অ্যাকর্ড অ্যান্ড অ্যালায়েন্সের উদ্যোগে দেশে তৈরি পোশাক খাতে কর্মপরিবেশের উন্নতি হয়েছে। এসব কারখানার ২২ শতাংশ এখনো পরিদর্শনের বাইরে হওয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। মাঝারি মানের কারখানায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। এসব কারখানা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে পোশাক খাতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিষয়ে যতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হয়, অন্যান্য খাতে ততটা নেই। এ কারণে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে সেজান জুসের কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তৈরি পোশাক খাত নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ভার্চুয়াল আলোচনায় গতকাল রবিবার এসব বিষয় উঠে আসে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বাংলাদেশ নিটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, ডিআইএফ ইন্সপেক্টর জেনারেল মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার, বাবুল আক্তার প্রমুখ।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘পোশাক খাতে নিরাপত্তার বিষয়ে ক্রেতাদের চাপ থাকে। সেজন্য এখানে নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক চাপ না থাকলে কমপ্লায়েন্স এবং নিরাপত্তায় উন্নতি করব না, তা তো হতে পারে না।’ এ ধরনের নিরাপত্তা যারা নিশ্চিত করবেন, তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘রানা প্লাজার ঘটনা নিরাপত্তা রক্ষার যে শিক্ষা দিয়েছে, পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাত সেই শিক্ষা নিয়েছে কি? উত্তর হলো, না।’ পোশাকের বাইরে রপ্তানিমুখী অন্যান্য শিল্প এবং স্থানীয় শিল্পের নিরাপত্তায় নজর দেওয়ায় গুরুত্ব দেন তিনি।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর ইউরোপের ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড এবং উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোট অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে কাজ করেছে। এতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বেড়েছে। কিন্তু একই সময়ে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার পর দায়িত্ব নেয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এ সময় কারখানার নিরাপত্তায় তেমন একটা অগ্রগতি হয়নি। প্রায় চার হাজার পোশাক কারখানার মধ্যে এখনো ২২ শতাংশ পরিদর্শনের বাইরে রয়ে গেছে। তিনি বলেন, পোশাক খাতে দুর্ঘটনা আবার বিস্তৃত হচ্ছে। দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষত আগে অগ্নি দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি হলেও সম্প্রতি দুর্ঘটনায় বৈদ্যুতিক ও কারখানা ভবনের অবকাঠামোগত বিষয়ও যুক্ত হচ্ছে। দুর্ঘটনা কমানোর ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে সে প্রশ্ন তুলে তিনি আরও বলেন, পুরো কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বয় জোরদার করা এবং এক্ষেত্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপার্টমেন্ট অব ইন্সপেকশন ফর ফ্যাক্টরিজ অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্টকে (ডিআইএফই) মূল দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘সেজান কারখানার ঘটনা দেখিয়েছে, আমরা এতদিন পোশাক খাত নিয়েই ভেবেছি, অন্য খাত নিয়ে নয়। এই ঘটনার পর সময় এসেছে পোশাক খাতের বাইরে স্থানীয় অন্যান্য শিল্প নিরাপত্তার আওতায় আনা। স্থানীয় শিল্পগুলোর ৯০ শতাংশই সেফটির বিষয়ে কনসার্ন নয়।’ এ সময় শ্রমিক প্রতিনিধিরা পোশাক খাতসহ অন্যান্য খাতে শ্রম নিরাপত্তায় বিভিন্ন পক্ষের দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরেন। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অ্যাকর্ড অ্যান্ড অ্যালায়েন্সের উদ্যোগে পোশাক খাতের অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছু শিল্প দুর্ঘটনা দেখা দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে অর্জিত অগ্রগতি ধরে রাখতে পারছি কি না।’ মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে পরিদর্শনের ক্ষেত্রে জনবলের ঘাটতি রয়েছে।