Home বাংলা নিউজ পোশাককর্মীর সুরক্ষায় অ্যাকর্ডের নতুন চুক্তি নিয়ে ধোঁয়াশা

পোশাককর্মীর সুরক্ষায় অ্যাকর্ডের নতুন চুক্তি নিয়ে ধোঁয়াশা

দেশের পোশাকখাতে নিয়োজিত কর্মীদের অধিক সুরক্ষা দিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো। এইচঅ্যান্ডএম, জারার মতো প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ক চুক্তিতে এরই মধ্যে সই করেছে। তবে বায়ারদের পরিদর্শন জোট অ্যাকর্ড ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক ইউনিয়ন ইন্ডাস্ট্রিয়ালের এ চুক্তিতে নেই ইউরোপীয় প্রাইমার, নেক্সট, জেডি স্পোর্টসের মতো নামি ব্র্যান্ডগুলো। অথচ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর দেশে সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে প্রাইমার।

পোশাক কারখানা মালিকরা বলছেন, অ্যাকর্ড ইন্টারন্যাশনাল-ইন্ডাস্ট্রিয়াল যে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে কোনো ধারণাও নেই। তাদের চুক্তি মানে সরকার ও আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। তাছাড়া আরএসসি ছাড়া নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে কাজ করার অনুমোদন কারো নেই।

এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে সরকার ও কারখানা মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ডের পর দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয় দেশগুলোর মধ্যে। তাদের উদ্বেগ আরও বাড়ে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর। এর পরিপ্রেক্ষিত কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ। যার সংক্ষেপ নাম অ্যাকর্ড।

jagonews24

২০১৯ সালে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় বায়ারদের জোট অ্যাকর্ড তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ২০১৩ রানা প্লাজা ধসের পর দীর্ঘ পাঁচবছর বাংলাদেশের কারখানাগুলোর ভবন নিরাপত্তা, অগ্নিনিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড। সংস্থাটির কার্যক্রম নিয়ে বরাবরই সমালোচনায় পড়তে হয় দেশের তৈরি পোশাক মালিকদের। একই বছর ২০১৯ সালে আদালতের নির্দশনায় অ্যাকর্ড চলে গেলে কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ, শ্রম নিরাপত্তাসহ অন্য বিষয় দেখভালের জন্য ‘আরএমজি সাসটেইনেবলিটি কাউন্সিল’ বা আরএসসি কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নেয়।

অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটির বাংলাদেশ অফিসের যাবতীয় কাজ আরএসসি করছে। আরএসসি হলো একটি স্থায়ী জাতীয় সংগঠন। এর সদস্যদের মধ্যে রয়েছে পোশাক প্রস্তুতকারক বা মালিকপক্ষ, পোশাকখাতের আন্তর্জাতিক ক্রেতা বা বায়ার ও পোশাক শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিক প্রতিনিধি।

গত ২৫ আগস্ট নেদারল্যান্ডেসের আমস্টারডামে অ্যাকর্ড ইন্টারন্যাশনাল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী দুবছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর কারখানার স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়টি পরিদর্শন করবে অ্যাকর্ড ইন্টারন্যাশনাল। তবে অ্যাকর্ড ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক ইউনিয়ন ইন্ডাস্ট্রিয়ালের মধ্যে চুক্তি নিয়ে দ্বিধা-বিভক্ত ব্র্যান্ডগুলো। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী গণমাধ্যম দি গার্ডিয়ানের মতে, নতুন চুক্তিতে মার্ক স্পেনসে, এইচএমএস, জারাসহ ৮০টি ব্র্যান্ড সই করলেও ইউরোপীয় ব্র্যান্ড প্রাইমার, নেক্সট, জেডি স্পোর্টস এখনো সই করেনি।

দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা চুক্তির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা। পোশাক মালিকরা বলছেন, আরএসসি ছাড়া পোশাকশিল্পে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে কাজ করার অনুমোদন কোনো সংগঠনের নেই। আগের স্টিচিং বাংলাদেশ অ্যাকর্ড ফাউন্ডেশন ও প্রস্তাবিত ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফর হেলথ অ্যান্ড সেফটি ইন দি টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি ফাউন্ডেশন নামে দুটি সংস্থার সঙ্গে আরএসসির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সংস্থা দু’টি বাংলাদেশ সরকাররের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে কোনো কাজ করতে পারবে না।

jagonews24

ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, অ্যাকর্ডের শ্রমিকদের মধ্যে প্রাইমার, নেক্সট, জেডি স্পোটর্স এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি। তারা নতুন এ চুক্তি পর্যালোচনা করছে। প্রাইমার ও নেক্সট বাংলাদেশ থেকে সোর্সিং করা ব্র্যান্ডের মধ্যে অন্যতম। প্রতিবছর প্রাইমার ও নেক্সট বাংলাদেশের কারখানা থেকে প্রচুর পরিমাণ তৈরি পোশাক আমদানি করে।

গত ২৭ আগস্ট বিখ্যাত ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ভোগ-এর এক প্রতিবেদনে মতে, বাংলাদেশের পোশাকখাতে নিয়োজিত কর্মীদের অধিক সুরক্ষা দিতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো। তাদের নতুন চুক্তিতে শুধু পোশাক কারখানার অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয়, থাকছে কর্মীদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তার পাশাপাশি জীবিকা নিশ্চিতের শর্তও।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, স্টেকহোল্ডারদের সমান প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আরএসসি গঠিত হয়েছে, যা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম। আগের অ্যাকর্ড ২০১৩ এর প্রটোকলগুলো আরএসসিতে অন্তর্ভুক্ত আছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে আরএসসি তার যোগ্যতা ও কার্যকারিতার প্রমাণ রেখেছে। আরএসসি বোর্ড শুধু তার স্টেকহোল্ডারদের কাছেই জবাবদিহি করতে বাধ্য। আরএসসি ছাড়া নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে কাজ করার অনুমোদন কারো নেই।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জাগো নিউজকে বলেন, দেশের সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদনক্রমে সরকারের অনুমতি নিয়ে একটি স্বাধীন, অলাভজনক সংস্থা হিসেবে অ্যাকর্ডের কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করার জন্য আরএসসি গঠিত হয়েছিল। আরএসসি ২০২০ সালের পহেলা জুন থেকে পোশাক কারখানার নিরাপত্তা সামগ্রিকভাবে পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব নেয়। একটি অভিন্ন কোড অব কন্ডাক্ট প্রণয়নের মাধ্যমে সাধারণ নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পোশাক কারখানাগুলোর জন্য একটি টেকসই পরিবেশ সৃষ্টি করা, নিরাপত্তা কার্যক্রমগুলো অব্যাহত রাখার জন্য কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন নিশ্চিত করাই আরএসসির উদ্দেশ্য। নিরাপত্তার বিষয়গুলোতে কারখানার কোনো ধরনের শিথিলতা অথবা এ বিষয়ে কারখানাকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here