বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাক ভ্যালু চেইন বা মূল্য শৃঙ্খল কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি এই খাতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এটি উত্পাদন কাঠামোর পরিবর্তন, ভোক্তাদের চাহিদা, পণ্যের মিশ্রণ, বাজারের গতিশীলতা এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশের আসন্ন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ এই রপ্তানিমুখী খাতের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি, তৈরি পোশাক শিল্প এবং এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদল এই ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনের মুখোমুখি কীভাবে হবে সেটা এখন ভাবনার বিষয়।
এই প্রেক্ষাপটে সামনের বছরগুলোতে তৈরি পোশাক খাতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং ভোক্তা চাহিদা পুনরুদ্ধারে যে অসম প্রবণতা রয়েছে তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তাছাড়া, মহামারি-পূর্ব কাঠামোগত পরিবর্তনের সাথে মহামারি-প্ররোচিত চ্যালেঞ্জগুলো সংশ্লিষ্ট সবাইকে তৈরি পোশাক খাতের ওপর দৃষ্টিপাত করতে বাধ্য করছে।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ ‘বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক: ভবিষ্যৎ চিন্তা’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ গতিপথ এবং শ্রমিকদের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের আসন্ন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ এই খাতের জন্য কি কি পরিবর্তন আনবে সে বিষয়গুলোও এই সংলাপে আলোচিত হয়। সভায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, তৌফিকুল ইসলাম খান একটি সূচনা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
সভায় সমাপনী বক্তব্য দেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর পংকজ কুমার। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে এই বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং উন্নয়নকর্মী এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত ও মন্তব্য তুলে ধরেন।
এছাড়াও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা; এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
২০২১ সালের প্রথম অর্ধ-বছরে প্রায় ১৩৭৯ খানায় একটি সমীক্ষা জরিপ চালানো হয় এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে মূলত কোভিড মহামারির প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে পার্থক্য করার চেষ্টা করা হয়েছে। দেখা গেছে শ্রমিকদের দুই-তৃতীয়াংশ যদিও প্রথম ঢেউয়ের সময় মজুরি পাননি কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন প্রায় ৯৮ শতাংশ শ্রমিকই তাদের মজুরি পেয়েছেন।
যদিও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ২০২১ সালের ২০২১ মার্চে খানার আয়ের পরিমাণ প্রায় ১১ শতাংশ কম গেছে। সমীক্ষা করা পরিবারের প্রায় ৬৭ শতাংশ পরিবারকে দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন বিকল্প পন্থা হিসেবে ঋণ নিতে হয়েছিল এবং সেটি প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় বেশি। এই ঋণ পরিশোধ করতে তাদের গড়পড়তা প্রায় দুই বছর সময় লাগতে পারে বলেও তারা জানিয়েছেন। কাজ হারানো শ্রমিকদের মাত্র ২৫ শতাংশ বলেছেন তারা শ্রমিক ইউনিয়নের ভূমিকায় খুশি আছেন।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সাবেক সভাপতি এ মতিন চৌধুরী বলেন, ‘আগামী কয়েক বছরে পোশাক রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার একটি বড় সুযোগ আছে।’
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি এবং মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কেন্দ্র করে আলোচনা করেন। তিনি বলেন শ্রমিকদের আসন্ন পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে এবং নতুন ধরনের শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘মহামারির ফলে শ্রমিকরা নানা ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্য পড়েছে। যে কারণে রাষ্ট্র, গার্মেন্টস শ্রমিক, উদ্যোক্তা, গবেষক এবং নাগরিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে নেতৃত্ব দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিন্ত করতে হবে।’
সিপিডি’র অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান আলোচনার একটি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস শিল্পে খুব বড় ধরনের পরিবর্তন আগামী সাত-আট বছরে হবে। আমরা যেহেতু পণ্য রপ্তানি করছি, উৎপাদনশীলতা কমে গেলে এর অভিঘাত শ্রমিকদের ওপরই বেশি পড়বে।’