কৃত্রিম তন্তুর কাপড়ে অনেক ধরনের ফ্যাশনেবল পোশাক করা যায়, যা কটন কাপড়ে হয় না। সে কারণে কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা বাড়ছে বিশ্বব্যাপী। সুযোগটা নিতে না পারলে আমরা ট্রেন মিস করব। চীন, ভিয়েতনাম ও ভারত এরই মধ্যে অনেক কিছু করে ফেলেছে। কৃত্রিম তন্তুর জন্য আমাদের সংযোগশিল্পকে শক্তিশালী ও সম্প্রসারণ করতে হবে। সেজন্য নীতি সহায়তা সরকারের পক্ষ থেকে খুব বেশি প্রয়োজন।
বিশ্বে খেলাধুলার পোশাক বা স্পোর্টসওয়্যার রেইনকোটসহ আউটারওয়্যারের শতভাগই এখন কৃত্রিম তন্তুনির্ভর। সব মিলিয়ে বিশ্বে তৈরি পোশাকের মধ্যে ৭৮ শতাংশ বেশি হচ্ছে কৃত্রিম তন্তু থেকে। করোনার কারণে কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা আরও বেড়েছে। এ ধরনের পোশাক যেমন দ্রুত ঘাম চুষে নেয়, তেমনি আরামদায়কও। তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও চীন এখন শতভাগই কৃত্রিম তন্তুনির্ভর। এ ধরনের সুতা তৈরিতে বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা অনেক কাজ করেছেন। তাই মানের দিক থেকে কৃত্রিম তন্তুর সুতায় অনেক বৈচিত্র্য আসবে। অন্যদিকে তুলার তৈরি সুতা যেহেতু প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি, তাই সেখানে বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ অনেক কম।
বিজ্ঞানীদের কথা: ১৮৯৪ সালে কৃত্রিম সিল্কের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। মাত্র দুই বছর এটির ব্যবসা করা সম্ভব হয়েছিল। ফ্রান্সের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও শিল্পপতি হিলাইরে দ্য চার্ডোনের উদ্ভাবিত কৃত্রিম তন্তুর একটি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছিল। ১২৭ বছর আগের ঘটনা। এখন এ ঘটনার বাস্তবতা নেই। প্রাকৃতিক তুলা বা কটনের তৈরি পোশাকের রাজত্বে বর্তমানে নতুন করে বিশাল উপস্থিতি জানান দিয়েছে ম্যানমেড ফাইবার বা কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাক।
কৃত্রিম তন্তুর চাহিদা: বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প শতভাগ কটনের ওপর নির্ভরশীল। এখনও আমাদের রপ্তানির সিংহভাগই কটননির্ভর সুতা থেকে হয়। আমাদের দেশে শতভাগ কটন সুতার মিল গড়ে উঠেছে অনেক। আমাদের দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের চার ভাগের তিন ভাগই কটনের। তবে ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশের বাস্তবতা অনেকটা ভিন্ন। ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ১৯ হাজার থেকে ২০ হাজার কোটি ডলারের কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানি হয়। ২০২৫ সালে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৪০ হাজার কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চ এ ধরনের তথ্য দিয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারার ফেডারেশনের (আইটিএমএফ) তথ্য অনুযায়ী মোট পোশাকের ৭৮ শতাংশই কৃত্রিম তন্তুর, বাকি ২২ শতাংশ তুলার তন্তুর।
কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধির অনেক কারণ রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ক্রেতাদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তুলা উৎপাদনে প্রচুর পরিরমাণ পানি ও জমি প্রয়োজন হয়। তারপর কাপড়ে রং কিংবা ধোঁয়া বা ওয়াশে প্রচুর পানির ব্যবহার হয়। এই কারণে তৈরি পোশাকশিল্পের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি করা পোশাকের দিকে ঝুঁকছে। অন্য একটি বড় কারণ হলো দ্রুত ফ্যাশনের পরিবর্তন। নিত্যনতুন পোশাক তৈরিতে কৃত্রিম তন্তুর জুড়ি নেই। তাছাড়া এটি আরামদায়ক, টেকসই, দেখতে সুন্দর এবং নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহজে করা যায়।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্প: মূলত ১৯৭৬ সাল থেকে তৈরি পোশাকশিল্পের যাত্রা শুরু। ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশ বলতে গেলে সরাসরি তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু করে। আজ বিশ্বে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ। প্রথম চীন ও তৃতীয় ভিয়েতনাম। কিন্তু কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানিতে চীন তো দূরের কথা, ভিয়েতনামের থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমানে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাকে ভিয়েতনাম বিশ্বের ১০ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাঁচ শতাংশেরও কম রপ্তানি করছে।
তবে দেরিতে হলেও ধীরে ধীরে তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে আসছেন। ভবিষ্যতে কৃত্রিম তন্তুর পোশাক বড় বাজার দখল করবে। তাই তৈরি পোশাকশিল্প নতুন মাত্রা পাবে। ধীরে ধীরে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ খাতে বিনিয়োগ করবে। বড় বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ব্যবসাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে কৃত্রিম ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত তন্তুর দিকে ঝুঁকছে। ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের শুধু সুতার তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর করে থাকার সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
তুলা থেকে সুতা, কৃত্রিম তন্তু কেমন করে: আমরা জানি তুলা থেকে সুতা হয়, তা দিয়ে পোশাক তৈরি এবং রপ্তানি হয়। বাংলাদেশে তুলা উৎপাদন নেই বললেই চলে। সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর আমাদের দেশের স্পিনিং মিলগুলো।
তুলার মতো কৃত্রিম তন্তুও গাছ, বাঁশ বা কাঠ থেকে হতে পারে। কৃত্রিম তন্তু দুই প্রকারÑন্যাচারাল পলিমার ও সিনথেটিক পলিমার ফাইবার বা তন্তু। বিভিন্ন রকম গাছ, কাঠ বা বাঁশ অর্থাৎ উদ্ভিদজাত তন্তু মূলত ন্যাচারাল পলিমার ফাইবার। এ ধরনের তন্তুর মধ্যে ভিসকস, নেসিল ও মোডাল বেশ জনপ্রিয়। এসব তন্তুর সঙ্গে বিভিন্ন মাত্রায় তুলা মিশ্রণ করে সুতা উৎপাদন করা হয়। তবে উদ্ভিদজাত হওয়ায় অনেকে এটিকে কৃত্রিম তন্তু বলতে চাচ্ছে না।
অন্যদিকে পেট্রোকেমিক্যাল থেকে সিনথেটিক পলিমার ফাইবার হয়। এ ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল বেশি ব্যবহার করা হয়। সিনথেটিক তন্তুর মধ্যে পলিয়েস্টার ও নাইলন বেশি জনপ্রিয়। এসব তন্তু থেকে সুতা তৈরি করে জ্যাকেট, রেইনকোট, স্পোর্টসওয়্যার, অন্তর্বাসসহ নানা ধরনের পোশাকের কাপড় উৎপাদিত হয়। তাছাড়া সিনথেটিক ফাইবারের সঙ্গে তুলার মিশ্রণ ঘটিয়ে টি-শার্ট, শার্ট, প্যান্টসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় তৈরি করা হয়।
দেশে কৃত্রিম তন্তুর আমদানি: বিশ্বের সেরা তৈরি পোশাক আমদানি প্রতিষ্ঠানের চাহিদার কারণে বাংলাদেশে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাকের উৎপাদন ও রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। দেশে মাত্র তিন-চারটি বস্ত্রকল কৃত্রিম তন্তু উৎপাদন করছে। অধিকাংশ স্পিনিং মিল বিদেশ থেকে পলিয়েস্টার, স্টাপল ফাইবার, ভিসকস স্ট্যাপল ফাইবার ও টেনসিল তন্তু আমদানি করে সুতা ও কাপড় উৎপাদন করছে।
বিটিএমএ তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে ২৯ হাজার ১৪৬ টন ভিসকস স্ট্যাপল ফাইবার আমদানি হয়েছিল। গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে তা বেড়ে ৫৩ হাজার ২৮৯ টনে উন্নীত হয়েছে, যার আমদানি মূল্য ৮৮৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার আমদানি হয়েছে ৭৮ হাজার ২০৮ টন। গত বছর হয়েছে ৯৬ হাজার ৭৭ টন। এই পরিমাণ পলিয়েস্টার স্টাপল ফাইবাবেরর বাজারদর ৯২৭ কোটি টাকা।
এ খাতে নতুন বিনিয়োগ: কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনে দেশের বস্ত্রশিল্পের উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছেন। কভিডকালেও বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনে শিল্পে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। ডিবিএল এরই মধ্যে ৫৬২ কোটি টাকা এ খাতে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এনজেড টেক্স গ্রুপ কৃত্রিম তন্তু আমদানি করে প্রথমে ভিসকস, টেনসিল ও মোডাল সুতা এবং তা দিয়ে কাপড় তৈরি করছে। প্রতি বছর এই গ্রুপের ব্যবসা ৩০ শতাংশ হারে বাড়ছে। নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় প্রতিষ্ঠানটি ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্লাস্টিকের বোতল থেকে পলিয়েস্টার তন্তু উৎপাদন করবে।
ধীরে ধীরে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এই তন্তু উৎপাদনে নতুন করে বিনিয়োগ করবে। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রাখার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনা থাকে। সেই অনুযায়ী আগামী বছরগুলোয় এ খাতে অনেক বেশি বিনিয়োগ হবে বলে আশা করা যায়।
ভারত কীভাবে এগোচ্ছে: তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভারত বাংলাদেশ থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। তবে কৃত্রিম তন্তু পোশাকের ব্যবসা ধরতে ভারতের ব্যবসায়ীরা নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। সরকারও বেশ সহযোগিতা করছে। বর্তমানে দেশটি বছরে ১৬০ কোটি ডলার কৃত্রিম তন্তু পোশাক রপ্তানি করছে। পোশাক ও বস্ত্র খাতের রপ্তানি শক্তিশালী করার জন্য ভারত তিন বছরে সাতটি বড় আকারের টেক্সটাইল পার্ক বা বস্ত্রপল্লি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। একেকটি পল্লি এক হাজার একরের বেশি জমিতে গড়ে তোলা হবে। সেখানে বিশ্বমানের অবকাঠামো থাকবে। সেইসঙ্গে বস্ত্র খাতের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনে ১০ হাজার ৬৮৩ কোটি রুপির প্রণোদনা স্কিমের পরিকল্পনা ভারত নিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ২০২১-২২ বাজেট ঘোষণার সময় ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
আমাদের কী করণীয়: দেশে কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনে নতুন করে বিনিয়োগে বিটিএমএ ও বিজিএমইএ নানা প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করছে। বিজিএমই তৈরি পোশাকের কৃত্রিম তন্তুর বাজার ধরতে বিগত বাজেটে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা চেয়েছিল। কিন্তু সরকার বিষয়টির গভীরে গিয়ে চিন্তা করার সুযোগ পায়নি। বিজিএমই ধারণা ছিল, এই সহযোগিতা ফেলে তৈরি পোশাক শিল্প খাত অতিরিক্ত ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে সক্ষম হতো।
লিওটাইমের বাধ্যবাধকতার কারণে আমাদের দেশে উদ্যোক্তাদের অবশ্যই কৃত্রিম বা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত তন্তু, সুতা ও কাপড় উৎপাদনে নতুন করে অবশ্যই বিনিয়োগ করতে হবে। এ-জাতীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান করতে গেলে কমপক্ষে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকায় প্রয়োজন। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। তাছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এ খাতে বিশেষ বিনিয়োগে এগিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ৮০টি বস্ত্রকল পলিয়েস্টার, ভিসকস, টেনসিল, মোডালসহ বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম তন্তু, সুতা ও কাপড় উৎপাদন করছে। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০টি, বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বৃদ্ধি পেয়েছে।
চীনের শিল্পোদ্যোক্তাদের এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী করা যায়। দেশে প্রতি বছর ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি ডলারের ওভেন কাপড় আমদানি করতে হয়। ওভেন কাপড়ের উৎপাদনে করমুক্ত ঘোষণা করতে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। তখন কৃত্রিম তন্তু পোশাক রপ্তানিতে আমাদের অবদান সংহত হবে।
অন্যদিকে দেশের বাজারে কৃত্রিম তন্তুর সুতা বিক্রিতে ছয় টাকা এবং কাপড়ে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এই ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়া প্রয়োজন। তাতে এ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।
প্লাস্টিক বোতল থেকে যেহেতু এই সুতা তৈরি করতে হয়, তাই এখন দেশে হাজার কেজি প্লাস্টিক বোতল প্রয়োজন। কিন্তু দেশে পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত প্লাস্টিক বোতল আমদানির সুবিধা দেয়া প্রয়োজন।
সরকারের নীতি ও সহযোগিতা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ভ্যাট ও কর এ খাত থেকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করে নেয়া প্রয়োজন। তখন নতুন নতুন বিনিয়োগ এ খাতে সহজে করতে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবেন।
বর্তমান সরকার ১০০টি বিশেষ রপ্তানি অঞ্চল তৈরি করছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি রপ্তানিও শুরু করেছে। কৃত্রিম তন্তু তৈরি করার জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ রপ্তানি অঞ্চল নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। তাতে নানা সুবিধা থাকবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাতে শিল্প স্থাপন করবেন। তখন কৃত্রিম তন্তু দেশে উৎপাদিত হলে তৈরি পোশাকশিল্পের মূল কাঁচামালের সংকট আর থাকবে না। তখন বিদেশি রপ্তানি আদেশও বেশ পাওয়া যাবে। লিডটাইম কমে যাবে। আমদানিকারকদের চাহিদা মোতাবেক তৈরি পোশাক রপ্তানি করা যাবে। দেশে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে, বিদেশি মুদ্রা অর্জনও বেড়ে যাবে।
২০২০-২১ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৮৫৬ কোটি ডলার। কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারলে এই রপ্তানি অর্থ দ্বিগুণে পরিণত হবে। তা ছাড়া ভারত, চীন ও ভিয়েতনাম এই বাজার একবার দখল করে নিতে পারলে আমরা ফাঁকে পড়ে যাব। আমরা যে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খোলার উজ্জ্বল আলো দেখতে পাচ্ছি, তা হারিয়ে ফেলতে পারি। সরকারকে নীতিগত সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
সবশেষে এই খাতের উন্নতির জন্য ডিজাইন, ফ্যাশন ও প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে জাতীয়ভাবে একটি ইনস্টিটিউট স্থাপন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ভারত, চীন ও ভিয়েতনাম এগিয়ে আছে। আমরা এখনও এ-জাতীয় ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগও নিতে পারিনি। রপ্তানি বৃদ্ধির স্বার্থে গবেষণা ও ফ্যাশন ইনস্টিটিউট স্থাপন করার জন্য বিজিএমইএ, বিটিএমএ, বিকেএমইএ-সহ সব ব্যবসায়ী সংগঠনের দ্রুত এগিয়ে আসা প্রয়োজন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের অর্জনের খাতায় ‘কৃত্রিম তন্তু তৈরি’ ও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শক্ত অবস্থানে পৌঁছানোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শুরু হোক।