করোনা সংকট কাটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও ১৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে জানেনই না। এছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে জানলেও ৬৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কোনও টাকা পায়নি। অর্থাৎ ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা পায়নি ৭৯ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। মাত্র ২১ শতাংশের মতো প্রতিষ্ঠান প্রণোদনার অর্থ পেয়েছে। আর প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা দিতে ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর কাছে ঘুষ চাওয়া হয়েছে।
শনিবার (২৮ আগস্ট) অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। ‘কোভিড-১৯ এবং বাংলাদেশে ব্যবসায় আস্থা’ শীর্ষক জরিপের ৫ম ধাপের ফলাফলে এসব তথ্যে উঠে এসেছে।
গত এপ্রিল থেকে জুনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত জুলাইয়ে ৫০১টি প্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ করা হয়। দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন এই জরিপে সহায়তা করেছে।
জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে সানেম বলেছে, প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা দিতে কারও কারও কাছে ঘুষও চাওয়া হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তাদের কাছে ঘুষ চাওয়া হয়েছে। জরিপে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রতিনিধিদের প্রশ্ন করা হয়েছিল—তারা নিজেরা (নিয়োগ কর্তা) এবং কর্মীদের কত শতাংশ টিকা পেয়েছেন? জবাবে ৬০ শতাংশই মালিক জানিয়েছেন, তারা কমপক্ষে এক ডোজ টিকা নিয়ে ফেলেছেন। আর কর্মীদের মধ্যে মাত্র সাড়ে ২৫ শতাংশ টিকা পেয়েছেন। ৭৫ শতাংশ কর্মী টিকার একটি ডোজও পাননি। তৈরি পোশাক খাতের কর্মীদের প্রতি পাঁচজনে একজন মাত্র টিকা নিতে পেরেছেন।
জরিপের মূল বিষয় ছিল ব্যবসার আস্থা। সানেম বলছে, গত এপ্রিল-জুন মাসে কোভিড পরিস্থিতি আগের প্রান্তিকের তুলনায় খারাপ ছিল। তাই ওই প্রান্তিকে ব্যবসায়ীদের আস্থা কমে মাত্র ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে। আগের প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) তা ছিল প্রায় ৫৮ শতাংশ। তাহলে কোভিডের কারণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া কেমন ছিল? এই প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া ৬৪ শতাংশ ব্যবসায়ী। তারা মনে করেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দুর্বল। ২৭ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, মোটামুটি মানের পুনরুদ্ধার হচ্ছে। আর ৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর মতে, পুনরুদ্ধারের ধরন শক্তিশালী।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি শ্লথ। কোভিড সংকট শিগগিরই শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই নতুন এই পরিস্থিতির সঙ্গে সমন্বয় করে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল ঠিক করতে হবে। ঢাকায় যে ধরনের লকডাউন প্রযোজ্য হবে, রংপুরে সে ধরনের লকডাউন প্রযোজ্য নয়। আবার তৈরি পোশাক খাতের জন্য একধরনের কৌশল লাগবে, অন্যদের ক্ষেত্রে তা হয়তো প্রযোজ্য হবে না। তাই সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কৌশল ঠিক করতে হবে।