Home বাংলা নিউজ উচ্চ পরিবহন খরচে বাড়তি চাপে পোশাক রপ্তানিকারকরা

উচ্চ পরিবহন খরচে বাড়তি চাপে পোশাক রপ্তানিকারকরা

বৈশ্বিক অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পর ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত খরচের মুখোমুখি হচ্ছেন।

ছয় থেকে সাত টন মালামাল পরিবহণে সক্ষম ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানগুলো ঢাকা ও তার আশেপাশের এলাকাগুলো থেকে চট্টগ্রামে তৈরি পোশাক পরিবহনের জন্য ভাড়া হিসেবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে।

ঈদের আগে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ার কারণে এই খরচ বেড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

স্বাভাবিক সময়ে এই ভাড়া থাকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে।

পরিবহণ খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় পোশাক রপ্তানিকারকরা, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলশ্রুতিতে তারা বেশ বড় আকারের ঝামেলার মুখে।

পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার এ সময়ে অতিরিক্ত পরিবহণ খরচ তাদের দুর্দশা বাড়িয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো কোনো অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করছে না।

কাপ্পা ফ্যাশনওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান আহমেদ ফজলুর রহমান বলেন, ‘গত তিন মাসে লকডাউন, ঈদের ছুটি ও বন্দরে কন্টেইনারের স্বল্পতার কারণে ভাড়ার পরিমাণ খুবই অস্থিতিশীল ছিল।’

তিনি জানান, এর ফলশ্রুতিতে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের চাহিদা ছিল অস্বাভাবিক বেশি।

উদাহরণ দিয়ে ফজলুর বলেন, ‘আমি ঈদের আগে জরুরি চালান নিশ্চিত করতে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে একটি ট্রাক ভাড়া করেছি।’

তিনি আরও জানান, ঈদের আগে কাভার্ড ভ্যানের চাহিদা বেড়ে যায় এবং পরিবহণ প্রতিষ্ঠানগুলো সেই সুযোগের অপব্যবহার করে।

ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার বখতিয়ার উদ্দীন আহমেদ জানান, ঈদের ছুটির পর তিনি তাদের নারায়ণগঞ্জ কারখানা থেকে বন্দরে পণ্য পরিবহনের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন।

ইডো মিয়া ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির ব্যবস্থাপক আবদুল হান্নান স্বীকার করেন, চাহিদা বাড়ার কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে।

এ ছাড়াও, কয়েক সপ্তাহ আগে বন্দরে যানবাহনের জট ছিল। ফলে, অসংখ্য কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক বন্দর এলাকায় কয়েকদিন আটকে ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

‘জটের কারণে মাঝে মাঝে পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানগুলো চার থেকে পাঁচ দিন আটকে থাকে’, বলেন হান্নান।

হান্নান আরও জানান, ঈদুল ফিতরের পরে সবচেয়ে বেশি ভাড়া বেড়েছে। প্রতিটি কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ১৪ হাজার থেকে বেড়ে ৩০ হাজার টাকা হয়েছে।

পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়ার জন্য তিনি যানবাহনের অস্বাভাবিক জটকে দায়ী করেন।

তিনি জানান, আমদানির পরিমাণ কমে গেলে বন্দরে মাল খালাসের গতি কমে যায় এবং ভাড়াও কমে আসে।

এএম ট্রান্সপোর্টের মালিক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি এখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কাভার্ড ভ্যান প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিচ্ছে। এই ভাড়ার পরিমাণ সর্বশেষ লকডাউনের আগে ১৩ হাজার ৫০০ থেকে ১৪ হাজারের মধ্যে থাকতো।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে।

বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মকবুল আহমেদ বলেন, ‘যখন চাহিদা বাড়ে, তখন আমরা বেশি ভাড়া নেই। ভাড়ার পরিমাণ নির্ভর করে মূলত পণ্য আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণের ওপর।’

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানান, গত আট বছরে বিভিন্ন কারণে উৎপাদন খরচ ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

‘এখন এই উচ্চ পরিবহন খরচ পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য বাড়তি সমস্যা সৃষ্টি করছে।’

খালি কন্টেইনারের সংকট ও বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ার কারণে নৌপথে পরিবহনের খরচ বর্ধনশীল অবস্থায় আছে। এ কারণে সার্বিকভাবে আমদানি ও রপ্তানি, উভয় ক্ষেত্রেই খরচ বেড়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চীনের সাংহাই বন্ধরে নৌপথে পণ্য পরিবহনের খরচ ৪০০ শতাংশ বেড়েছে। ফলশ্রুতিতে, পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ৪০ ফুট দীর্ঘ একটি কন্টেইনারের ভাড়া হিসেবে চার হাজার থেকে চার হাজার ২০০ ডলার দাবি করছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, আগে এই ভাড়ার পরিমাণ ছিল এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ ডলারের মধ্যে।

তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় চাহিদা বেড়েছে এবং ফলশ্রুতিতে পরিবহণ খরচও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।’

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, কেউ তাদেরকে অস্বাভাবিক হারে পরিবহন খরচ বাড়ার ব্যাপারে জানায়নি।

তিনি বলেন, ‘কেউ যদি এফবিসিসিআইয়ের কাছে অভিযোগ জানায়, তাহলে আমরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য একটি বৈঠকের আয়োজন করবো।’

তিনি আরও বলেন, লকডাউন প্রত্যাহারের কারণে ধীরে ধীরে ভাড়া কমে আসছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here