশ পোশাকে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। বাকি যে ৩ শতাংশ পণ্যে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা নেই সেগুলোও মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে বিভিন্ন সুতার কিছু জটিল ব্যাপার আছে কিছু কিছু আইটেমে। তবে রপ্তানি কমার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে করোনা নিয়ে বড় ধরনের সংকটে ছিল চীন। পোশাক রপ্তানিকারক দেশটি নিজেদের পণ্যেই চাহিদা মিটিয়েছে।\হতবে কিছুটা ভিন্নমত জানিয়েছেন বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) যুগ্ম মহাসচিব আল মামুন মৃধা। গতকাল সমকালকে তিনি বলেন, প্রধানত দুটি কারণে এখনও বাড়তি শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা কাজে আসছে না। প্রধান কারণ হচ্ছে, চীনের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর অবাধ বাণিজ্য চুক্তি রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (আরসিইপি)। এই চুক্তির ফলে সদস্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে শুল্ক্কমুক্ত আমদানি-রপ্তানি সুযোগ ভোগ করছে। এ কারণে এই জোটের বাইরে চীনের আমদানি-রপ্তানি কমছে। তৈরি পোশাকে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামও রয়েছে ওই চুক্তিতে। সিঙ্গাপুর ও জাপানের মতো দেশও রয়েছে। এ কারণে জাপানেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে।\হতিনি বলেন, শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা ঘোষণার পর ঢাকায় চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিজিএমইএর কাছে জানতে চাওয়া হয়, পোশাক খাতের কোনো পণ্য বাদ পড়েছে কিনা। বিজিএমইএ এ ব্যাপারে কোনো জবাব দেয়নি। তার মানে ধরে নেওয়া হয়েছে, নতুন কাঠামোয় পোশাক খাতের কোনো পণ্য বাদ পড়েনি। এর বাইরে চীনে পোশাকের রপ্তানি কমে যাওয়ার অন্য কারণ হিসেবে চীনাদের অতিসতর্কতা নীতির কথা বলেন তিনি। তার মতে, এ কারণে দু’দেশের মধ্যে আসা-যাওয়া প্রায় এক রকম বন্ধ। এতে আমদানি-রপ্তানিও ব্যাহত হচ্ছে। করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমে এলে বাণিজ্য প্রসারে রোডম্যাপ করাসহ আরও বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।\হবিশ্নেষকরা বলছেন, চীনে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্ক্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধাটা স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) জন্য বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) নেওয়া সিদ্ধান্তের অধীনেই পাওয়া গেছে। অর্থাৎ এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এই সুবিধাটা হারাবে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসির কাতার থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে। অবশ্য এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আরও তিন বছর এলডিসি হিসেবে শুল্ক্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।\হইপিবির রপ্তানি তথ্য থেকে দেখা যায়, চীনে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও অন্যান্য খাতে বেড়েছে। গত অর্থবছরে দেশটিতে মোট ৬৮ কোটি ডলারের বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি ডলার। তৈরি পোশাক ছাড়া চীনে রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে- পাট ও পাটপণ্য, চামড়াপণ্য, চিংড়ি, কাঁকড়া, কুচে, রাবার প্লাস্টিক ইত্যাদি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here