হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডেলিং সেবার মান বৃদ্ধির জন্য বিমানকে অনুরোধ করেছে তৈরি পোশাক মালিক ও রফতানিকারক সমিতি বিজিএমইএ। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের সঙ্গে তার বিমানবন্দরস্থ কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে এ অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
এ সময় বিজিএমইএ সভাপতির সঙ্গে সহ-সভাপতি মো. শহিদউল্লাহ আজিম, পরিচালক তানভির আহমেদ ও সাবেক পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন উপস্থিত ছিলেন। সভায় বাংলাদেশ বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণও উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনাকালে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘হজহরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে সংগঠিত আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের সিংহভাগই রফতানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের পণ্য চালানের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সমুদ্রপথের তুলনায় আকাশপথে রফতানি ব্যয়বহুল হলেও লিড টাইম মোকাবিলার জন্য উদ্যোক্তাদের আকাশপথে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পাঠাতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু অব্যবস্থাজনিত সমস্যার কারণে বর্তমানে পোশাক শিল্পের আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে কার্গো ভিলেজে পশ্চিমা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ইডিএস (এক্সপ্লোসিভ ডিটেক্টর স্ক্যানার) মেশিন না থাকা, বিমানবন্দর থেকে পণ্য নামানোর পর পণ্যগুলো খোলা আকাশের নীচে রাখা, ক্যানোপি’তে আমদানিকৃত মাল বিশৃঙ্খলভাবে রাখা ও পণ্যের কোনো মার্কিং না থাকা, ডকুমেন্ট অনুযায়ী মাল খুঁজে না পাওয়া- প্রভৃতি কারণে উদ্যোক্তারা সমস্যা মোকাবিলা করছেন।’ পোশাকশিল্পের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সাবলীল রাখার জন্য তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং সেবার মান বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি জানান, রফতানি পণ্য তাৎক্ষণিক স্ক্যানিং করার জন্য বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্থাপিত ইডিএস (এক্সপ্লোসিভ ডিটেক্টর স্ক্যানার) মেশিন নেই। যে ইডিএস মেশিনগুলো বর্তমানে আছে, সেগুলোও প্রায়ই যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে নষ্ট থাকে। ফলে, রফতানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অথচ ইডিএস স্থাপন বিষয়ে পশ্চিমা ক্রেতারা দীর্ঘদিন ধরে তাগিদ দিয়ে আসছে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘ইডিএস মেশিনের সংখ্যা বৃদ্ধি না করা হলে অদূর ভবিষ্যতে ক্রেতারা কলকাতা/দুবাই থেকে পণ্য স্ক্যানিং করার শর্ত জুড়ে দিতে পারে, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। একই সঙ্গে আমাদের অর্ডারগুলোও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।’ তিনি ইডিএস মেশিনগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও ইডিএস মেশিনের সংখ্যা বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি, যা শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। করোনাকালে সংকট মোকাবিলায় কার্গো হ্যান্ডেলিং চার্জ কমানোর উদ্যোগ গ্রহণের জন্যও বিমান কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়। কার্গো ভিলেজে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক সময় পণ্য বিমান থেকে নামিয়ে খোলা জায়গায় রাখার ফলে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়। এ ছাড়াও যথাস্থানে মার্কিং করে না রাখার কারণে পণ্য সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। পণ্য চালানগুলো খোলা আকাশের নিচে না রেখে বিজিএমইএ’র গুদাম/ক্যানোপি’তে যথাসম্ভব রাখা প্রয়োজন। সকল গুদাম ও ক্যানোপি’তে সারিবদ্ধভাবে মাল রাখার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে করে অধিক পরিমাণ পণ্য সংরক্ষণ করা যায়।
এসময় বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘কার্গো হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে অধিক সংখ্যক গ্রাউন্ড হেলপার ও স্টাফ অফিসার নিয়োগের বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তৈরি পোশাক রফতানি বাড়ছে, সেজন্য কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে বিমান কার্গো হ্যান্ডেলিং সেবার মান বৃদ্ধির জন্য সাম্প্রতিক সময়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল সম্প্রসারণের কাজ চলছে, যা আগামী দুই বছরের মধ্যে সমাপ্ত হবে। এটি সমাপ্ত হলে কার্গো হ্যান্ডেলিং ব্যবস্থপনা আরও উন্নত হবে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য কার্গো হ্যান্ডেলিং সেবার মান বৃদ্ধির বিষয়ে আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।’