ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস মার্কিন সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অংশগ্রহণে শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। উক্ত বৈঠকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানা নিরাপত্তা এবং শ্রমিকদের কল্যাণের লক্ষ্যে চলমান প্রচেষ্টার পাশাপাশি কিভাবে আরো মার্কিন আমদানিকারকগণকে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক আমদানিতে উৎসাহিত করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে সফররত বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসানের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
‘রানা প্লাজা পরবর্তী সাত বছর: কে কি করছে?’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্রিস্টোফার উইলসন, টেক্সটাইল বিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি উইলিয়াম জ্যাকসন, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার পরিচালক জেনিফার লারসন, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবারের পরিচালক মরিন হ্যাগার্ড-সহ যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও ম্যাকলার্টি অ্যাসোসিয়েটসের প্রতিনিধি টেরেসিতা শ্যাফার, বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট মিরান আলী, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রতিনিধি, আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) এর প্রতিনিধি এবং ওয়ালমার্ট ও টার্গেট-এর প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বাংলাদেশ দূতাবাসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণও এতে অংশ নেন।
স্বাগত বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং এর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তৈরি পোশাক শিল্পের অপরিসীম অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শ্রমিকদের কল্যাণ ও শিল্পকে রক্ষা করার জন্য বিশেষত রানা প্লাজার ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান তার বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকার এবং বিজিএমইএ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের কল্যাণে গঠিত আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা এবং কর্মস্থলের নিরাপত্তা বজায় রাখতে গঠিত ট্রাইপাট্রাইট কন্সালটেটিভ কাউন্সিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে উদ্ভুত নতুন চ্যালেঞ্জ এবং বিজিএমইএ কিভাবে এই কঠিন সময়ে শ্রমিকদেরকে সহযোগিতা করেছে তার উল্লেখ করেন।
এছাড়াও তিনি ইন্সেনটিভ প্যাকেজের মাধ্যমে সরকারের উদার অবদানের কথা স্বীকার করেন। একটি সাবলীল ও টেকসই সাপ্লাই চেইন এবং সোর্সিংয়ের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে সভাপতি ফারুক হাসান তৈরিপোশাকশিল্প মালিকদের খরচ কমানোর নিমিত্ত কারখানার একাধিক নিরীক্ষা কমানোর জন্য মার্কিন ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি এবং তৈরিপোশাকের ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ বিবেচনায় বিজিএমইএ সভাপতি বাংলাদশে তৈরি পোশাকের উচ্চ ও ন্যায্য মূল্য প্রদানের জন্য মার্কিন ক্রেতাদেরকে অনুরোধ জানান। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের জন্য শুল্ক কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ইন্টারেক্টিভ সেশন চলাকালীন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্রিস্টোফার উইলসন দেশে এবং বিদেশে শ্রমিকদের কল্যাণে বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। ট্যারিফ ইস্যুকে মার্কিন কংগ্রেসের বিশেষ ক্ষমতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি শ্রম এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুই সরকারের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।