দেশব্যাপী কঠোর বিধি-নিষেধ, ঈদের ছুটি এবং বন্দরে কনটেইনারজটের কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে দেশের রপ্তানি আয়। এ সময়ে দেশের রপ্তানি কমেছে ১১.১৯ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭২ কোটি ৯০ লাখ ডলার, আয় হয়েছে ৩৪৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। এ আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৬.৮৫ শতাংশ কম। গত বছরের জুলাইয়ে মোট রপ্তানি আয় ছিল ৩৯১ কোটি ডলার। গতকাল মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক উত্পাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ের বড় বাধা ছিল লকডাউন। এ সময় কারখানা খোলা রাখা গেলে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বড় রপ্তানির রেকর্ড করা যেত।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঈদের আগে ১৮ জুলাই পর্যন্ত ২০১৯ সালের করোনার সময়ের চেয়ে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। আমাদের পরিসংখ্যানে এটা দেখা যায়।’
ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকে জুলাই মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে মাত্র ২৮৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এ আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪.১৭ শতাংশ কম এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ কম হয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাইয়ে পোশাক খাতে আয় ছিল ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ডলার।
এই সময়ে নিট পোশাকে আয় হয়েছে ১৬৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.২৫ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে এ সময়ে আয় ছিল ১৭৫ কোটি ডলার। ওভেন পোশাকে আয় হয়েছে ১২২ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭.৭৯ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের আয় ছিল ১৪৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোশাক ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তা ও ওয়েল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশব্যাপী কঠোর বিধি-নিষেধ এবং ঈদের ছুটির জন্য চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই বড় ধাক্কা খেয়েছে দেশের রপ্তানি আয়। এতে প্রায় ১৫ দিন রপ্তানিকাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাত এখনো মৌলিক পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। মূল্যে সংযোজন করা না গেলে ভিয়েতনাম আমাদের যেভাবে টপকে বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে গেছে, সামনে আরো পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনই পোশাকের মূল্য সংযোজন করা জরুরি। এ জন্য কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাকে জোর দিতে হবে। সরকার এ জন্য নীতি সহায়তা দিতে পারে।’
হালনাগাদ পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, প্রধান প্রায় সব রপ্তানি আয়ের খাতেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দিয়ে যাত্রা শুরু করেছে চলতি অর্থবছররে প্রথম মাস। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ছিল শুধু ব্যতিক্রম। এ খাতে নেতিবাচক ধারা সামাল দিয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ০.৬৪ শতাংশ। এ খাতে ৯ কোটি ডলারের বেশি আয় হয়েছে।
এ সময়ে কৃষিপণ্য থেকে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৮১ লাখ ডলার। ওষুধ রপ্তানিতে আয় হয়েছে এক কোটি ৮৩ লাখ ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েছে ১৮.৯২ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক কোটি ৫৪ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৮৮ শতাংশ। প্লাস্টিক রপ্তানিতে আয় হয়েছে এক কোটি ডলারের বেশি। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েছে ৬.৯৮ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক কোটি ৫৪ লাখ ডলার।
সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দিয়ে শেষ হলেও নতুন অর্থবছরের শুরুতেই ৪১ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দিয়ে যাত্রা শুরু হলো। এ সময়ে আয় হয়েছে প্রায় ছয় কোটি আট লাখ ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ কোটি ১৭ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) মোট রপ্তানি আয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের। সদ্যোবিদায়ী অর্থবছরে আয় হয় তিন হাজার ৮৭৫ কোটি ডলার।