Home বাংলা নিউজ চলতি বছর পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

চলতি বছর পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনাম। কয়েক বছর ধরেই তালিকায় দেশটির ওপরে অবস্থান করছিল বাংলাদেশ। তবে এবার বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে বিশ্বের শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভিয়েতনাম। একইসঙ্গে বড় অঙ্কের রপ্তানি আয় হারিয়ে দ্বিতীয় স্থান থেকে তৃতীয়তে নেমেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। ভিয়েতনামের পেছনে পড়ার কারণ হিসেবে দেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, করোনার কারণে গত বছর প্রায় এক মাস কারখানা বন্ধ ছিল। এ সময় বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কারখানা খুললেও ক্রয়াদেশ কম ছিল।তাছাড়া সে সময় ভিয়েতনামে করোনা সংক্রমণ কম ছিল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছর করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ঘোষিত লকডাউনের মধ্যেও পোশাক কারখানা বন্ধ থাকেনি। চলমান কঠোর লকডাউনেও গত ১লা আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পোশাক কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ফলে বরাবরের মতো রপ্তানি আয়ে পোশাক খাতের বড় ভূমিকা থাকার কথা ছিল। তবে প্রত্যাশিত পোশাক রপ্তানি না হওয়ায় একদিকে যেমন তালিকায় পিছিয়েছে, অন্যদিকে দেশের সার্বিক রপ্তানি আয়েও দারুণভাবে হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি প্রকাশ করা ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০২১’ নামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বৈশ্বিক বাজারে যত তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, তার ৬ দশমিক ৪ শতাংশ আসে ভিয়েতনাম থেকে। যা ২০১৯ সালে ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২০ সালে বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ দেখানো হয়। ২০১৯ এবং ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া ২০১০ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশের ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ আর ভিয়েতনামের ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও দেখানো হয়, ২০০০ সালে বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশ ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশে, আর ভিয়েতনামের ছিল শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। তবে বিগত দুই দশকের মধ্যে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বৈশ্বিক বাজারে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে ভিয়েতনাম। ফলে পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম এখন দ্বিতীয় অবস্থানে। দেশটি ২০২০ সালে ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। একই সময়ে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি থেকে আয় করেছে ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। সূত্রমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশের বেশি এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এ সময় নিট পোশাক রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে, প্রায় ২২ শতাংশ। আর ওভেন গার্মেন্টসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। তবে করোনার কারণে ২০২০ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের সম্মিলিত আয় কমেছে। এই সময়ে দেশগুলোর তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার, যা ২০১৯ সালে ছিল ৪১ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ডব্লিউটিও’র দেয়া তথ্য মতে, সব মিলিয়ে ২০২০ সালে শীর্ষ দেশগুলোর পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৪৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে ১১.১৯ শতাংশ কম, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬.৮৫ শতাংশ কম। ইপিবি’র তথ্যানুসারে, জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক, পাট ও পাটপণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত মাছ, কৃষি পণ্যসহ প্রায় সব খাতের রপ্তানি আয় কমেছে। ইপিবি বলছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশের ২৮৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার আয় হয়েছে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে আয় হয়েছে ১৬৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১২২ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। জুলাইয়ে এই খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩০১ কোটি ২৭ লাখ ডলার। আর গত অর্থবছরের জুলাইয়ে আয় হয়েছিল ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে গত অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে পোশাক খাত থেকে আয় কমেছে ১১.০২ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে কমেছে ৪.১৭ শতাংশ। নিটে কমেছে ৫.২৫ শতাংশ; ওভেনে ১৭.৮ শতাংশ। তবে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহীদ উল্লাহ আজিম মানবজমিনকে বলেন, করোনার কারণে গত বছর প্রায় এক মাস কারখানা বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কারখানা খুললেও ক্রয়াদেশ কম ছিল। তাছাড়া সে সময় ভিয়েতনামে করোনা সংক্রমণ কম ছিল। সেই কারণে তাদের রপ্তানিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। এই সুযোগকে কাজিয়ে লাগিয়ে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে তারা। তবে ভিয়েতনাম যে আমাদের থেকে এগিয়েছে; ১০০ কোটি ডলার যে আমাদের থেকে বেশি ছিল, সেটা ২০২০ এর রিপোর্ট। আমরা চলতি বছরের গত ৫ মাসে ৭৮৬ মিলিয়ন ডলার বেশি আয় করেছি। এই মাসেই আমরা এগিয়ে গিয়েছি। ১০ মিলিয়ন ডলারে পিছিয়ে ছিলাম তো, এখন আমরা ৭৮৬ মিলিয়ন ডলারে চলে এসেছি, প্রায় ১ বিলিয়নের কাছাকাছি। এখন বিষয় হল এই লকডাউন আসলে কোনো কাজে দেবে না, দরকার হলো টিকা দেয়া। এরপর কারখানা নিয়মিত চললে অবশ্যই আমরা তাদের থেকে আরও ভালো করবো। ইতিমধ্যেই আমরা এগিয়ে গেছি, আরও এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here