করোনা মহামারির মধ্যে শ্রমিক সুরক্ষার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিক কর্মচারিরা। সরকারের গণটিকা কার্যক্রমের কারণে এতে কিছুটা গতি কম থাকলেও সব শ্রমিক দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন কারখানা মালিক ও নেতারা।
এক্ষেত্রে টিকার সংকট বা জটিলতা নেই বলেও দাবি তাদের। সমস্যা এড়াতে আমদানিকারক দেশের কাছে টিকা এবং করোনা পরীক্ষার উপকরণ চেয়ে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ। সেই চিঠির ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া মিলেছে।
খাত সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা বলছেন- শ্রমিকের কারখানা ভিত্তিক তালিকা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে টিকা কার্ক্রম শুরু হয়েছে। শ্রমিক নেতারা দাবি করছেন- টিকা বিষয়ে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা হয়নি। সরকারের যে সিদ্ধান্ত আছে, স্বাভাবিক টিকা (গণটিকা) দেওয়া সেটির মাধ্যমে চলছে। কয়েকটি স্থানে কারখানাভিত্তিক টিকাদান করা হলেও সার্বিকভাবে তা এখনো শুরু হয়নি।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘টিকা কার্যক্রম চলছে। টিকাকেন্দ্রে শ্রমিকদের জন্য আলাদা টিকা বুথ করা হয়েছে। সেখানে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আবার নিজস্ব বা কারখানায়ও দেওয়া হচ্ছে। সমন্বিত গণটিকা কার্যক্রমের কারণে কিছুটা গতি কম মনে হচ্ছে। অন্যদিকে আমরা ক্রেতা দেশের কাছ থেকে টিকা চেয়েছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। শ্রমিকদের টিকার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি, আশা করছি হবে না।’
এক্ষেত্রে মালিকদের আগ্রহের কোনো ঘাটতি আছে কি না জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের এই নেতা বলেন, ‘আমাদের আগ্রহ থাকবে না কেন? অবশ্যই আগ্রহ আছে। বিষয় হচ্ছে- টিকা কীভাবে দেওয়া হবে, কোনটা কোন সময় সংরক্ষণ ও বিতরণের সেই বিষয়ে অনেক নিয়ম মানতে হচ্ছে। আমরা আন্তরিক। নিয়ম মেনে সব তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে টিকা দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার সবার জন্য কাজ করে। শুধু আমাদের খুশি করলে হবে না। তাই যে পরিমাণ টিকা আছে, তার হিসাব নিকাশ করেই খুব সচেতনভাবে সার্বিক কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।’
ফারুক হাসান বলেন, ‘আমাদের গার্মেন্টস কর্মীরা তাদের অফিসে টিকা নিচ্ছেন। তাদের কাজের জায়গায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টিকা নিচ্ছেন।’
ঠিক কত দিনের মধ্যে এটি সম্পূর্ণ হবে সে বিষয়ে সুনিদিষ্ট সময় এবং এখন পর্যন্ত কতজন টিকা গ্রহণ করেছেন তার সংখ্যা হিসাব করা হয়নি বলে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান কারখানা মলিকদের এক চিঠিতে বলেছেন- করোনা প্রতিরোধকল্পে সকল শ্রমিকদের ভ্যাকসিন গ্রহণ নিশ্চিত করতে আপনার কারখানা এলাকার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে (শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ জেলার জন্য) ও সিভিল সার্জনের (অন্যান্য সকল জেলা) কাছে লেটার হেড প্যাডে প্রতিষ্ঠানের নাম, কন্ট্রাক্ট পারসনের নাম, পদবী ও নম্বর এবং শ্রমিকদের তালিকাসহ আবেদন করুন। আবেদনের একটি অনুলিপি বিকেএমইএ -তে প্রেরণ করুন। দ্রত ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে বিকেএমইএ অনুঘটকের কাজ করবে। গত ৮ আগস্ট (রোববার) বিকেএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বিভিন্ন কারখানার মালিকদের মধ্যে ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি রাইজিংবিডিকে বলেন, শ্রমিকের টিকা বিষয়ে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা হয়নি। সরকারের যে সিদ্ধান্ত আছে, স্বাভাবিক টিকা দেওয়া, সেটির মাধ্যমে চলছে (শ্রমিকের টিকা)। তবে কিছু কারখানায় টিকা দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি হচ্ছে- শিল্পের স্বার্থে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব শ্রমিক ভাই-বোনদের যেন টিকা দেওয়া হয়। বিজিএমইএ ও অন্য বাণিজ্য সংগঠনের কাছে শ্রমিকদের যে তালিকা আছে তার ভিত্তিতে এটি বাস্তবায়ন করার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই খাতে করোনার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যদি হয়ে যায়, তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। বিপজ্জনক হয়ে যাবে।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে পোশাক শ্রমিকদের জন্য টিকা এবং অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট পাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছে বিজিএমইএ।
বিজিএমইএ সভাপতি রাইজিংবিডিকে জানান, বাংলাদেশে অবস্থানরত ক্রেতা দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারদের কাছে টিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এক সময় আমরা নিজেরা শ্রমিকদের জন্য টিকা কিনতে চেয়েছিলাম। এখন সরকার ঘোষণা দিয়েছেন- বিনামূল্যে সবাইকে টিকা দেবে। এজন্য আমরা রাষ্ট্রদূতদের অনুরোধ করেছি, তাদের সরকার যেন আমাদের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে টিকা পাঠায়। এতে একদিকে শ্রমিক সুরক্ষা বাড়বে এবং উৎপাদন ও রপ্তানি ঠিক থাকে। অন্য একটি চিঠি আমরা ক্রেতাদের কাছে পাঠিয়েছি। যেন তারা নিজ দেশের সরকারকে আমাদের শ্রমিক সুরক্ষার বিষয়ে অবহিত করেন। সরকারকে টিকা দিয়ে সহায়তা করতে তাদের সরকারের উপর চাপ তৈরি করে। ’
এছাড়া ক্রেতাদের কাছে আলাদাভাবে করোনা পরীক্ষার কিট এবং ঔষধের সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান ফারুক হাসান।