Home বাংলা নিউজ টেক্সটাইল খাতে গ্যাস সংকট: উত্তরণের উপায় খোঁজা জরুরি

টেক্সটাইল খাতে গ্যাস সংকট: উত্তরণের উপায় খোঁজা জরুরি

দেশের টেক্সটাইল শিল্প খাতে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করার বিষয়টি গভীর উদ্বেগজনক। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সংবাদ সম্মেলন করেছে এবং সেখানে তারা গ্যাস সংকটের যে ভয়াবহ চিত্র উপস্থাপন করেছে, তা থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজা জরুরি বলে মনে করি আমরা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে দিনে ১৩ ঘণ্টার বেশি গ্যাসের চাপ না থাকায় মেশিনের উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৩০ শতাংশ ব্যবহার করা যাচ্ছে। এর ফলে একদিকে দামি মেশিনপত্র নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে, অন্যদিকে কোনো কাজকর্ম ছাড়াই শ্রমিকদের বেতন গুনতে হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়।

গ্যাস হলো টেক্সটাইল শিল্প তথা স্পিনিং, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিলের মূল জ্বালানি। কাজেই গ্যাস সংকট অব্যাহত থাকলে এ শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসবে এবং এর ফলে রপ্তানি খাত অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে, যা অনভিপ্রেত। এমনিতেই করোনার কারণে দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ ছিল। বন্ধ থাকাকলীন গ্যাসের বিল বা জরিমানাও মওকুফ করা হয়নি। এরপরও মালিকরা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। কর্তৃপক্ষ বারবার অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ দিতে পারছে না। আর এর কারণ হিসাবে পুরোনো সেই অজুহাত ‘পাইপলাইন সংস্কারের কাজ চলছে’ বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করছে, যা কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না।

দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। এখনও গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। এ কারণে অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করেও উৎপাদনে আসতে পারছেন না। নতুন বিনিয়োগেও আগ্রহী হচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। অভিযোগ রয়েছে, দেশে পর্যাপ্ত গ্যাস মজুত থাকলেও তা উত্তোলনে নেওয়া হচ্ছে না কার্যকর উদ্যোগ।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি দেশের গ্যাস খাত নিয়ে ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এর মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা গ্যাসের নিয়ন্ত্রণ দেশি-বিদেশি চক্রের হাতে তুলে দিতে চায়। বস্তুত দেশের জ্বালানি খাত নিয়ে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের শিল্প খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশ্বের অনেক দেশেই বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য উদ্যোক্তাদের নানারকম সুযোগ-সুবিধা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হলেও আমাদের দেশে এর উল্টো চিত্রই পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমানে রপ্তানিতে টেক্সটাইল শিল্পের অবদান ২৩ বিলিয়ন ডলার। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গ্যাসের চাপ না থাকলে সঙ্গত কারণেই এ শিল্প দুরবস্থার মধ্যে পড়বে এবং এর ফলে পুরো রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দুঃখজনক হলো, এলএনজির মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে গত ৫ বছরে গ্যাসের দাম ২০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। শিল্প মালিকরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের আশায় সেটা মেনেও নিয়েছেন। অথচ বাস্তব ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ তো দূরের কথা; গ্যাসের চাপই থাকছে না। এ অবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান গ্যাস সংকট দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here