বাংলাদেশের তৈরি পোশাক-শিল্পের শ্রমিকদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা দেয়ার ব্যাপারে এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
রপ্তানিমূখী এই শিল্প থেকে বাংলাদেশ গত বছর ২ হাজার ৮শ কোটি ডলার আয় করে।
তাই মালিকদের পাশাপাশি সরকারও চাইছে মহামারীর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো চালু রাখতে।
কিন্তু গার্মেন্টসের বাইরেও অন্যান্য শিল্পের যে শ্রমিকরা আছেন, তাদের ক্ষেত্রে এমন কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী লকডাউন কার্যকর করা হলেও খোলা রাখা হয়েছে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি সব ধরণের শিল্প কারখানা।
সরকার বলছে শ্রমিকদের টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে গার্মেন্টস সংগঠনগুলো যেভাবে এগিয়ে এসেছে, অন্য শিল্পগুলো সেভাবে এগিয়ে আসেনি।
সম্প্রতি সংক্রমণের হার ক্রমে বাড়তে থাকায় এবং বাংলাদেশে টিকা আসতে শুরু করায় এই শ্রমিকদের দ্রুত টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের কীভাবে টিকা দেয়া হবে?
নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক তাহমিন আক্তার লিপি জানান তাদের কারখানায় এরই মধ্যে শ্রমিকদের নাম, ভোটার আইডি কার্ড ও ফোন নম্বর নিয়ে রেখেছে।
খুব শিগগিরই তিনি করোনাভাইরাসের টিকা পাবেন বলে আশা করছেন।
আপাতত অনলাইন নিবন্ধন ছাড়া শুধুমাত্র নামের তালিকা করে এই পোশাক শ্রমিকদের প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হচ্ছে।
ওই তালিকা দেখে সিভিল সার্জনরা টিকা দেবেন এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার আগেই তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে বলে জানা গেছে।
বিজিএমইএ এর সভাপতি ফারুক হাসান জানিয়েছেন যে, কুরবানির ঈদের আগে ঢাকার কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানার প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিককে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।
এখন তাদের লক্ষ্য হল দেশের ৪০ লাখ পোশাক শ্রমিকদের সবাইকে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা।
যেন শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারখানাগুলো খোলা রাখা যায়।
“আমাদের সব কর্মীদের অগ্রাধিকার দিয়েই টিকা দেয়া হবে। সরকারের ইচ্ছা আছে, সরকার সেভাবেই পরিকল্পনা করে টিকা আনছে। আস্তে আস্তে সব শ্রমিকদের টিকার আওতায় আনা হবে।”
এজন্য পোশাক রপ্তানির বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে, বিজিএমইএ চিঠি লিখে তাদের দেশের সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের কাছে টিকা চেয়েছে বলেও তিনি জানান।
অন্যান্য শিল্পের শ্রমিকরা কেন উপেক্ষিত?
বাংলাদেশে গার্মেন্টস খাতকেই সবসময় বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। টিকা দেয়ার ক্ষেত্রেও এমন বিশেষ সুবিধা দেয়ার বিষয়টি বেশ স্পষ্ট।
কিন্তু গার্মেন্টস শিল্পের বাইরেও অন্যান্য শিল্পে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কাজ করলেও তাদের টিকা দেয়ার ব্যাপারটি একদম উপেক্ষিত বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারের পক্ষ থেকেও যেমন কোন উদ্যোগ নেই, তেমনি মালিকদের পক্ষ থেকেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে জানান ট্যানারি শিল্পের ফিরোজ ইউসুফ।
লকডাউনের মধ্যেও বিশেষ করে কুরবানির ঈদের পর একদিনের জন্যও তার কারখানার মেশিন বন্ধ ছিল না।
কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই ওইসব কারখানার শ্রমিকদের দিনের পর দিন কাজ করে যেতে হচ্ছে। অথচ এতদিনেও টিকা পাওয়ার কোন আশ্বাস পাননি কেউ।
মি. ইউসুফ জানান, “গার্মেন্টসে সবাইকে যেমন বলছে যে টিকা দিবে। আমাদেরকে কেউ এমন বলছে না। না মালিক, না সরকার।”
“কিন্তু কারখানা খোলা থাকলে কাজে তো জয়েন করতেই হবে। নাহলে চাকরি থাকবে না। দুই সংকটে আছি।
”একদিকে চাকরির আতঙ্ক, আরেকদিকে করোনা আতঙ্ক,” বলেন তিনি।
সরকার কী বলছে?
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলছেন, গার্মেন্টস সংগঠনগুলো তাদের শ্রমিকদের টিকা দেয়ার ব্যাপারে এগিয়ে আসায় তাদেরকে টিকা দেয়ার ব্যাপারটি গুরুত্ব পাচ্ছে।
এক্ষেত্রে অন্যান্য শিল্প কারখানার মালিক বা সংগঠন এগিয়ে আসেনি। এ কারণে তারা পিছিয়ে আছে।
এসব শ্রমিকদের টিকার আওতায় আনার বিষয়টি পুরোপুরি টিকার প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করছে বলে, তিনি জানান।
“গার্মেন্টসের যে সংগঠন ও নেতৃবৃন্দ তারা এগিয়ে এসেছেন, ডাটাবেজ দিয়েছেন।
কিন্তু অন্য কারখানার কেউ এগিয়ে আসেনি। কিন্তু তারা নিজেদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে,” মিসেস সুলতানা বলেন।
“আমাদের সেবা সবার জন্য উন্মুক্ত যদি সে পরিমাণ টিকা হাতে থাকে।
কিন্তু সব শ্রমিককে দেয়ার মতো টিকা আমাদের হাতে নেই। টিকা হাতে পেলে সবাইকেই দেয়া হবে।”
ব্যক্তিগতভাবে নিবন্ধন করা যাবে কি?
এছাড়া কোন শ্রমিক চাইলে ব্যক্তিগতভাবে সুরক্ষা ওয়েবসাইটে প্রয়োজন তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করে, কিংবা টিকা কেন্দ্রে আইডি কার্ড দেখিয়ে স্পট রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে বলেও তিনি জানান।
ঈদের ছুটিতে টানা ১২দিন বন্ধ থাকার পর গত পহেলা অগাস্ট গার্মেন্টস কারখানাগুলো খুলে দেয়া হয়।
সবশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শনিবার থেকে বাকি কারখানাগুলো খুলে দেয়া হবে।
এমন অবস্থায় শ্রমিক সংগঠনের দাবি,সব শ্রমিকদের যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়।