অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে তৈরি পোশাক খাত বর্তমানে একটি শক্তিশালী শিল্পে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, এ শিল্পে টেকসই উন্নয়ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে শ্রমিকদের কল্যাণ ও সুষম শিল্প সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এ কারণে এ শিল্প বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করতে পেরেছে। নেদারল্যান্ডসে ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিবিসিসিআই) আয়োজিত ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসা উদ্যোগের মাধ্যমে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের কল্যাণ’ শীর্ষক সেমিনারে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি এসব কথা বলেন। রোববার বিজিএমইএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ফারুক হাসান বলেন, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পোশাক শিল্পে শিশুশ্রম অপসারণ এবং নিম্নতম মজুরি নিশ্চিত করে যথা সময়ের মধ্যে মজুরি পরিশোধ, কর্ম পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখা এবং এ ধরনের আরও অনেক কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন শুরু হয়েছিল। আজ এ শিল্পটি কমপ্লায়েন্স ও শ্রম অধিকারের সব ইস্যুতেই নিবিড়ভাবে কাজ করছে। বিজিএমইএর নানা উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনায় যেন জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে শ্রমিকদের করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়, সে বিষয়েও বিজিএমইএ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আইএলও ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শের আলোকে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর জন্য স্বাস্থ্যবিধি/প্রটোকল প্রণয়ন করেছে এবং পোশাক কারখানাগুলো কঠোরভাবে এ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালিত হচ্ছে। কারখানাগুলো যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কি-না তা বিজিএমইএ থেকেও প্রতিনিয়ত নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। পোশাক শ্রমিকদের সংক্রমণ পরীক্ষায় বিজিএমইএ গাজীপুরের চন্দ্রায় বিশ্বমানের পিসিআর ল্যাব স্থাপন করেছে। এ কারণে শ্রমিকদের করোনা সংক্রমণের হার ০.০৩ শতাংশে রাখা সম্ভব হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ভবন ধসের পর আমাদের সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে শিল্পে স্থাপত্য, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনন্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, যাতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডসমূহ, আইএলও’র মতো দাতা সংস্থা সহায়তা প্রদান করেছেন। প্রত্যেক কারখানায় সেফটি কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রমিকদের পার্টিসিপেশন কমিটিও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় তহবিল গঠিত হয়েছে, যেখানে শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য পোশাক কারখানাগুলো তাদের রপ্তানি আয় প্রাপ্তির বিপরীতে ১ কোটি ডলার প্রদান করছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন ও শ্রমিকদের কল্যাণে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, হংকংভিত্তিক সাপ্লাই চেইন কমপ্লায়েন্স সল্যুশনস প্রোভাইডার, তার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইথিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং দেশ হিসেবে স্থান দিয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পে সবুজ শিল্পায়নে অনন্য নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিজিএমইএ “২০২১ ইউএসজিবিসি লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড” সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে। ২০৩০ এর মধ্যে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃস্বরণ ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনার অভিপ্রায় নিয়ে বিজিএমইএ ইউএন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি চার্টার ফর ক্লাইমেট অ্যাকশনের সাথে যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, শ্রম অধিকার ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে যে ভূমিকা পালন করছে, তা অসাধারণ। এ সময় পোশাক শিল্পে সব ধরনের সহায়তা দেয়ার জন্য ফারুক হাসান নেদারল্যান্ডস সরকারকে এবং শ্রমিকদের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের জন্যও নেদারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসএনভিকে ধন্যবাদ জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।